চিন্ময় কর
ফুল কেনার লোক নেই, সড়ক রাস্তার ধারে সারি সারি স্তূপাকৃতি ফেলে দেওয়া ফুলের পাহাড়।
ফুল চাষের গড়ে নেই ফুল রাখার স্টোরেজ। ফুল বিক্রি না হওয়ায় ফুলচাষীরা সড়ক রাস্তার ধারে নয়নজুলিতে ফেলে দিয়ে ঘরে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। সড়ক রাস্তার ধারে একাধিক জায়গায় ফুলের পাহাড় নজরে পড়ছে। এমন দৃশ্য দাসপুর থানার যোশরা কালিবাজার, খুকুড়দহ সহ পাশ্ববর্তী কেশিয়াপাঠ মৌজায়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের রবিদাসপুর গ্রামের শ্যামসুন্দর দোলই বলেন, ‘‘দেড় বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। এখন প্রতিদিন জল খরচ সহ ফুল তুলতে মজুরি খরচ আছে। বাজারে ফুল কেনার লোক নেই। হাতে গোনা কয়েক জন ফুল কিনলেও কেজি প্রতি দর আড়াই থেকে তিন টাকা। গত চার দিনে আগের বাজারের চেয়ে ১৭-১৮ টাকা কম।’’
পার্বতীপুরের বাসন্তী খাঁ’র কথায়, বর্ষার সময় থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জমি জলের তলায় থাকে। আর এই সময় ফুল চাষ করেই সারা বছর সংসারের খরচ চালাতে হয়। শীতে ৩০-৩৫ টাকা দর পেয়েছে তাঁরা। তারপর ফেব্রুয়ারির পঞ্চমীর পর থেকে দাম কমতে কমতে ২০-২২ টাকায় দাঁড়ায়। গত চারদিনে দাম কমতে কমতে ৫-৬ টাকা হয়। আজ সেই ফুল কেনারই লোক নেই। যে দুই চারজন পাইকার এসেছিল তারা আড়াই টাকা দর দেয়। এতে বহন খরচও উঠবে না। বেলা সাতটা আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও বিক্রি না হওয়ায় শয়ে শয়ে ফুলচাষি সড়ক রাস্তার ধারে একাধিক জায়গায় ঢেলে দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
জেলায় আলুর পরই অর্থকরী ফসল ফুল চাষ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আলুর দর ৯ টাকা ঘোষণা করলেও এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সেই আলুর দর সাড়ে পাঁচ টাকা থেকে ৬ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে আলুচাষিরা। বহু জায়গায় মাঠেই আলুর স্তূপ ত্রিপল ঢাকা দিয়ে ফেলে রেখেছেন কৃষকরা। এখন আলুর পর ফুলচাষিরাও সংকটে। ফড়েদের হাতেই বাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দাসপুর, ডেবরা, বালিচক, রাধামোহনপুর, শ্যামচক, মাদপুর জকপুর, এমনকি সবং পিংলা এমন ব্লকের বহু মৌজায় ফুলের চাষ বেড়েছে। অপর দিকে ঝাড়গ্রাম জেলার চন্দ্রী, বিনপুর, জাম্বনী এলাকায়ও গত ২-৩ বছর ধরে ফুল চাষ শুরু হয়েছে। চাষের নজরদারী, সার ওষুধ, মজুরী করচ বেশী হলেও ধান সবজি চাষের চেয়ে লাভের পরিমাণ বেশি। তাই ফুল চাষের দিকে ঝোঁক বেড়ে ছিলো বহু মৌজায়। হঠাৎ করে ফুল কেনারই লোক নেই।
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট, দেউলিবাজার সহ খুকুড়দহ, কেশিয়াপাঠ, যোশরাকালিবাজার, মাদপুর এমন বহু জায়গায় পাইকারি বাজার রমরমিয়ে গড়ে ওঠে। এখন সেই বাজারে ফুল কেনারই লোক নেই। আর ফুল সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমঘরের মতো পরিকাঠামোও নেই। ব্লকে ব্লকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কিষান মান্ডি ও কর্মতীর্থ নামক বহুতল গড়ে তোলা হলেও সেগুলি অকেজো।
আলুর গড়ে যেমন হিমঘর গড়ে উঠেছে, তেমনি ফুলের গড়ে এমনই পরিকাঠামো গড়ে ওঠার দাবি তুলেছেন ফুলচাষিরা।
Comments :0