সঙ্কোচনের বাজেট। দেশের অর্থনীতির এখন দরকার সম্প্রসারণের বাজেট। কর্মসংস্থানের হার সবচেয়ে বেশি, খাদ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। বাড়ছে দারিদ্র। অর্থনীতি না বাড়লে এই সমস্যা কিছুতেই মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় ভিডিও বার্তায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
তিনি বলেন, এই বাজেট দারিদ্র, বৈষম্য, কর্মসংস্থানের সঙ্কট বা মূল্যবৃদ্ধি- কোনটিই মোকাবিলার পদক্ষেপ নিতে পারল না। এই বাজেটে বাজারে চাহিদা বাড়বে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে না। বেসরকারি বিনিয়োগ কমবে।
মানুষের মুখ্য সঙ্কটগুলি নিরসনে ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রতিবাদ জানাবে সিপিআই(এম)। পার্টির সব স্তরে বাজেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করার আহ্বান জানান ইয়েচুরি।
তিনি বলেন, সেই সঙ্গেই আবার অর্থনীতির সম্প্রসারণ না হলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়বে না। চাহিদা না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না। বাজার বাড়বে না। বাজার না বাড়লে কেনার লোক কমে যাবে তাই বিনিয়োগও আসবে না। এই বাজেটে বাস্তবে (মূল্যবৃদ্ধির নিরিখে) সরকার আগেরবারের তুলনায় কম খরচ করার লক্ষ্য নিয়েছে।
ইয়েচুরি বলেন, সরকারি আদায় ১৪.৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হলো আগেরবার। অথচ খরচ বেড়েছে মাত্র ৫.৯৪ শতাংশ। আয় এবং ব্যয়ের বৃদ্ধির হারে এই বড় ফারাক আসলে ঘাটতি কমানোর জন্য। সরকারি হিসেবের খাতায় ঘাটতি কমানোর এই চেষ্টা আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের খুশি করতে।
তিনি বলেন, টাকার চলতি মূল্যে বাজেটে বৃদ্ধির হার ১০.৫ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে বাজেটে। প্রকৃত বৃদ্ধির হার ঠিক করতে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি বাদে অন্য জিনিসের দামের হার বিচার করা হয়েছে। খাদ্য ও জ্বালানির দামের বৃদ্ধি হিসেবে রাখলে প্রকৃতি বৃদ্ধির হার আরও কম হতো।
উল্লেখ্য, খাদ্য ও জ্বালানি বাদে অন্য জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি বা ‘কোর ইনফ্লেশন’ ৩.১ শতাংশ। প্রকৃত বৃদ্ধি হিসেব করার সময় এই অঙ্ককে ব্যবহার করেছে সরকার। যেখানে খাদ্যে মূল্যবৃদ্দির হার ৯.১ শতাংশের ওপরে থেকেছে।
ইয়েচুরির ক্ষোভ, তথ্যের কারচুপি রয়েছে। একশো দিনের কাজের বরাদ্দ যা হয়েছে তার অর্ধেক চলতি অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসেই হয়ে গিয়েছে। বাকি আট মাস কাজের জন্য বরাদ্দ অর্ধেক অংশ। বোঝাই যাচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কতটা কম।
তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সংযুক্ত উদ্যোগে সহায়তা প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন অর্থ মন্ত্রী। কিন্তু যিনি কাজ পেলেন তিনি তিন কিস্তিতে মোট ৫ হাজার টাকা পাবেন। আর কাজ দেওয়ার জন্য সংগঠিত ক্ষেত্রের নিয়োগকারীকে প্রত্যেক কর্মী পিছু বছরে ৭২ হাজার টাকার সুবিধা দেওয়া হবে। বিপদ হলো কর্মরতদের ফের কাজে নেওয়া হয়েছে দেখিয়ে মালিকপক্ষ এই বিপুল অঙ্কের সুবিধা হাতিয়ে নিতে পারবে। এভাবেই জনতার অর্থ কর্পোরেটদের দেওয়া হচ্ছে। তাদের মুনাফা সর্বোচ্চ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ইয়েচুরি বলেন, এই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে যখন দেশে বৈষম্যের হার সবচেয়ে বেশি। বড় কর্পোরেটরা বিপুল মুনাফা ঘরে তুলছে। আজকের সময়েই বিপুল বিত্তবানদের জন্য আলাদা কর চালু করা দরকার ছিল। তা থেকে আয় করে সরকার জনগণের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ করতে পারত। তা থেকে কাজ তৈরি হতে পারত। অথচ তা করা হলো না। কারণ এই সরকার বৃহৎ কর্পোরেটদের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকতে মরিয়া।
Comments :0