UTSAVE ANUVABE / STORY / PALLABI ADAK / NUMBER / MUKTADHARA / 30 SEPTEMBER 2025 / 3rd YEAR

উৎসবে অনুভবে / গল্প / পল্লবী আদক / নম্বর / মুক্তধারা / ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

UTSAVE ANUVABE  STORY  PALLABI ADAK  NUMBER  MUKTADHARA  30 SEPTEMBER 2025  3rd YEAR

উৎসবে অনুভবে 

মুক্তধারা

গল্প

নম্বর

পল্লবী আদক 

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

প্রত্যেকের জীবনেই একটা লাকী নম্বর কাজ করে। যেই সংখ্যা বা নম্বর এর দ্বারা সেই ব্যক্তিটি তার জীবনে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি খুঁজে পান।এই যেমন বলা চলে সামনের পাড়ার সুমনের কথা।সুমনের বয়স ত্রিশের কাছে।সদ্য বিবাহিত বলা চলে।ওর কাছে লাকী নম্বর তিন।এর কারণ টা অব্যশই ও নিজে বলেছে। কলেজে পড়াকালীন তৃষা নামক এক মেয়ের সাথে আলাপ হয়।সুমনের ই সহপাঠী তৃষা।কাজেই বন্ধুত্ব হতে বেশি সময় লাগেনি।বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে প্রেম ও হয়েছিল ওদের।একসঙ্গে বেঞ্চে পাশাপাশি বসা, রেস্টুরেন্টে কাটলেট চাওমিন খাওয়া, ভেলপুরি খাওয়া কিছুই বাদ যায়নি।
এইভাবে তিন বছর কেটে যাওয়ার পর,তৃষার অন্যত্র বিবাহ ঠিক হলো। আর এদিকে সুমন বেচারা দুঃখে হতাশ হয়ে পড়ল। সবেমাত্র গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে এই বয়সে এত তাড়াতাড়ি ,কোনো কাজ না করেই ওর পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না।তাই কিছু করার ছিল না ওদের! যথা সময়ে তৃষার বিবাহ হয়ে গেলো।আর সুমন,তৃষার বিরহে নিজেকে কয়েকদিন ঘর বন্দী রাখলো।
এরপর ওর জীবনে এলো স্বপ্না।ওদের পাড়ার ই মেয়ে।সবে মাত্র কলেজে পা দিয়েছে  তখন স্বপ্না।আর সুমন তখন টিউশনি করিয়ে কিছু উপার্জন করত। স্বপ্না আর সুমনের সাবজেক্ট এক হওয়ায়,সুমন স্বপ্না কে বলেছিল " শোনো,যদি কখনও তোমার এই বিষয়ে বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়,দ্বিধা না করেই আমাকে বলবে,আমি তোমায় সাহায্য করব"।
স্বপ্না ও বেশ আনন্দিত হয়েছিল,ওর কথা শুনে,।কারণ,মনে মনে স্বপ্না নাকি সুমন কে পছন্দ করত।
এরপর শুরু হলো পড়াশোনার অজুহাতে দেখা করা,তারপর আসতে আসতে প্রেম।তবে খুব গোপনেই চলছিল এসব,এমনকি পাড়াতেও দেখা হলে কেউ সামনাসামনি কথা বলতনা।শুধু চোখে চোখে কথা হতো,আর আড়ালে হাঁসি থাকতো।
কিন্তু এই প্রেম টাও বেশি দুর এগোতে পারল না!ওদের একসঙ্গে দেখা হলে,চোখে চোখে কথা বলার এই ব্যাপারটা স্বপ্নার মা বুঝে গেলো।ব্যাস!!তারপর যা হওয়ার হলো।স্বপ্নার  পড়াশোনা বন্ধ করে তড়িঘড়ি ওর মা অন্যজয়গাতে স্বপ্নার বিয়ের ব্যবস্থা করল।আর সুমন এদিকে,আবারও পড়ল বিরহে।
তবে এর কিছুদিন পর বিরহ থেকে বেরিয়েই নতুন আশার আলো খুঁজে পেলো সুমন।তবে সে আশার আলো কোনো প্রেম না।একটা ভালো চাকরি পেলো সুমন। মাসের তিন তারিখে এই চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছিল ও,আর এই চাকরি টাই পাক্কা হয়ে গেলো ওর।
