আলুর বন্ড নিয়ে জেলায় জেলায় কৃষকদের বিক্ষোভ অব্যাহত। বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিন জেলাগুলিতে আলুচাষিরা কোথাও আলু ফেলে কোথাও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাতেও সরকারের মনোভাবের কোনও পরিবর্তন হয়নি। প্রতিবাদে কৃষকসভা শনিবার সারা রাজ্যে অবরোধের ডাক দিয়েছে আলুর ন্যায্য দামের দাবিতে।
এদিন বন্ড সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের বেপরোয়া লাঠির আঘাত আর কাঁদানে গ্যাসের মুখে পড়তে হয় আলু চাষিদের। শুক্রবার এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে কোচবিহার ১নং ব্লকের দেওয়ানহাট সোনালী অ্যাগ্রো লিমিটেড হিমঘরের সামনে। জেলায় প্রায় ৩০হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে উৎপন্ন হয়েছে প্রায় ১২লক্ষ টন আলু। অথচ কোচবিহার জেলার হিমঘরগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না কৃষকরা। এদিন দেওয়ানহাট হিমঘরের সামনে আলুর বন্ড সংগ্রহ করতে হাজির হন কয়েক হাজার আলুচাষি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও বন্ড পাননি। বন্ড তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে পাইকারদের বিরুদ্ধে। এরপরই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় কৃষকদের। তাদের বিক্ষোভে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কোচবিহার-দিনহাটা রাজ্য সড়ক। এরপরই বিনা প্ররোচনায় ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ এবং ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। আহত হন বেশ কয়েকজন আলুচাষি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সারা ভারত কৃষকসভা কোচবিহার জেলা সম্পাদক তমসের আলি। তিনি বলেন, কৃষকদের পর্যাপ্ত বন্ড দিতে ব্যর্থ হচ্ছে রাজ্যের সরকার। শনিবার এই আলু চাষিদের জ্বলন্ত সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে কোচবিহার ১নং ব্লকের ঘুঘুমারী এবং কোচবিহার ২নং ব্লকের খাগড়াবাড়ি এলাকায় বিকাল ৩টে থেকে ৪টায় এক ঘণ্টা পথ অবরোধে শামিল হবেন কৃষকরা।
মোহিতনগর এলাকার জলপাইগুড়ি কোল্ড স্টোরেজে আলুর বন্ডের কুপন দেওয়াকে কেন্দ্র করে চরম বিশৃঙ্খলা রাত থেকে কুপনের জন্য লাইন দিয়েছিল বহু মানুষ। সকালে কোল্ড স্টোরেজ খুলতেই বিশৃংঙ্খলার সৃষ্টি হয়। গেটের সামনে ধাক্কাধাক্কিতে আহত হন বহু মানুষ। দুজন বয়স্কা মহিলা সহ পাঁচ থেকে ছয় জন আলুচাষি গুরুতর অসুস্থ হয়ে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন, তাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সদর ব্লকের বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার স্টোর সহ বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে আলু চাষিদের অভিযোগ রাত থেকে লাইন দিয়ে কুপন পেয়েও দেখা যাচ্ছে সেই কুপনে কত প্যাকেট আলু রাখা যাবে তা উল্লেখ করা নেই বলে জানান, কৃষকনেতা তপন গাঙ্গুলি।
ক্ষোভ জানান কৃষক নেতা প্রাক্তন সাংসদ জিতেন দাসও। জানা গেছে, জলপাইগুড়ি, হুগলী জেলায় বৃহস্পতিবারও রাস্তায় আলু ফেলে অবরোধ করেন কৃষকরা। কৃষকসভার দাবি কুইন্টালে ১ হাজার টাকা করে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। এখন কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকার বেশি পাচ্ছেন না। শনিবার হুগলী জেলাজুড়ে পথ অবরোধ ও বিক্ষোভ হবে। ১৭ ব্লক এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় আলুচাষিরা এই আন্দোলনে অংশ নেবেন বলে জানান, জেলা কৃষকসভার সম্পাদক স্নেহাশিস রায়।
নির্ধারিত সহায়ক মূল্যে আলু বিক্রির বিষয়টি বোঝানোর জন্য মাঠে মাঠে গিয়ে বোঝানোর কাজ করছেন বিডিও থেকে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা। শুক্রবার চন্দ্রকোনার সীতানগর এলাকার মাঠে যান বিডিও অমিত ঘোষ, ব্লকের সহ কৃষি আধিকারিক শ্যামদুলাল মাসান্ত। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চরম ক্ষোভের মুখে পড়েন বিডিও ও কৃষি আধিকারিক। তাদের সাথে বচসায় জড়িয়ে পড়েন কৃষকরা। তাদের মাঠ থেকে চলে যাওয়ার কথাও বলেন ক্ষুব্ধ আলুচাষিরা। কিছু না বলেই মাঠ ছাড়েন বিডিও সহ সঙ্গীরা।
Comments :0