‘‘ফাঁকা কথার কারসাজিতে কারোর মন ভোলাতে দেব না, বারুদ আমরা সংগ্রহ করে রেখেছি খালি আগুন লাগানোর অপেক্ষায় আছি। নিজেদেরকে মারতে রাজি আছি’’ হুঙ্কার চাকরিহারা শিক্ষকদের। রাজ্য সরকারের দুর্নীতির জন্য চাকরি খোয়াতে হলো তাদের। নতুন করে পরীক্ষা তাঁরা দেবেন না। যা করে হোক তাদের চাকরিতে বহাল রাখতেই হবে, এই দাবি নিয়ে সোমবার নেতাজী ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন চাকরিহারা যোগ্য প্রার্থীরা। সেখানে একজনও অযোগ্য প্রার্থীকে দেখতে পেলে ঝামেলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ।
রবিবার শহীদ মিনার থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। তাদের অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি শুনানি চলাকালীন নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কাউকে বলতে দেননি। যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬ নেতা মেহবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরাও পৃথকীকরণ চেয়েছিলাম। দু’জন ব্যক্তি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে শুনানিতে আওয়াজ তুলেছিলেন। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যও বলেছিলেন নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক নয়। প্রধান বিচারপতি তাঁদের থামিয়ে বলেন নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক আছে। সেই নিয়ে কোনও আলোচনাই তিনি করতে দিলেন না। আর শেষে রায় দিয়ে দিলেন যা নিয়ে আলোচনাই হলো না। তাই এই রায় আমরা প্রত্যাখ্যান করছি’’। ‘চরম অসঙ্গতিপূর্ণ’ এই রায়ের রিভিউতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার রাস্তা বের করে না দিলে আগামী বিধানসভা নির্বাচন তাঁদের লাশের ওপর দিয়ে করতে হবে। তা নাহলে যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকারা গণআত্মহত্যা করবেন, দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এমনকি মানবাধিকার কমিশনের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানাবেন বলেও হঁশিয়ারি দিয়েছে অধিকার মঞ্চ।
বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলে বলেন, আমাদের সময় তৎকালীন এসএসসি চেয়ারম্যন সুবিরেশ ভট্টাচার্যকে ছেড়ে দেওয়া হলো জামিনে, তার ঠিক উলটোদিকে আমাদের বিরুদ্ধে যখন কোনও অভিযোগ নেই আমাদের এত বড় শাস্তি দেওয়া হলো! ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ডেকেছেন, আমরা যাব। কারণ রায়ে আমার যে মৃত্যু প্রতিষ্ঠা হলো তার জন্য রাজ্য সরকার কম দায়ী নয়! আমাদের এভাবে খুন করার ষড়যন্ত্র তৈরী হয়েছিল রাজ্য সরকারের করা দুর্নীতির সময়। তাই আমদের কিভাবে তিনি বাঁচাবেন তা মুখ্যমন্ত্রী বুঝুন, আমাদের দেখার দরকার নেই।’’ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন মেহেবুব মণ্ডল।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ সিবিআই মামলার তদন্ত করেছিল, চারটে চার্জশিটে কারা দুর্নীতিবাজ, কারা টাকা দিয়ে চাকরি কিনেছে তাদের ঠিকানা সব পাই টু পাই লেখা আছে। সুপ্রিম কোর্ট সেই নথি জানলো কিন্তু মানলো না। বিচারপতি কখনো বলছেন ‘সম্ভাব্য’ কখনো বলছেন ‘মনে হয়’। এমন ‘সম্ভাব্য’ ‘মনে হয়’ এর উপর কি রায় দেওয়া যায়?
সুপ্রিম কোর্টে প্রথম যে বিচারপতি মামলা শুনেছিলেন তিনি হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন কারণ তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল এই প্যানেলের বড় অংশের নিয়োগ অবৈধ নয়। বর্তমান রায়েও প্যানেলকে স্পষ্ট দু’টো অংশে ভাগ করা হয়েছে। তারপরও তাদের চাকরিচ্যুত হতে হলো কেন? সুপ্রিমকোর্ট যোগ্য অযোগ্য বাছাই করতে না পারলে তার দায় তাদের ওপর কেন দেওয়া হলো? অধিকার মঞ্চের সদস্য চিন্ময় মণ্ডলের বক্তব্য, সব রাজনৈতিক দল যখন বলছে যোগ্যদের জন্য সহমর্মিতা আছে তাহলে সকলে একসাথে মিলে তাদের চাকরিতে বহাল রাখার বন্দোবস্ত করুক। শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপায় হিসেবে রিভিউ এবং কিউরেটিভএর প্রসঙ্গ তুলেছেন। বলেন, পুনরায় তদন্ত করা হোক, বের করা হোক সমস্ত নথি এবং প্রত্যেকের ডিগ্রিকে যাচাই করা হোক। তাতে যদি অবৈধতা ধরা পড়ে তখন তাঁরা সেই রায় মানতে রাজি। ওএমআর যদি না-ই থাকে তাহলে তাদের অবৈধতা কীভাবে প্রমাণ হলো এবং কী করে বিচারপতি তাদের অবৈধতা প্রমাণ না করেই তাদের চাকরি বাতিল করে দিলেন, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংগঠনের নেতৃত্বরা।
অধিকার মঞ্চের এক সদস্যের দাবি, তাদের চাকরি বাঁচবে, তার জন্য রাজ্য সরকাকে একটা কাজ করতে হবে। তা হলো, মাটির তলায় যেখানে সরকার মিরর ইমেজ লুকিয়ে রেখেছে সেখান থেকে মাটি খুঁড়ে তা বের করে সুপ্রিম কোর্টে প্রস্তুত করুক। ২০১৪ সালের আপার প্রাইমারির মিরর ইমেজ থাকলে কোন যাদুবলে ২০১৬ সালের মিরর ইমেজ থাকে না সার্ভারে?
আর এক সদস্য ধিতীশ মণ্ডল বলেন, ‘‘শিক্ষা দপ্তরের একজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে তিনি বলেছেন ভাবা হবে। কিন্তু আবারও বলছি কোনো অল্প টাকার ,কিছু ললিপপ দিয়ে যে প্রতিশ্রুতি আপনারা দিতে চাইছেন তা আমরা কখনোই মানছি না।’’ বিচাপতি কেন সিএফএসএল রিপোর্ট করার অনুমতি দেননি তা নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি। তাঁর মন্তব্য ‘‘এই বিচারপতি কোনও না কোনো ভালো অফার পেয়েছেন, যার জন্য এমন রায় দিতে বাধ্য হয়েছেন’’।
SSC Job Losers
কোনও পরীক্ষা দেব না, ফাঁকা কথায় ভুলব না, বলছেন চাকরিহারারা

×
Comments :0