তারপর আবার প্রেমে পড়লো সুমন।তিন নম্বর প্রেম।রোহিনী , যে কিনা ওর সাথেই অফিসে কাজ করে।কিছুদিন পর এই প্রেম টা বিবাহে পরিণত হলো।
সুমনের লাকী নম্বর তিন হওয়ার কারণ দুটো।প্রথমত,ওর চাকরির ইন্টারভিউ তারিখ তিন, যেটাতে ও সফল হয়েছিল।আর দ্বিতীয়ত,ওর তিন নম্বর প্রেম।যেই প্রেম টার মাধ্যমেই আজ ও ওর জীবনসঙ্গী খুঁজে পেলো।এখন ও বেশ খুশি আছে। যেকোনো ভালো কাজ করার জন্য ও মাসের তিন তারিখ কেই বেছে নেয়।এমনকি জামা বা কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সময় প্রথম পছন্দ,দ্বিতীয় পছন্দ ছেড়ে তৃতীয় পছন্দই বেছে নেয়। ওর বিশ্বাস, এটা ওর লাকী নম্বর।তিন এর মধ্যে দিয়েই ওর জীবনের সফলতা লুকিয়ে আছে।
এবার আসা যাক ওই পাড়ার ই আর এক যুবক অয়নের কথা। অয়ন বলতে গেলে পাড়ার হিরো।পাড়ার কেনো, গ্রামের হিরো বলা চলে।স্কুলে থাকাকালীন অনেক মেয়ের প্রেমে পড়েছিল,কিন্তু কেউ সেইভাবে,ওকে পাত্তা দিতোনা।এরপর ছেলে গেলো কলেজে।নতুন বুলেট বাইকে চড়ে,চোখে চশমা পরে,চুলগুলো নতুন  স্টাইলে কাট করে, কলেজে গেলো ছেলে।উদ্দেশ্য টা অব্যশ ডিগ্রী লাভ করা না।ওর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ,একটা ভালো মেয়ে দেখে প্রেম করা।কিন্তু এবারেও হলো না!!ও যাদের পছন্দ করে প্রপোজ করতে চাইতো,তাদের সবারই প্রেমিক ছিল।তারপরেও,বহু খুঁজে একজনকে পেয়েছিল,গোলাপ নিয়ে,অনেক প্রস্তুতি নিয়ে, যেই না ছেলে প্রপোজ করল,অমনি সে মেয়ের হাতে একটা সজোরে থাপ্পড় খেলো।শুধু তাই নয়।মেয়েটির একটা বানীও শুনেছিল ও।"কলেজ টা পড়াশোনার জায়গা।আপনার মত রোজ এইভাবে বাইক নিয়ে,চুল উড়িয়ে,হাতে ব্রেসলেট পরে স্টাইল করার জায়গা না।আপনাকে তো কোনোদিনও ক্লাস করতে দেখিনি আজ পর্যন্ত!!এসব চিন্তা বাদ দিয়ে,মন দিয়ে পড়াশোনা করুন।পড়াশোনা করে ,ভালো চাকরি করলে,মেয়েরা আপনার কাছে আসবে,আপনাকে আর তাদের কাছে যেতে হবে না!!"
মেয়েটির মুখের এই দীর্ঘ বুলি শোনার পর, বোকার মত মাথা নেড়ে, মুখে হাসির রেখা টেনে কোনক্রমে কলেজ থেকে বেরোয় অয়ন। আর মনে মনে ভাবে  আর না!!কলেজে ও আর যাবে না।পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কাজে যাবে ও। আর!!!!আরএকটা নতুন উপায় বের করলো মেয়ে খোঁজার জন্য।রং নাম্বার উপায়।ব্যাস!যেই মাথায় এলো অমনি কাজ শুরু হয়ে গেলো।
" কতদিন ফোন করনি,কি ব্যাপার গো তোমার ,এখন কি করছ!!"রং নাম্বার এ ফোন করেই ঠিক এইভাবে কথা বলতো অয়ন।কিন্তু ,এদের মধ্যে কেউ হয় বৃদ্ধা,আবার কেউ যুবক,কেউ কেউ আবার মধ্য বয়স্ক ব্যক্তিও থাকে।
বারে বারে এমন চলায়,একসময় বিরক্ত হয়ে মনে মনে পণ করে,আর না!! এইবার লাস্ট চেষ্টা করবে,এইবার ও যদি,কাঙ্ক্ষিত জায়গায় ফোন না লাগে,তাহলে রং নম্বর মাধ্যম টা ছেড়ে দেবে।
কিন্তু সৌভাগ্যবশত,অয়নের ফোন টা এবার ঠিক জায়গায় লেগেছে।অপরপাশে এক সুমিষ্ট কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে।অয়ন কথাবার্তা চালালো।প্রথমে ভেবেছিল মেয়েটা হয়তো ওকে গালি দেবে,রং নম্বরে ফোন করে এত কথা বলার জন্য।কিন্তু না,এরকম কিছুই হলো না।মেয়েটাও বেশ ভালো ভাবে ওর সাথে কথা বলতে লাগলো।
