গল্প / মুক্তধারা , বর্ষ ৩
বাঁচতে দাও
----------------------------
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
সরু পিচে রাস্তাটা মিশে গিয়েছে বড়ো রাস্তায়। রাস্তার মুখে একদল লোকের চাপা কথাবার্তায় কেমন সতর্ক হয়ে যায় শ্যামল। সরু রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়েছে সেখানেই শ্যামলের বাড়ি। হঠাৎ এমন জটলায় কিছুটা ভ্রু কুঁচকে যায় তার।সংবাদপত্র অফিসের কাজ সেরে প্রতিদিনই রাত করে ফেলে সে।এমন জটলায় তো চোখে পড়ে না! ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যায় শ্যামল। রাস্তার বাঁক থেকে বাড়ির দিকে মুখ ফেরাতেই অজয় দৌড়ে এসে শ্যামলের হাতদুটো ধরে বলে-'ভাইটা আর নেই রে শ্যামল'-ডুকরে কেঁদে ওঠে অজয়।
-কি হয়েছে অজয়?
-ভাইটা কাজে গেছিল ভিন্ রাজ্যে, গয়নার কাজ।সে আর নেই রে।তার জীবন চলে গেছে।'
অজয় শ্যামলদের ঠিক পাশের বাড়ির লোক। প্রতিবেশী। সামলাতে পারে না সে।বিহ্বল হয়ে পড়ে।
-'সে কি, কিভাবে ' আধখানা কথা বলতে বলতে আটকে যায়।
অজয় কাঁদে আর বলে-'গেল বছর বিয়ে দিয়েছি ভায়ের , এখানে কিছুই কাজ তো পায় নি, গয়নার কাজে গেছিল, কিন্তু সহ্য হল না।জীবনটা নিয়ে নিল'
শ্যামল বিস্ময়ে চুপ করে যায়, ভাবে এমন কতো মানুষ আজ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে পেটের দায়ে। কেউ ফিরে আসছে,কেউ ফিরতে পারছে না।জীবন দিয়ে শোধ করছে জীবনের ঋণ। গ্ৰামের মাটিতে কাজ নেই, শহরে কাজ নেই। পরিবারটাকে বাঁচানোর তাগিদে থেকে মাইলের পর মাইল পেরিয়ে চলেছে ওরা। কিন্তু কি পাচ্ছে? পরিবার কি পাচ্ছে এই পরিযায়ীদের কাছ থেকে, শ্যামল ভাবতে থাকে , একটা ঘোরের মধ্যে সে দেখতে থাকে বিপন্ন মানুষের মিছিল।
Comments :0