Duttapukur

প্রেম প্রত্যাখ্যান, স্কুল ছাত্রীকে অ্যাসিড হামলার হুমকি

রাজ্য জেলা

প্রত্যাখাত হয়ে শারীরিক হামলা চালানোর পর অ্যাসিড হামলার হুমকি দিলো দত্তপুকুরে এক তৃণমূল নেতার ছেলে। মেয়ের নিরাপত্তার কথা জানিয়ে দত্তপুকুর থানায় পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হলেও কাজের কাজ হয়নি। বহাল তবিয়তে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই অভিযুক্ত। এবারে হুমকির বহর বেড়েছে। থানায় অভিযোগ করার জন্য এবারে প্রাণনাশের হুমকি শুনতে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। এই নিয়ে মারাত্মক আতঙ্ক ছড়িয়েছে দত্তপুকুরের কোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মুক্তারপুর গ্রামে।   
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রেমের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করায় ওই গ্রামের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর ওপর অ্যাসিড হামলার হুমকি দিয়েছে ওই যুবক। অভিযুক্ত যুবক শাসকদলের সমর্থক হওয়ার পাশাপাশি তার বাবা শাসক দলের নেতা হওয়ায় অভিযোগ পাওয়ার পরেও দত্তপুকুর থানার তরফে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্যই নাকি পুলিশের তরফে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।    
অভিযোগে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের বাসিন্দা ইনজামুল হক ওরফে শুভ নামে ওই যুবক এলাকার মেয়েটি উত্যক্ত করে আসছিলো। সেই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছিলো কুপ্রস্তাব। এইভাবে চলতে থাকার পর শুক্রবার দুপুরে ঘটে গেলো আরো মারাত্মক ঘটনা। গতকাল স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই একাদশ পড়ুয়ার ওপর  হামলা চালানো হয়। তখন রাস্তায় পুলিশ ছিলো। শুধু মারধর করাই নয়, পুলিশের সামনেই জখম ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারার হুমকি দিতে থাকে ইনজামুল হক। পুলিশ ছিল নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায়।
ওই পরিস্থিতিতে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই মেয়েটিকে উদ্ধার করে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান তাঁর বাবা। এরপরে সন্ধ্যায় দত্তপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরেই ফের রাত থেকে শুরু হয় নতুন হুমকি। এবারে ওই উদ্ধত যুবক পরিবারের লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া শুরু করে। এই ঘটনার পর থেকে গোটা পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। একাদশের ওই পড়ুয়া শুক্রবার থেকে কার্যত ঘরেই বন্দী থাকতে বাধ্য হচ্ছে। স্কুল থেকে পড়াশুনা সবই বন্ধ। বারংবার পুলিশকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেও কোন ফল মিলছে না।
স্রেফ শাসক দলের ঘনিষ্ট হওয়ার জেরে এত বড় একটা অপরাধ করার পরেও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই অভিযুক্ত। স্থানীয় মানুষরা ওই পরিবারকে বাইরে থেকে সুরক্ষার আশ্বাস দিলেও কেউই শাসক দলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অভিযুক্তকে কিছু বলতে পারছে না। গোটা গ্রামে এখন এক অজানা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গ্রামে রয়েছে উত্তেজনা, গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ দত্তপুকুর থানার পুলিশ অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করার সাহস দেখাতে পারছে না। 
গত ১৩ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে ১৭টি নথিবদ্ধ ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। সিংহভাগ ঘটনায় যুক্ত শাসক তৃণমূলের বাহিনী। সেপ্টেম্বর মাসে নথিবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা এখন ৮টি, প্রতিটিতে অভিযুক্ত তৃণমুল। আর জি করের ঘটনার পরবর্তী তিন সপ্তাহে উত্তরবঙ্গে ১৮টি ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা। পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী থেকে আইএএস অফিসারের স্ত্রী চার বছর থেকে ন’বছরের শিশুকন্যা মমতা-রাজত্বে ‘নিরাপদ’ নয় কেউই। রাজ্যে যখন মহিলার ওপর অপরাধ নিয়ে বিচারে সোচ্চার, সেখানে উত্তর ২৪পরগণা জেলার এই ঘটনা কার্যত আর এক অকর্মণ্য প্রশাসনকে সামনে নিয়ে এলো।

Comments :0

Login to leave a comment