বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে মামলার দ্বিতীয় শুনানির দিনে কলতান দাশগুপ্তের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, পুলিশের সমস্ত অভিযোগই কল্পনাপ্রসুত। কারণ, গ্রেপ্তারির পর পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে। অর্থাৎ পুলিশ গ্রেপ্তারি পরেই এফআইআর করেছে। আমার মক্কেলের কন্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। পুলিশ এই মামলা সাজিয়েছে নিজের কল্পনাকে সামনে রেখে। আইনজীবী ভট্টাচার্য বলেন, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ৩৫(৩) ধারা অনুযায়ী কোন নোটিশও পাঠানো হয়নি। ফলে একটি ফোন কলের ভিত্তির ওপর নির্ভর করে এই গ্রেপ্তারিতে আইনের কোন সায় নেই।
এই সময় বিচারপতি ভরদ্বাজ সরকারপক্ষের আইনজীবীকে (এজি) কিশোর দত্তকে প্রশ্ন করেন, ধৃত ব্যক্তির কন্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কীসের ভিত্তিতে এই ফোনালাপে পুলিশ নিশ্চিত হচ্ছে আবেদনকারী অপরাধমূলক কাজ করেছেন। বিচারপতি ভরদ্বাজ প্রশ্ন করেন, ফোনের কথোপকথন কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, তার কোন বিস্তারিত বিবরণ পুলিশের রিপোর্টে নেই। এই ফোনালাপ কে রেকর্ড করেছে, তার কোনও উল্লেখ নেই। একটি পেনড্রাইভের মাধ্যমে সেই ফোনালাপ কীভাবে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লো তাও পুলিশ জানে না। বিচারপতি বলেন, একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে এই পেনড্রাইভ কীভাবে পৌঁছে গেল তার কোন ব্যাখ্যাও পুলিশ দেয়নি। এখানে উল্লেখ করা যায়, কলতান দাশগুপ্তকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশ যে রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছে, সেই রিপোর্ট পড়ে বিচারপতি সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
এই সময়ই এজি কিশোর দত্ত আদালতকে বলেন, এই ফোনালাপের মধ্যে থেকে বোঝা যাচ্ছে একজন (সঞ্জীব দাস) অর্জুনের মত কথা বলেছেন, অন্যজন (কলতান দাশগুপ্ত) শ্রীকৃষ্ণের কাজ করেছেন। তবে পুলিশের আশঙ্কা থেকেই এই গ্রেপ্তারি এবং তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরপরই বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ মামলার শুনানি শেষ করে রায়দান স্থগিত রাখেন।
গতকাল রাত পৌনে সাতটা নাগাদ বিচারপতি ভরদ্বাজ মামলার অন্তর্বতীরায় ঘোষণা করেন। আদালত পাঁচশো টাকার ব্যক্তিগত জরিমানায় যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তের জামিন মঞ্জুর করে নির্দেশ দিয়েছেন, আদালত বলেছে তাঁকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আর প্রয়োজন নেই। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের অনুমতি ছাড়া আবেদনকারী দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে অন্য কোন মামলায় দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে আদালত বলেছে রাজ্য সরকারকে আগামী চারসপ্তাহের মধ্যে এই মামলায় হলফনামা জমা দিতে হবে।
বুধবারই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি ভরদ্বাজ মন্তব্য করেছিলেন টেলিফোনে কথোপকথনের জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় নাকি? একজন যদি ফোন করেন অপরপ্রান্তে যিনি ফোন গ্রহণ করবেন তাঁর অপরাধ কী? বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে যে এফআইআর হয়েছে তা খারিজের জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করলেও একটি জামিন-অযোগ্য ধারা মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় সর্বোচ্চ তিন বছর জেল হবার শাস্তি রয়েছে। কিন্তু পুলিশ কোন কন্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা না করেই শুধু টেলিফোনে কথা বলার কারে অতিসক্রিয়তার সঙ্গে এই গ্রেপ্তারির পথে গেছে। এই শুনানির সময়ই বিচারপতি ভরদ্বাজ বলেন, প্রথমে গ্রেপ্তার তারপর এফআইআর দায়ের করার কাজ হল ঔপনিবেশিক বদভ্যাস।
আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষন ও খুনের ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তাররা ৫দফা দাবি নিয়ে বিধাননগরে স্বাস্থ্যভবনের কাছে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় ধর্ষন ও খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলেন সামিল হয়ে বিচারের দাবিতে পথে নেমেছিলেন কলতান দাশগুপ্ত। জুনিয়র ডাক্তারদের এই কর্মসূচী চলাকালীন সময়েই কলতান দাশগুপ্তকে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট গত ১৪সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করেছিল। এরপরই তাঁকে বিধাননগর আদালতে তুলে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয় পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান কর্মসূচীতে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করেছে যুব নেতা কলতান। সঞ্জীব দাস নামে এক যুবকের সঙ্গে কলতানের ফোনে এই হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই অডিয়ো প্রকাশ করেন তৃণমূলের কুনাল ঘোষ। তৃণমূলের তরফে এই অডিয়ো সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে দাবি করা হয়, জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে হামলা চালিয়ে সেই দায় শাসক দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এরপরই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট অতি তৎপর হয়ে সঞ্জীব দাস নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। তারপর দিনই ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্তকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার আদালতে কলতান দাশগুপ্তের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে সহায়তা করেন অল ইন্ডিয়া ল’ইয়ার্স ইউনিয়নের বড় সংখ্যায় আইনজীবী সদস্যরা।
Comments :0