গুপ্তিপাড়ার পর এবার সেই বলাগড়েরই বাকুলিয়া ধোবাপাড়ার আশাকর্মীকে হুমকি, ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠল। অবসাদে ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন আশাকর্মীর, এমনই জানিয়েছে পরিবার। আশাকর্মী নমিতা দাস জানিয়েছেন, আবাস প্লাসের সমীক্ষা করেছেন তিনি। গত সোমবার বিকালে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় গ্রামের একাংশ। আবাস প্লাসের তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার জন্য এই আশাকর্মীকেই দায়ী করেন এই অংশ। এর আগে, ১৫ ডিসেম্বর, বলাগড়ে গুপ্তিপাড়ায় আশাকর্মী সরস্বতী দাসের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল।
আবাস প্লাস যোজনায় বিপুল কারচুপির অভিযোগ রাজ্যজুড়ে। চাপে পড়ে সমীক্ষায় নেমেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। কিন্তু সমীক্ষায় নামানো হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মীদের। তাঁরাই হুমকির মুখে পড়ছেন। এর আগে স্বরূপনগরে হুমকির মুখে আত্মঘাতী হন রেবা বিশ্বাস। বামপন্থীরা বলছেন, দুর্নীতি ঢাকতে আশাকর্মী-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ঘাড়ে বন্দুক রাখছে রাজ্য। বিডিও স্তরের আধিকারিকদের দিয়ে সমীক্ষা হওয়া উচিত। না হলে সমীক্ষার মানে থাকে না। এদিন নমিতা দাসের অভিযোগ সেই বাস্তবতাই স্পষ্ট করেছে।
নমিতা দাস জানান, পঞ্চায়েত প্রধানকে এই গ্রামবাসীরা নাম বাদ পড়ার কারণ জানাতে বলে। প্রধান বলেন যে আশাকর্মী নামের তালিকা দিয়েছেন। ফলে তাঁর ঘাড়েই দায় এসে পড়েছে।
নমিতা দাস বলেন, কারো নাম তালিকায় রাখা বা বাদ দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। আশাকর্মীরা শুধু সমীক্ষা করেছেন। যে পনেরোটি বিষয় দেওয়া হয়েছে তা মিলিয়ে দেখে কেবল রিপোর্ট দিয়েছেন। কিন্তু বাড়িতে যারা চড়াও হয়েছিল তারা নমিতা দাসকেই দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। কেউ কেউ বলেছে, গুপ্তিপাড়ার মতন আগুন লাগিয়ে দিলে মজা বুঝবে। এই গ্রাম থেকে গ্রাম ছাড়া করে দেবো। ঘটনার পর পুলিশ বিডিও গিয়ে আশা কর্মীকে আশ্বস্ত করে আসেন।
তারপরেও হুমকি আসতে থাকে বলে অভিযোগ। ঘটনায় মানসিক ভাবে ভেঙে পেড়ে বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে থাকা একাধিক ওষুধ খেয়ে নেন তিনি। আশাকর্মীর বাবা দিলীপ খামারু বলেন, মঙ্গলবার বাড়িতে অনেক লোক এসেছিল। আবাস নিয়ে কি হয়েছে সে সব বলছিল। পুলিশও এসেছিল। বিডিও অফিসের লোক এসে তাদের চলে যেতে বলে। আজ মেয়ে হঠাৎ বমি করতে থাকে।আমি ডাক্তার ডেকে আনি। জিজ্ঞেস করায় বলে অনেক গুলো বড়ি খেয়ে নিয়েছে। আবাসের কাজ করার পরেই আতঙ্ক হয়ে গেছে।
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেতা জয়ন্ত বাগ অভিযোগ করেন, নিচু তলার যে সমস্ত কর্মীরা আবাস প্লাসের সমীক্ষার কাজ করছেন তাদেরই হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। শাসক দল তাদের ঘনিষ্ঠ লোকেদের নাম তালিকায় তুলেছিল। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে অনেকেরই পাকা বাড়ি আছে, তবু আবাস তালিকায় নাম। সেই নাম বাদ যেতেই আশা কর্মীদের উপর এই ধরনের হুমকি ভয় দেখানো হচ্ছে। আমরা চাই সঠিক সমীক্ষা হোক। আশা কর্মীদের উপর এমন ভাবে চাপ দেওয়ার ফলেই এই ঘটনা ঘটছে।
বাকুলিয়া ধোবা পাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান মধুমিতা সমাদ্দার এবিষয়ে কিছু বলতে চাননি। উপপ্রধান নিমাই চন্দ্র সাঁধুখা বলেন, আমি বা আমার প্রধান কখনই বলিনি আশা কর্মীর বাড়িতে যাও। আপনারা জানেন মুখ্য সচিবের নির্দেশে আবাস প্লাসের সমীক্ষা করছেন আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, পুলিশ। তিনটে ধাপে এই সমীক্ষা হয়েছে। তালিকার সংশোধন যা কিছু বিডিও অফিস থেকে সরকারিভাবে হচ্ছে।
যদিও এলাকার মানুষ অভিযোগ করছেন দলের লোক দেখে পঞ্চায়েত ঘর দিচ্ছে। গ্রামের বহু মানুষের নাম বাদ পড়ছে। সিআইটিইউ হুগলী জেলা সম্পাদক তীর্থঙ্কর রায় বললেন, তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত গুলো দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আর এখন তারা আশাকর্মীদের দিয়ে এই দুর্নীতি ঢাকতে চাইছে। এই কর্মীদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ভালো। এই চাপ সহ্য না করতে পেরে স্বরুপ নগরে একজন আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে বলাগড়ে এই আশা কর্মীর বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। তার পর এই ঘটনা। প্রশাসনের উচিত পঞ্চায়েতের প্রধান সহ যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
তিনি জানান, জেলা জুেড়ে সিআইটিইউ প্রতিটি ব্লকে, বিডিও অফিসের ভেতর লড়াই করবে। আশা কর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছে বাকুলিয়া এলাকার পার্টির নেতৃবৃন্দ। এদিন বাকুলিয়া ধোবাপাড়া পঞ্চায়েতে এই ঘটনার প্রতিবাদে ডেপুটেশন দেয় খেতমজুর সংগঠন।
Comments :0