JADAVPUR UNIVERSITY

যাদবপুরে মর্মান্তিক মৃত্যু

রাজ্য সম্পাদকীয় বিভাগ

jadavpur university ragging students death sfi wti fas bengali news

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে এক ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু রাজ্যবাসীকে গভীরভাবে ব্যথিত, উদ্বিগ্ন করেছে। অনেক স্বপ্ন এবং যোগ্যতা নিয়ে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া এক ছাত্রকে এভাবে চলে যেতে হলো, এই শোক কোনোদিনই মুছে ফেলা যাবে না। ঠিক কী কারণে, কোনও ঘটনাক্রমের পরিণতিতে এই মৃত্যু, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে। 

পরিবারের পক্ষ থেকে খুনের অভিযোগও করা হয়েছে। আশা করা যায় পুলিশ এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে সত্য বের করবে এবং কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। 

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হস্টেলে ‘র্যা গিং’-য়ের অভিযোগ প্রবল হয়েছে। ওই নির্দিষ্ট হস্টেলে নতুন বা জুনিয়র ছাত্রদের ওপরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চলে এবং তা রীতিতে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ আসছে। 

‘র্যা গিং’ একটি মানসিক বিকৃতি, তা ব্যক্তি থেকে কখনো যূথবদ্ধ বিকৃতিতেও পরিণত হয়। বন্ধুত্ব পাতানো, সম্পর্ক তৈরির ঠুনকো অজুহাতে এই প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া যায় না। কোনোভাবেই যায় না। দেশের অন্যত্রও উচ্চশিক্ষার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এই ব্যাধি রয়েছে এবং বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে এর চরম মূল্য দিতে হয়েছে। 
বিশ্ববিদ্যালয়ে এইরকম ঘটনা বন্ধ করার প্রাথমিক দায়িত্ব অবশ্যই কর্তৃপক্ষের। 

হাওয়ার ওপরে ভর করে তারা সেই দায়িত্ব ত্যাগ করতে পারে না। যাদবপুরের ক্ষেত্রে এখন অবশ্য কে যে কর্তৃপক্ষ তা চিহ্নিত করাই কঠিন। স্থায়ী উপাচার্যহীন, আরও কয়েকটি দায়িত্বপূর্ণ পদ শূন্য, এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান নিয়ে রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের দড়ি টানাটানি কুৎসিত পর্যায়ে পৌঁছেছে। 

এমন বলা হচ্ছে না যে এই নৈরাজ্যের পরিস্থিতি না থাকলে ওই শোকাবহ ঘটনা ঘটত না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দায়দায়িত্ব রয়েছে, এ সম্পর্কিত সর্বভারতীয় বিধিও রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিধি রয়েছে। নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে। সোজা কথায়, রাজ্যের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘র্যা গিং’ নামক বিভীষিকা চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না। 

লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই ঘটনাকে ‘সুযোগ’ হিসাবে ব্যবহার করে সমগ্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কেই সচেতনভাবে কুকথা রটানো হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ভাবে দক্ষিণপন্থীদের তরফ থেকে। যাদবপুরে মুক্ত চিন্তা, গণতান্ত্রিক মতবিনিময়ের যে পরিসর রয়েছে তাকেও আক্রমণ করা হচ্ছে। 
 

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষাকর্মীদের সমবেত দায়িত্ব ‘র্যা গিং’ নামক অনাচারকে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিরোধ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা গ্রাম-শহরের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকে মানসিক ও মানবিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গত কারণেই যে মর্যাদা রয়েছে, সম্মান রয়েছে তাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা।

Comments :0

Login to leave a comment