দেশের স্বার্থ মাথায় রেখে বিদেশ থেকে তেল কিনবে ভারত। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমনই কথা বলা হয়েছে বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে জানিয়েছেন যে রাশিয়ার থেকে তেল কিনবে না ভারত। এই মন্তব্য সামনে আসার পর শুরু হয়েছে বিতর্ক। কংগ্রেস সহ বিরোধীরা নিশানা করেছেন মোদীকে। বিরোধীদের কথায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কার্যত মাথা নত করেছে ভারত। উল্লেখ্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তাতে মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলতে বা তাঁর সমালোচনা করতে দেখা যায়নি।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘বিদেশ থেকে গ্যাস এবং তেল আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারত। ভারত নিজের স্বার্থের কথা এবং দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে বিদেশ থেকে তেল এবং গ্যাস আমদানি করবে।’
বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘স্থিতিশীল জ্বালানির দাম এবং সুরক্ষিত সরবরাহ নিশ্চিত করা আমাদের জ্বালানি নীতির দু’টি লক্ষ্য। এর মধ্যে রয়েছে আমাদের জ্বালানি উৎসের বিস্তৃত ভিত্তি তৈরি করা এবং বাজারের পরিস্থিতি পূরণের জন্য যথাযথভাবে বৈচিত্র্য আনা।’
বিদেশমন্ত্রক বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলতে গেলে, আমরা বহু বছর ধরে আমাদের জ্বালানি ক্রয় সম্প্রসারণের চেষ্টা করে আসছি। গত কয়েক দশক ধরে এটি ধারাবাহিকভাবে এগিয়েছে। বর্তমান মার্কিন প্রশাসন ভারতের সাথে জ্বালানি সহযোগিতা আরও গভীর করার আগ্রহ দেখিয়েছে। আলোচনা চলছে।’
এক্স হ্যান্ডেলে লোকসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী ট্রাম্পকে ভয় পান। প্রথম কথা তিনি ট্রাম্পকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং ঘোষণা করতে দেন যে ভারত রাশিয়ার তেল কিনবে না। দ্বিতীয়, বারবার প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও অভিনন্দন বার্তা পাঠাতে থাকেন। তৃতীয়, অর্থমন্ত্রীর আমেরিকা সফর বাতিল করা হয়েছে। চতুর্থ, শারম আল-শেখ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পঞ্চম, অপারেশন সিন্দুর সম্পর্কে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন না মোদী।’
ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতের ওপর যে শুল্ক চাপিয়েছে তার ফলে কৃষি সহ একাধিক ক্ষেত্র সঙ্কটের মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক লাগু হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে শুল্ক চাপানোর ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাবে যার ফলে কমবে রপ্তানি। করোনা অতিমারির সময় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যেমন ভাবে কয়েকটি ক্ষেত্রকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল এবারও সেই একই নীতি মানা হতে পারে।
ভারতের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপানো নিয়ে কড়া সমালোচনার সাহস দেখায়নি ভারত সরকার। পালটা শুল্কও চাপায়নি আমেরিকার পণ্যের ওপর। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক মার্কিন পদক্ষেপকে সেই সময় "অযৌক্তিক, অন্যায্য এবং ভিত্তিহীন" বলে চিহ্নিত করে যদিও। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিজেদের দেশের মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। ভারতের মতো অন্য অনেক দেশ, যার মধ্যে চীনও রয়েছে, এই ধরনের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা "অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক" বলে মন্তব্য করা হয়েছে। উল্লেখ্য চীনের ওপর শুল্ক চাপিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই চাপের কাছে চীন মাথা নত না করে পাল্টা শুল্ক চাপায় মার্কিন পণ্যের ওপর। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পিছু হটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
Trump India
‘রাশিয়ার তেল কিনবে না ভারত‘, ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় বিবৃতি বিদেশ মন্ত্রকের

×
Comments :0