Atrocities on women

মহিলাদের সুরক্ষায় যোগী-রাজের ‘সুশাসন’ ফাঁস

জাতীয়

সাল ২০১৮ থেকে ২০২১। চার বছরে বিরল ‘কৃতিত্ব’ দেখিয়েছে যোগী-রাজ। ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, অ্যাসিড আক্রমণ, মহিলাদের উপর অন্যান্য আক্রমণ ও খুন— সব ক্ষেত্রেই দেশের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এই চার বছরে কখনও প্রথম, কখনও দ্বিতীয়, কখনও তৃতীয় বিজেপি-শাসিত উত্তর প্রদেশ। মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে যোগী-রাজের এই ‘সাফল্য’কে মঙ্গলবার লোকসভায় বেআব্রু করে দিয়েছে কেন্দ্রেরই বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এদিন সংসদের নিম্নকক্ষে সাংসদ রামশি‍‌রোমণি ভার্মার প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর যে পরিসংখ্যান পেশ করেছেন, তাতেই উঠে এসেছে এই লজ্জাজনক চিত্র। একটি অপরাধের ক্ষেত্রে আবার তৃণমূল-শাসিত পশ্চিমবঙ্গ রীতি মতো টক্কর দিয়েছে বিজে‍‌পি-শাসিত উত্তর প্রদেশের সঙ্গে। এই চার বছরে মহিলাদের উপর অ্যাসিড আক্রমণে দিদি-রাজ আর যোগী-রাজ পরস্পর পাল্লা দিয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান নিয়ে। ‘জয়ী’ হয়েছে অবশ্য দিদি-রাজের প্রশাসন, মহিলাদের উপর অ্যাসিড আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থতায় চার বারের মধ্যে তিন বারই হয়েছে প্রথম। 
দেশে চলতি বছর ও আগের তিন ব‍‌ছরে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ও নাবালিকাদের উপর আক্রমণের তথ্য জানতে চেয়ে প্রশ্ন রেখেছিলেন সাংসদ রামশিরোমণি ভার্মা। উত্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র তিনের জায়গায় আগের চার বছরের পরিসংখ্যান পেশ করেছেন ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তরফে প্রকাশিত ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া’ (ভারতে অপরাধ) শীর্ষক রিপোর্ট থেকে। চলতি বছরের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি বলে তার তথ্য জানাননি। সেই পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে সবথেকে‍‌ বেশি মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন সেই সময়ে বিজে‍‌পি-শাসিত আরেক রাজ্য মধ্য প্রদেশে, ৫৪৩৩ জন। দ্বিতীয় স্থানে ছিল রাজস্থান, ৪৩৩৫ জন মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। সেই বছর রাজস্থানেও ছিল বিজেপি’রই সরকার, মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বসুন্ধরা রাজে। আর ৩৯৬৪টি ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে যোগী সরকারের উত্তর প্রদেশ ছিল তৃতীয় স্থানে। ধর্ষণে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় স্থানে ছিল উত্তর প্রদেশ ও তৃতীয় স্থানে মধ্য প্রদেশ, ২০২০-তেও একই, ২০২১-এ আবার মধ্য প্রদেশ দ্বিতীয় ও উত্তর প্রদেশ তৃতীয়। তবে ২০১৯-এ মধ্য প্রদেশে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। দলবদ্ধ ধর্ষণেও উত্তর প্রদেশ ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত চার বছরই দ্বিতীয়, মধ্য প্রদেশ ২০১৮ ও ২০১৯-এ তৃতীয় এবং ২০২০ ও ২০২১-এ চতুর্থ। শেষের এই দুই বছরে আবার বিজেপি-শাসিত আরেক রাজ্য হরিয়ানা দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তৃতীয় স্থানে ছিল। 
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পেশ করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে মহিলাদের উপর অ্যাসিড আক্রমণ সবথেকে বেশি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তৃণমূল-শাসিত রাজ্যে এমন ঘটনার সংখ্যা ছিল ৩০। তার পিছনেই দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি-শাসিত উত্তর প্রদেশ, অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনার সংখ্যা ১৮। এমন ঘটনায় ২০২০ ও ২০১৮ সালেও পশ্চিমবঙ্গ ছিল প্রথম স্থানে, এনসিআরবি’র কাছে নথিভুক্ত অপরাধের সংখ্যা যথাক্রমে ২৯ ও ৩৬। শুধু ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ চলে যায় দ্বিতীয় স্থানে (অ্যাসিড আক্রমণের সংখ্যা ৩৬), উত্তর প্রদেশ উঠে আসে প্রথম স্থানে (অ্যাসিড আক্রমণের সংখ্যা ৪২)। পাশাপাশি ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রতি বছরেই দুষ্কৃতীরা আক্রমণ চালিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মিলিয়ে সবথেকে বেশি সংখ্যায় মহিলাকে খুন করেছে বিজে‍পি-শাসিত উত্তর প্রদেশেই। মহিলা‍দের উপর আক্রমণের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, সংখ্যার দিক থেকে সেই যোগী-রাজের উত্তর প্রদেশ ২০১৮ ও ২০১৯-এ প্রথম এবং ২০২০ ও ২০২১-এ তৃতীয় স্থানে ছিল। একমাত্র মহিলাদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রতি বছরই প্রথম স্থানে থেকেছে অন্ধ্র প্রদেশ। প্রসঙ্গত, দেশের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত রাজ্যের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমব‍‌ঙ্গের বিরুদ্ধে এনসিআরবি’র কাছে রাজ্যে সংগঠিত অপরাধের বিষয়ে নিয়মিত ও যথাযথ তথ্য না পাঠানোর অভি‍‌যোগ রয়েছে।  
এদিন এই সব পরিসংখ্যান পেশ করার পাশাপাশি কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আক্রান্ত মহিলাদের জন্য ১১টি আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কত জন মহিলা তাতে সহায়তা পেয়েছেন বা কেমন সহায়তা পেয়েছেন, সেই তথ্য মন্ত্রীর উত্তরে উঠে আসেনি। অবশ্য মন্ত্রীর উত্তরে এক কথায় জানা গিয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২১’র মধ্যে সারা দেশে একবারই মহিলাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত নথিভুক্ত অপরাধের সংখ্যা কমেছে, ২০১৯’র ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৩২৬ তার পরের বছর ২০২০-তে কমে হয়েছিল ৩ লক্ষ ৭ হাজার ৫০৩। বাকি বছরগুলিতে তা শুধুই বেড়েছে। ২০১৮-তে এই সব অপরাধের সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ২৩৬, ২০১৯-এ তা বেড়ে হয়েছিল ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৩২৬ এবং ২০২১-এ তা আরও বেড়ে হয়েছে ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ২৭৮। তবে এই সব সংখ্যাই শেষ কথা নয়। এদেশে প্রতি বছর মহিলাদের বিরুদ্ধে আরও অনেক অপরাধের ঘটনা ঘটে, যা থানায় নথিভুক্তই হয় না। বহু ক্ষেত্রে পুলিশ অপরাধীকে ক্ষমতা, ধর্ম ও উঁচু জাতের কারণে আড়াল করতে অভিযোগ নেয়ই না। অনেক ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক দিক থেকে দুর্বল হওয়ার কারণে আক্রান্ত মহিলা বা আক্রান্তের পরিবারের প্রশাসনের কাছে যাওয়ার সাহস হয় না বা সুযোগ হয় না।     
 

Comments :0

Login to leave a comment