মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের এক কর্মী সভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সাওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী। একাধিক মুসলিম প্রধান দেশের উদাহরন টেনে দলীয় সভায় মোদী দাবি করেছেন যে তিন তালাকের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
তিনি বলেন, ‘‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল তিন তালাককে হাতিয়ার করেছে ভোটের জন্য।’’ উল্লেখ্য বিজেপি সরকার তিন তালাককে অবৈধ ঘোষণা করার আগে থেকেই একাধিক মহিলা সংগঠন এই তিন তালাকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক আইন বাতিল করার পর তার বিরুদ্ধে আইন করে কেন্দ্র। সেই আইনে বলা হয় কোন ব্যাক্তি যদি তিন তালাক দেন তবে তার তিন বছরের জেল হবে। উল্লেখ্য বিবাহ সংক্রান্ত বিষয় দেওয়ানি আইনের মধ্যে পড়ে। কিন্তু তিন বছরের জেলের সাজা দিয়ে দেওয়ানি আইনকে ফৌজদারি আইনে পরিনত করেছে বিজেপি।
উল্লেখ্য বিভিন্ন ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন আইন রয়েছে। তিন তালাক যেমন ভারতের মাটিতে রয়েছে তেমন ভাবে হিন্দু বিবাহ আইনও এই দেশে প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, মিশরে যেখানে ৯০ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা সেখানে ৮০ থেকে ৯০ বছর আগে এই আইন বাতিল করা হয়েছে।
বিজেপি এবং আরএসএস দীর্গদিন ধরেই ‘এক দেশ এক আইন’ স্লোগান তুলে এসেছে। তাদের সেই স্লোগানের অংশ হিসাবে তিন তালাককে তারা হাতিয়ার করেছে। মধ্যপ্রদেশের সভায় প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন তিন তালাকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংখ্যালঘু মহিলা তার সরকার এবং বিজেপির প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই আইন বাতিল হওয়ার পর থেকে যেখানেই যাই সেখানেই সংখ্যালঘু মহিলারা মোদী মোদী স্লোগান দেন। বিজেপির প্রতি তাদের সমর্থন জানান।’’ কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলির দিকে যদি একবার নজর দেওয়া যায় তবে দেখা যাবে উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে মহিলারা নির্যাতনের শিকার। দলিত, আদিবাসী মহিলাদের ওপর হয়ে চলেছে একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা।
এদিকে কর্মী সভায় যখন প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলছেন তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। বিলকিস বানু ধর্ষকদের মালা পড়িয়ে জেলে থেকে ফিরিয়ে এনেছে তার দলের সমর্থকরা। প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিলকিস বানু ধর্ষন মামলায় এক অভিযুক্তকে প্রার্থীও করেছে।
মঙ্গলবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সম্পর্কে সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো একটি বিবৃতিতে বলেছে, এই বিষয়ে ফের আলোচনা শুরু করেছে বর্তমান (২২তম) আইন কমিশন। অথচ এর আগের আইন কমিশন (২১তম) বিষয়টি নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা করে ২০১৮ সালেই বলেছিল, ‘‘এখন অভিন্ন দেওয়ানি বিধির না প্রয়োজন আছে, না এই বিধি কাম্য।’’ সিপিআই(এম) এই অবস্থানকে সমর্থন করে। অভিন্নতা আর সমতা এক নয়। পার্টি সমস্ত সম্প্রদায়ের মহিলাদের সমানাধিকারের পক্ষে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত ও প্রথাগত আইনগুলিকে সংস্কারের মাধ্যমেই সেই লক্ষ্যে সব থেকে ভালভাবে এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে, যে প্রক্রিয়ায় সক্রিয় গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ থাকবে ওই সম্প্রদায়গুলির সমস্ত মহিলা ও পুরুষের।
Comments :0