রবিবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২০৯ রানে পরাজিত হল টিম ইন্ডিয়া। এই হতশ্রী পারফর্মেন্সের পরে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, তাহলে কী টেস্ট ক্রিকেট ভুলতে বসেছেন ভারতীয় তারকারা?
টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৪৬৯ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ২৯৬ রানে। প্রথম ইনিংস শেষে অজিরা এগিয়ে ছিলেন ১৭৪ রানে।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭০/৮ রানের মাথায় ইনিংস ডিক্লেয়ার করেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কিউমিন্স। জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৪৪৪ রান। হাতে ছিল ১৩৭ ওভার। কিন্তু সেই টার্গেটের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারলেন না রোহিতরা। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৩৪ রান করে অসহায় আত্মসমর্পন করলেন ভারতীয়রা।
অনবদ্য পারফর্মেন্সের জোরে প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন ট্র্যাভিস হেড।
ফাইনালের এমন পারফর্মেন্সের জেরে স্বাভাবিক ভাবেই ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠছে।
ফাইনালের দুটি ইনিংসেই দলের মিডল অর্ডার ব্যাটিং লাইনআপের ভরাডুবি ঘটেছে। আইপিএলে অংশ না নিয়ে ইংল্যান্ডের সাসেক্সের হয়ে অনেকদিন ধরে খেললেন চেতেশ্বর পূজারা। কিন্তু তাতে কি আদৌ কী কোনও লাভ হল? অন্যদিকে, ফর্মে থাকা ঋদ্ধিমানকে বাদ দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল শ্রীকর ভরতকে। কত রান পেলেন তিনি? আবার আইপিএলে দুরন্ত ফর্মে থাকা শুভমান গিলও একইরকম ভাবে ব্যর্থ হলেন ইংল্যান্ডের মাটিতে।
ক্রিকেট মহলে আগে থেকেই সংশয় ছিল, দীর্ঘ আইপিএল যাত্রার পরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে কী সত্যিই ভালো ফল করা সম্ভব? সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। লাল বল এবং সাদা বলের যে কতটা পার্থক্য, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ফাইনাল। আর অজিরা অনেকটাই আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে পা রেখেছিল। ফলে, আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা মিলেছে তাঁদের।
শুধু তাই নয়, ওভালের গতিময় পিচে আগুনে বোলিং-এর মোকাবিলা করার জন্য কতটা প্রস্তুত ছিল টিম ইন্ডিয়া? এই প্রশ্নগুলো তো ওঠা উচিৎ।
হাইলাইটসঃ
টসে জিতে বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ১০ উইকেটের বিনিময়ে ৪৬৯ রান। ডেভিড ওয়ার্নার করেন ৪৩ রান এবং উসমান খওয়াজা করেন ০ রান। স্টিভ স্মিথ সেঞ্চুরি পান, তাঁর সংগ্রহে ১২১ রান। সেইসঙ্গে, শতরান পান ট্রেভিস হেড, তিনি করেন ১৬৩ রান। এছাড়াও অ্যালেক্স ক্যারে ৪৭ রান করেন। ভারতের হয়ে ৪টি উইকেট পান মহম্মদ সিরাজ। সেইসঙ্গে, ২টি করে উইকেট পেয়েছেন মহম্মদ শামি এবং শার্দূল ঠাকুর।
ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ২৯৬ রানে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা করেন মাত্র ১৫ রান। তবে রবীন্দ্র জাদেজার লড়াকু ৪৮ রান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। অজিঙ্ক রাহানে করেন ৮৯ রান। শার্দূল ঠাকুরের সংগ্রহে ৫১ রান। অজিদের হয়ে ৩টি উইকেট নেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। সেইসঙ্গে, ২টি করে উইকেট পান মিচেল স্টার্ক, বোল্যান্ড এবং ক্যামেরুন গ্রিন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান তোলার পর ইনিংস ডিক্লেয়ার করে অস্ট্রেলিয়া। লাবুশেন করেন ৪১ রান, স্টিভ স্মিথ করেন ৩৪ এবং অ্যালেক্স ক্যারের সংগ্রহে ৬৬ রান। ভারতের হয়ে ৩টি উইকেট পান রবীন্দ্র জাদেজা। অন্যদিকে, ২টি করে উইকেট পান শামি এবং উমেশ যাদব।
দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৩৪ রানেই শেষ ভারত। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৪৩ রানে এবং শুভমান গিল ১৮ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। পূজারা করেন ২৭ রান। তারপর বিরাট কোহলির ৪৯ রান এবং অজিঙ্ক রাহানের ৪৬ রান বাদ দিলে, পুরো ব্যাটিং লাইনআপ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।
শেষদিন ভারতের হাতে ছিল ৭ উইকেট এবং জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৮০ রান। পরপর উইকেট পড়তে থাকে ইন্ডিয়ার। জাদেজা এবং শার্দূল ঠাকুর শুন্য হাতে ফিরে যান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪ উইকেট পান নাথান লিয়ন। অন্যদিকে, ৩টি উইকেট পেয়েছেন বোল্যান্ড, ২টি উইকেট পান মিচেল স্টার্ক এবং ১টি উইকেট পান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
অর্থাৎ, যে জায়গায় হাল ধরতে হবে সেই জায়গাতেই পুরো ব্যর্থ রাহুল দ্রাবিড়ের ছাত্ররা। ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ফিটনেস ও কন্ডিশনিং কোচ এবং সাইকোলোজিস্ট সহ একাধিক অত্যাধুনিক সুযোগ মেলার পরেও ফলাফল একদমই আশানুরূপ নয়। তারই ফলশ্রুতি, বিদেশের মাটিতে দেশের মুখ লজ্জায় ঢেকে যাওয়া। কিন্তু এই বিষয়গুলি নিয়ে ভাবার কি আদৌ সময় রয়েছে বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেট বোর্ডের প্রশাসকদের?
Comments :0