এদিকে অয়ন ও কাজে লাগলো একটা ভালো জায়গায়।উপার্জন করতেও শিখল ছেলে।আর ওদিকে মেয়েটির সাথে দেখা করে,প্রেম করাও শুরু করে দিয়েছিলো।অবশেষে,অয়নের প্রেম করার স্বপ্ন টা স্বার্থক হলো।শুধু প্রেম না।সামনের মাসে ওই মেয়েটিকেই বিয়ে করে এনেছে বাড়িতে।নিজে উপার্জন করে,জাঁকজমক ভাবে লোক কে ভোজন করিয়ে,বিয়ে করেছে।
অয়ন তো এখনো সবাইকে বলে ওর কাছে লাকী নম্বর হলো জিরো।কারণ,ওর রং নম্বর প্রেমিকা তথা ওর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীয়ের ফোনের লাস্টের নম্বর যে জিরো।তাই ওর কাছে এটাই লাকী নম্বর।
ওই পাড়ার এক আশী বছরের বৃদ্ধা কাননদেবীর কাছে আবার,লাকী নম্বর হলো ছয়।উনি বাড়ির কোনো শুভ কাজ করলে,,মাসের ছয় তারিখেই করেন।এমনকি ওনার প্রত্যেকটা ছেলের বিবাহ ও দিয়েছেন কোনো না কোনো মাসের ছয় তারিখে।
ওনার বিয়ের জন্য ওনার বাবা মা যখন সম্বন্ধ দেখতে শুরু করলেন তখন ওনার বয়স কতই বা হবে,এই ও ষোলো সতেরো মত।প্রথম যে পরিবার দেখতে এসেছিল,তারা মিষ্টি খেয়ে,পণ চিবোতে চিবোতে বলেছিল ' মেয়ের উচ্চতা বাপু একটু খাটো।আমাদের ছেলে তো লম্বা চওড়া মানুষ।খাটো মেয়ে বাপু আমাদের চলবে না '।ব্যাস!!এই প্রথম সম্বন্ধ টা ওনার লাগলো না।
দ্বিতীয় সম্বন্ধ দেখতে এসে পাত্রপক্ষ মুখে মিষ্টি নিয়ে হেঁসে বলেছিল ,মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। ওনাদের এই কথা শুনে পাত্রীর বাড়ির লোক তো বেজায় খুশি।কিন্তু,তারপরই পাত্রপক্ষের বলা আর একটি কথায়,পাত্রপক্ষের সকলের হাসিমুখ চুপসে গেল।
পণ হিসেবে তারা নগদ পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছিল।তারসঙ্গে  সোনার গহনা,একটা শক্ত পোক্ত কাঠের তক্তপোশ ও চেয়েছিল।আবার তার সঙ্গে এও আবদার ছিল , পাত্রকে তারা যেনো একটা সাইকেল দেয়!!
এত চাহিদা শুনে,পাত্রীর বাবা বড্ড চিন্তায় পড়ল। ওনার যে আরও তিন মেয়ে আছে।অনুরোধ করলো,যাতে একটু লিস্ট টা ছোটো করে।কিন্তু,পাত্রপক্ষ তাদের কথায় অনড়।
তিন নম্বর সম্বন্ধে, পাত্রের কাকা বলেছিল ,মেয়ের বয়স বেশি।এইভাবে, আরও দুটো সম্বন্ধ হাতছাড়া হওয়ার পর,অবশেষে ছয় নম্বর সম্বন্ধ টাই পাকা হলো।পাত্রীকে দেখে এখানে সকলে খুশি।পণ হিসেবে বেশি কিছু চায়নি ।শুধু একটি সাইকেল আর হাতের ঘড়ি চেয়েছিল।
এই ছয় নম্বর পাত্রের সাথেই বিবাহ হলো কাননদেবীর।
ফ্রক পড়ে দুই দিকে ঝুঁটি বেঁধে কানন দেবী স্কুলে যেতেন।কিন্তু পড়াশোনা টা ওনার মাথায় ঢুকতো না। ওনার ভাষায় কোনক্রমে ছয় ক্লাস পর্যন্ত গিয়েছিলেন উনি।কাকতালীয়ভাবে,শেষ প্রতিটা পরীক্ষায় উনি ছয় নম্বর ই পেয়েছিলেন।আবার বিয়ের পর ছয় মাসের মাথাতেই উনি বুঝতে পারলেন,উনি গর্ভবতী। বর্তমানে,ওনার সন্তানের সংখ্যাও ছয়!!সুতরাং,ওনার জীবনের এই কাহিনী শুনে,ওনার সাথে সাথে ,সকলেই বলবেন,এই ছয় নম্বর ওনার জীবনের সাথে বেশ স্বাভাবিক ,সহজ ,সরল ভাবেই জড়িত।

Comments :0

Login to leave a comment