এদিন সংসদে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এই নোটিশ আনেন। বিজেপির এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সিপিআই(এম), কংগ্রেস সহ প্রায় সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল।
লোকসভায় সিপিআই(এম) দলনেতা পিআর নটরাজন বলছেন, ‘‘প্রমাণ পেতে চাইলে যৌথ সংসদীয় কমিটি করতে রাজি হচ্ছে না কেন সরকার পক্ষ।’’ রাজ্যসভায় পার্টির সাংসদ আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘যৌথ সংসদীয় কমিটিতে তো বিজেপি’র সদস্যই বেশি থাকবেন। তারপরও এত ভয় কেন।’’
বিরোধীদের দাবিয়ে রাখতে স্বাধিকারি ভঙ্গের নোটিস, বলছেন সিপিআই(এম) সাংসদরা। বিরোধী বিভিন্ন সাংসদের সঙ্গে তাঁরাও বলছেন, দেশের সংসদেও মানুষের কথা তুলতে দিতে চায় না বিজেপি। এই তৎপরতা তার প্রমাণ। ব্যাঙ্ক, এলআইসি ডুবে গেলে পথে বসবেন কোটি কোটি মানুষই।
মঙ্গলবার রাহুল সংসদে প্রশ্ন তোলেন, কিসের জোরে এবং কিসের ভিত্তিতে দেশের বিমানবন্দর, জলবন্দর সহ একের পর এক রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিকানা পেয়ে চলেছে আদানি গোষ্ঠী। তিনি অভিযোগ করেন, খোদ নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে আদানি গোষ্ঠীর লাভের পরিমাণ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বেনিয়মের অভিযোগ উঠলেও সেবি, এসএফআইও কিংবা আরবিআই’র মতো সংস্থাগুলি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
এই অভিযোগ যদিও আরও জোরালো করে তুলছেন বামপন্থীরা। দেশের মানুষের কাছেও বড় প্রশ্ন লুটেরা পুঁজির মালিক আদানিকে নিয়ে। পরিবেশবিধি অমান্য করে প্রাকৃতিক সম্পদ এই গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার বহু নমুনা রয়েছে।
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই বেকায়দায় পড়েছে আদানি গোষ্ঠী। আদানি গোষ্ঠীর বিপুল কর্পোরেট জালিয়াতির খবর সামনে আসতে বিতর্ক থেকে নিজেদের ছোঁয়াচ এড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবার রাহুল এই বেনিয়মের সঙ্গে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে জুড়ে দেওয়ায় কার্যত সাপের ল্যাজে পা পড়ার মতো ফুঁসে ওঠে গোটা শাসক শিবির। নিশিকান্ত দুবে, কিরণ রিজিজু’র মতো একের পর এক বিজেপি হেভিওয়েট সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাহুলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করে। পালটা তৎপরতা দেখাতে শুরু করে বিরোধী শিবিরও।
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মোদী সরকার আদানি সম্পর্কিত কোনও তদন্ত শুরু করতে চাইছে না। সেইজন্য সংসদীয় কায়দা কানুন ব্যবহার করে বিরোধীদের ভয় দেখাতে এবং তদন্ত এড়াতে চাইছে বিজেপি। মোদী সরকার যদি এই ঘটনায় জড়িত না হয়, তাহলে তাঁরা জেপিসি তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছে না কেন? কীসের ভয় পাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী? সাংসদ সংখ্যার ভিত্তিতে জেপিসিতে তো বিজেপি’র সবথেকে বেশি সদস্য থাকার কথা। তারপরেও জেপিসিতে বিজেপির ভয় পাচ্ছে কারণ, এই কর্পোরেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে তাঁদের যোগ স্পষ্ট।’’
বিজেপির তরফে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশে বলা হয়েছে রাহুল গান্ধী কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে ইচ্ছাকৃত ভাবে কালিমালিপ্ত করার অভিযোগও এনেছে বিজেপি। এছাড়াও অসংসদীয়, উষ্কানিমূলক প্রভৃতি শব্দগুলিও স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশে ব্যবহার করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, মোদীর সঙ্গে আদানি যোগের প্রত্যক্ষ প্রমাণ রয়েছে। বিজেপি বলছে সমস্ত অভিযোগ ‘বেবুনিয়াদ’ বা ভিত্তিহীন। আমরা বলছি তদন্ত করলেই প্রমাণিত হবে কোন অভিযোগ ভিত্তিহীন আর কোনটার ভিত্তি রয়েছে। গোটা দেশের বহু এয়ারপোর্ট এবং বন্দর আদানির হাতে মোদী সরকার তুলে দিয়েছে। এটা তো ‘ফ্যাক্ট’। সেই তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে তদন্ত করে দেখাতে হবে যে এর পিছনে মোদী কিংবা বিজেপির কোনও রাজনৈতিক প্রভাব এবং হস্তক্ষেপ কাজ করেনি।
এদিন সিপিআই(এম)’র সংসদীয় দলনেতা পিআর নটরাজন বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের সর্বাত্মক বিরোধীতা করা হবে। ইতিমধ্যেই বিরোধী সাংসদরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আগামীদিনে এর তীব্রতা বাড়বে। আমরা বিরোধীরা জেপিসি তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। বিজেপি বলছে বিরোধীরা ‘বেবুনিয়াদ’ অভিযোগ করছে। আমরা বলছি কার পরামর্শে এসবিআই এবং এলআইসি আদানি গোষ্ঠীতে বিপুল লগ্নী করল? নরেন্দ্র মোদী যে আদানির স্বার্থে কাজ করে গিয়েছেন দিনের পর দিন, তার ‘ওপেন এভিডেন্স’ ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র।
Comments :0