Uttarkashi Chardham

শাস্তি চাইল পরিবার, উৎকট উল্লাস নাকি দেখা হবে দায় কার

জাতীয়

সুড়ঙ্গের সামনে মোতায়েন অ্যাম্বুল্যান্স।

শাস্তি চেয়েছে আটকে থাকা শ্রমিকের পরিবার। গব্বর সিং নেগির ভাই মহারাজ সিং সংবাদ চ্যানেলে সরাসরি জানিয়েছেন দাবি। যে সংস্থা ভাইয়ের জীবন কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল, শাস্তি দিতে হবে তাদের। 
সংবাদমাধ্যমের একাংশে, তখনই, মঙ্গলবার রাতে, ‘সাফল্যের’ প্রচারে গুরুতর অন্যায় ঢেকে দিতে চাইছে। হিমালয়ের বুকে বিপর্যয় ডেকে আনা ‘চারধাম প্রকল্প’ বন্ধ হবে কিনা উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্ন। ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ স্লোগান, সিল্কিয়ারায় সুড়ঙ্গের মুখ থেকে ক্যামেরায় ধরা আতসবাজির উৎকট উল্লাস সেই প্রশ্ন আড়াল করতে চেয়েছে। 
দেশের বহু মানুষ, ভূতাত্ত্বিক বা বিশেষজ্ঞদের একাংশও তুলেছেন প্রশ্ন, তীর্থ পর্যটনের নামে রাজনৈতিক প্রচারের তাগিদে চালানো চারধাম প্রকল্প আদৌ বিধি মেনে চলছিল কিনা। 
সুড়ঙ্গের পাশেই দেখা গিয়েছে মাটির ছোটখাটো পাহাড়। তাকে আটকানোর ব্যবস্থাও নেই। বৃষ্টিতে যে কোনও সময় নামতে পারে ধস। নদীর জলে মিশে নিচে এলাকায় পৌঁছে উত্তরাখণ্ডের লোকালয়ে বিপর্যয় নামাতে পারে। ভূতাত্ত্বিকরাই বলেছেন, মাটি কাটা হলে দরকার গার্ড ওয়াল দিয়ে আটকানো। সেটি হয়নি। তাঁরা বলেছেন, বোঝা যাচ্ছে যে সুড়ঙ্গ খননের এই কাজ চলেছে বিধি উপেক্ষা করে। 
উত্তরাখণ্ডেরই জোশীমঠে একের পর এক বাড়ি ধসে পড়ছিল, দেখা গিয়েছিল ফাটল। সেখানে এখন নির্মাণ বন্ধ রাখতে হয়েছে। হিমালয়ে বিধি না মেনে পরিকাঠামো চালানোর মাশুল দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। ফলে ভঙ্গুর এবং অনিশ্চিত ভূপ্রকৃতির হিমালয় কেটে চারধাম প্রকল্প আদৌ পরিবেশ বিধি মেনে চলছে কিনা, বারবার তা নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছে। 
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ২০১৬’তে ৮০০ কোটির বেশি টাকা বরাদ্দ করেছে এই প্রকল্পের জন্যই। তার প্রচারও রয়েছে জাতীয় এবং স্থানীয় স্তরে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভূতাত্ত্বিক ভাবে ভঙ্গুর হিমালয়ের এই অংশের শিলাস্তর। ফলে এমন চুনাপাথরের শিলাস্তরে জমে থাকা মাটি জলের মিশ্রণের চরিত্রের আগাম অনুমান করা যথেষ্ট কঠিন। হিমালয় অঞ্চলের ভুবৈশিষ্ট অনুযায়ী এই পাহাড়ের শিলাস্তরের বয়স তুলনামুলক ভাবে কম এবং ভূপৃষ্ঠের গভীরে থাকা সেই  শিলাস্তরগুলির স্থায়িত্ব এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত সেই শিলাস্তরের সরণ এবং সংঘাত লেগে থাকার কারণে হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠের স্থায়িত্ব ততোটা পোক্ত নয়। 
সব সতর্কতা উড়িয়ে এমন প্রকল্পের সবচেয়ে বড় দায়, অনেকেরই মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। দায় তাঁর সরকারের। অথচ তাঁকে নিয়েই মঙ্গলবার রাতে শুরু হয়েছে প্রচার। আটকে পড়া শ্রমিকের পরিবার শাস্তি চেয়েছে এই সুড়ঙ্গের বরাত পাওয়া নির্মাণ সংস্থার মাথাদের।  ৪১ শ্রমিকের জীবন বিপন্ন করার দায় কার, তা খতিয়ে দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ তা করা হলে দায় নিতে হবে দেশের সরকারকে, প্রধানমন্ত্রীকে। না হলে বিপন্ন হবে আরও বহু বহু জীবন।

Comments :0

Login to leave a comment