Uttarkanya Abhiyan

শাসকের চোখে চোখ রেখে হবে উত্তরকন্যা অভিযান বলছে যুবসমাজ

জেলা

দিনহাটার ভেটাগুড়িতে চলছে প্রচার। ছবি- অমিত কুমার দেব।

অমিত কুমার দেব- কোচবিহার
অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিপন্নতার বিস্তীর্ণ ক্যানভাসে বিপ্লবের বর্ণময় ছবি আঁকতে প্রস্তুত হচ্ছেন শিল্পহীন কোচবিহারের কর্মহীন যুবক যুবতীরা। চৈত্রের রৌদ্র প্রখরতার মাঝেই এক বুক আগুন নিয়ে আগামী ২৮মার্চ বেকারী বিরোধী দিবসে উত্তরকন্যা অভিযানে সামিল হতে যাচ্ছে কোচবিহারের যুব সমাজ।
প্রান্তিক জেলা কোচবিহারের একটি বড় অংশের যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিল্প তালুক গড়ে তুলেছিল বামফ্রন্ট সরকার। আর এই মুহূর্তে কোচবিহার জেলার শিল্প সম্ভাবনার ক্ষেত্রে কার্যত যৌথ ভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে রাজ্য সরকার ও তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম। এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি কোচবিহার জেলার শিল্প সম্ভাবনা। কার্যত ধুঁকছে কোচবিহারের চকচকা শিল্প বিকাশ কেন্দ্র।
স্থানীয় যুবক যুবতীদের দক্ষতা থাকলেও নিজের জেলায় তারা তাদের দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারছেন না। জেলায় নতুন শিল্প স্থাপন না হওয়ার কারণে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন রাজ্য, ভিন দেশে চলে যাচ্ছেন এই কোচবিহার জেলার শিক্ষিত যুবক যুবতীদের একটি বড় অংশ। এই কোচবিহারের এই একমাত্র শিল্প তালুকের পুনরুজ্জীবন এবং প্রস্তাবিত জুট পার্ক অবিলম্বে স্থাপনের দাবিতে এই উত্তরকন্যা অভিযান সফল করতে ইতিমধ্যেই প্রচারে সামিল হয়েছেন কোচবিহার শহরের অমল দাস, অঞ্জন করঞ্জাই, অভিষেক চৌধুরীরা। তাঁরা বলেন, যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা করা রাজ্যের বর্তমান সরকারের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী কোচবিহারের বাসিন্দা। আর তিনি উত্তরকন্যায় চেয়ার দখল করে বসে থাকলেও এই জেলার শিল্পায়নের প্রশ্নে রীতিমতো উদ্যোগহীন তিনি। তার চোখে চোখ রেখে জবাব চাইবেন তারা।
কোচবিহার খাগড়াবাড়ি এলাকার স্বরূপা সরকার, সিদ্দিক খান, সুশান্ত দে, আকাশজিৎ রায়, সৌরভ দত্ত, অরিজিৎ রায়ের মতো যুবক যুবতীরা বলেন, কোচবিহার জেলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নকে কার্যত খুন করেছেন এরাজ্যের বর্তমান শাসক। জেলার শিল্প সম্ভাবনাকে কেন ধুলিস্যাৎ করা হলো? এর উত্তর চাইতেই উত্তরকন্যা অভিযানে সামিল হচ্ছেন তারাও।
কোচবিহারের মানুষের দাবিকে অগ্রাহ্য করে জুট পার্কের জন্য প্রস্তাবিত জমিতে সাধারণ শিল্প গড়ে তোলার জন্য ২০১৭সালের নির্দেশ দেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। পরবর্তী সময়ে ২৪ জন শিল্পপতি প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা দিয়ে জমি নেন। ২০২০সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তাঁদের নির্মাণ শুরু করার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু তা হয়নি। বেশ কয়েকবার সেই সময়সীমা বৃদ্ধি করা হলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই হয়নি।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এই শিল্প বিকাশ কেন্দ্রে প্রায় ২৩একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল সরকার। ঘোষণা ছিল, জেলার সর্বাধিক উৎপাদিত ফসল পাট বিক্রি করতে পাটচাষীদের যাতে কোন সমস্যায় পড়তে না হয় এবং তাঁরা যাতে ন্যায্যমূল্যে এই পাট বিক্রি করতে পারেন এই উদ্দেশ্যে এবং এর পাশাপাশি এই পাট কে ঘিরে যাতে কোচবিহারের মত জেলায় শিল্প সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই অধিগৃহীত জমিতে জুট পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল বামপন্থী সরকার। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যের ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়ার পর এই শিল্প সম্ভাবনা বর্তমানে বিশবাঁও জলে।  রাজ্যের বর্তমান সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে এই অধিগৃহীত জমিতে জুট পার্ক হচ্ছে না। অর্থাৎ জেলার পাট চাষিরা যেমন সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিপদের মুখে পড়েছেন, ঠিক একইভাবে নতুন কাজের সুযোগ হারাচ্ছেন জেলার বেকার যুবক-যুবতীরা। কিন্তু এদিকে কোন লক্ষ্য নেই রাজ্য সরকারের।  
২০১১ সালের পর থেকেই এই শিল্প বিকাশ কেন্দ্র জুড়ে নেমে এসেছে কালো মেঘ।  কোন সরকারি উদ্যোগ না থাকায় শিল্পোদ্যোগীদের প্রত্যাশা হতাশায় পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যেই  এই শিল্প বিকাশ কেন্দ্রে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি কারখানা লক আউট হয়ে গেছে। কোনোক্রমে চলছে দুটি জুট মিল সহ অন্যান্য ক্ষুদ্র শিল্প। জুট মিল থাকলেও তার উৎপাদন ক্রমশ  তলানিতে ঠেকেছে।  আর এর ফলে শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে বেশ কয়েকবার। অত্যন্ত কম শ্রমিক দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি  কোচবিহার জেলার শিল্প সম্ভাবনা। পরিস্থিতি এমন যে, জেলার বাইরের কোনো শিল্পোদ্যোগী  এই শিল্প বিকাশ কেন্দ্রে শিল্প স্থাপনে আগ্রহী নন। কোচবিহারের একমাত্র শিল্প তালুকের পুনরুজ্জীবন কিংবা কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের বাজার তৈরি করতে জুট পার্ক স্থাপনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল বামফ্রন্ট সরকার তাকে পদদলিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাজ্যের বর্তমান এই সরকার। সরকারি এই অপদার্থতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েই উত্তরকন্যা অভিযানের সামিল হবেন এই জেলার অগণিত যুবক, যুবতীরা।

Comments :0

Login to leave a comment