চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এবং দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কমরেড জিয়াঙ জেমিনের জীবনাবসান হয়েছে। সাংহাইয়ে বুধবার দুপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৯৬। তিনি লিউকোমিয়া ও একাধিক অসুখে ভুগছিলেন।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কমরেড জিয়াঙকে অসাধারণ নেতা, বড় মাপের মার্কসবাদী, সর্বহারা বিপ্লবী, রাষ্ট্রনেতা,পরীক্ষিত কমিউনিস্ট নেতা ও চীনের বৈশিষ্ট্যসহ সমাজতন্ত্রের অগ্রণী নেতা বলে বর্ণনা করেছে।
প্রাক-বিপ্লব সময়েই কমরেড জিয়াঙ জেমিন জাপ-বিরোধী যুদ্ধে অংশ নেন ও মার্কসবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি আয়ত্ত করেন। ১৯৪৭ সালে সাংহাইয়ের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পরে তিনি এক স্থানীয় কারখানায় কাজ করেন। তখনই তিনি শ্রমিকদের মধ্যে বিপ্লবী মতবাদ প্রচারের কাজ করেন। সাংহাই মুক্তির সময়ে তিনি শ্রমিকদের সমবেত করেন।
গণসাধারণতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পরে কমরেড জিয়াঙ জেমিন বিভিন্ন কারখানার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে থাকেন। ১৯৫৫ সালে তিনি মস্কোয় স্তালিন অটোমোবাইল ওয়ার্কসে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ শিখে আসেন। গাড়ি ও বিদ্যুৎ কারখানায় প্রযুক্তিবিদ্ হিসাবে কাজ করেন। উহানে আণবিক শক্তি উৎপাদনের যন্ত্র তৈরির কাজে তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। রোমানিয়ায় গিয়েও তিনি যন্ত্রাংশ তৈরির শিক্ষা নেন। ১৯৮০-র দশকের প্রথম ভাগে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানি-আমদানি কমিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন। চীনের বৈদ্যুতিন শিল্প বিকাশে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ১৯৮২ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন। ফুজিয়ান ও গুয়াঙদঙে নমনীয় পদক্ষেপ রূপায়ণে তাঁর ভূমিকা ছিল।
কমরেড জিয়াঙ জেমিন সাংহাইয়ের মেয়র ও পরে পার্টি সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি পলিট ব্যুরোর সদস্য হন। সাংহাইয়ে সমাজতান্ত্রিক আধুনিকীকরণের কাজে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে চীনে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। সেই সময়ে সাংহাইয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে সমাবেশ ঘটান। ১৯৮৯-তে কমরেড জিয়াঙ জেমিন পলিট ব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটিতে নির্বাচিত হন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। একই বছরে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ থেকে ১৩ বছর তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ ছিলেন চীনের রাষ্ট্রপতি।
এদিন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিপিসি’র তৃতীয় প্রজন্মের যৌথ নেতৃত্বের কেন্দ্রে ছিলেন কমরেড জিয়াঙ জেমিন। ১৯৮০-র দশকের শেষদিক থেকে ১৯৯০-র গোড়ার দিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ও চীনে গুরুতর রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ঘটনা ঘটে। বিশ্বে সমাজতন্ত্র বাঁক ও মোড়ের মধ্যে পড়ে, চীনের সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যেরও ওপরেও নজিরবিহীন চাপ তৈরি হয়। এই সময়েই চীনের সমাজতন্ত্রকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার কাজে কমরেড জিয়াঙ নেতৃত্ব দেন। চীনের বৈশিষ্ট্যসহ সমাজতন্ত্রের পথে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতিকে প্রসারিত করেন। অস্থির আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতেও চীনের সংস্কার ও সমাজতান্ত্রিক আধুনিকীকরণে গতিবেগ সঞ্চারিত হয়।
কমরেড জিয়াঙ জেমিনের সঙ্গে চিহ্নিত হয়ে আছে ‘তিন প্রতিনিধিত্বের তত্ত্ব’। এই নীতি হলো পার্টি সব সময়ে চীনের এগিয়ে যাওয়া উৎপাদিকা শক্তির বিকাশের প্রতিনিধিত্ব করবে, চীনের অগ্রণী সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করবে এবং চীনের জনগণের সর্বোচ্চ সম্ভব সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মৌলিক স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবে। কমরেড জিয়াঙ জেমিনের নেতৃত্বে চীন অসংখ্য বাধা অতিক্রম করে দ্রুত উন্নয়নের পথে গেছে। ষোড়শ পার্টি কংগ্রেসের আগে তিনি নিজেই পার্টি ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। যদিও পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান পদের দায়িত্বে রাখে। ২০০৪ সালে নেতৃত্বের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেও কেন্দ্রীয় কমিটির দেওয়া কাজ অব্যাহত রাখেন। শেষদিন পর্যন্ত তিনি পার্টির দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কমিউনিস্ট পার্টি বলেছে, চীনের বিপুল উন্নতি সম্ভব হয়েছে কমরেড জিয়াঙ জেমিন সহ কয়েক প্রজন্মের নেতাদের একটানা উদ্যোগের ফলে। এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
Comments :0