Editorial

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

সম্পাদকীয় বিভাগ

আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান স্ট্যািলিনের ডাকা বৈঠকে উপস্থিত থাকলেন পাঁচ রাজ্যের ১৪ জন নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও। যথারীতি অনুপস্থিত থাকলো তৃণমূল। এর আগেও বহুবার দেখা গেছে, বিজেপি বিরোধী যেকোনও উদ্যোগে, সংসদে সরব  হওয়ার প্রশ্নেই  হোক অথবা বিরোধী ঐক্য গড়ার যেকোনও প্রয়াস, তা সযত্নে এড়িয়ে গেছে তৃণমূল। নানা কৌশলে বিজেপি বিরোধী ঐক্যকে বানচাল করারই চেষ্টা চালিয়ে গেছে। তেমনই আরেকটা উদাহরণ হয়ে রইলো তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যাালিনের আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত একটি বৈঠক, যা অনুষ্ঠিত হলো চেন্নাইতে। বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে আহ্বান জানিয়ে ছিলেন স্ট্যা্লিন। তিনি জানিয়েছেন, এই বৈঠক ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত যে আওয়াজ তামিলনাড়ু এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে থেকে উঠে এসেছে তা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের ভবিষ্যৎ যাতে সঠিক পথে এগোয় সেই কারণেই এই বৈঠক। লোকসভার সীমা পুনর্বিন্যাস প্রশ্নে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেই লক্ষ্যে ডিএমকে সহ দক্ষিণ ভারতের অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে নিয়ে গঠিত হয়েছে যৌথ অ্যাকশন কমিটি।  তামিলনাডু বাদ দিয়ে কেরালা, কর্নাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্ট্যা লিন। অথচ তৃণমূল এড়িয়ে গেছে এই বৈঠক। মমতা ব্যানার্জি নিজে যাননি, দলের কোনও নেতাকেও পাঠাননি।
কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন নিয়ে প্রথম থেকেই প্রতিবাদে সরব হয় মূলত দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য। বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, শামিল হচ্ছে প্রতিবাদে। ডিলিমিটেশন প্রশ্নে কেন্দ্রের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে বিজেপি বিরোধী দলগুলি। ২০২৬ সালের ভিত্তিতে যদি লোকসভার সীমা পুনর্বিন্যাস করা হয় তাহলে জনসংখ্যার নিরিখে বিশেষ করে দক্ষিণ ভারত এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের  প্রতিনিধিত্ব অনেকটাই হ্রাস পাবে। আসন সংখ্যা বাড়বে মূলত উত্তর ভারতে। এটা শুধু সাংসদ-সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয় নয়, রাজ্যের অধিকারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজনৈতিক মহল  মনে করছে দক্ষিণ ভারতে যেহেতু বিজেপি শক্তি বাড়াতে সক্ষম হয়নি তাই সেখানে লোকসভার আসন কমিয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে নিজেদের শক্তি কেন্দ্র ধরে রাখতে চাইছে তারা। জনসংখ্যার নিরিখে হিন্দি বলয়ে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে বিজেপি তাদের আধিপত্যও বাড়াতে চায়। রাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্ব আগের অবস্থায় রাখার ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে লোকসভার সীমা পুনর্বিন্যাস করার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল। দেখা যাচ্ছে যেখানেই হিন্দুত্ববাদী নীতি, আরএসএস’র নীতি বাধা পাচ্ছে সেখানেই বিজেপি বিভিন্ন রাস্তা নিচ্ছে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে। বৈঠকে তাই কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের স্পষ্ট বক্তব্য, রাজ্যগুলির উপরে বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্যগুলির উপরে আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে। জনসংখ্যার নিরিখে আসন পুনর্বিন্যাসের পথে গেলে দক্ষিণের রাজ্যগুলির তাৎপর্যপূর্ণভাবে আসন কমবে এবং উত্তরের আসন বিপুল বৃদ্ধি পাবে। বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে এমন বিন্যাস চাইছে। রাজনৈতিক কৌশল ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, দেশের সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বৈচিত্রের কথা মাথায় রেখেই কেন্দ্রের এই বিষয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত। সিপিআই(এম) আগেই আসন পুনর্বিন্যাস প্রসঙ্গে বলেছে যে দেশের সংসদে কোনও রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব যাতে কমে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রকে। আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত প্রক্রিয়াটি চালানো উচিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, সব অংশকে যুক্ত করে। পুনর্বিন্যাস হোক রাজ্যগুলির জন্য ন্যায্য পদ্ধতিতে। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার সঙ্গে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রশ্নটি সরাসরি জড়িয়ে রয়েছে, সেই বৈঠকের কোনও গুরুত্ব নেই মমতা ব্যনার্জির কাছে।

Comments :0

Login to leave a comment