ISRAEL PALESTINE CONFLICT

সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা তো আমেরিকাই, ভারতের অবস্থানে প্রশ্ন শান্তি আন্দোলনের

জাতীয় রাজ্য

israel palestine conflict hamas usa israel iran india bengali news

মার্কিন-ভারত বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিপদ আলোচনায় এসেছে। ছায়া সংগঠনের ব্যবহার নিয়েও কথা হয়েছে। ইজরায়েলের যুদ্ধকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসবাদ রোধের যুক্তিতে। কিন্তু আমেরিকার ‘সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ’-র স্লোগান নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশ্বে।

সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা বা এআইপিএসও’র সর্বভারতীয় নেতা এবং সিপিআই(এম)’র পলিটব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসু বলছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনের ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে আমেরিকার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবও বলেছেন, ৭ অক্টোবরকে ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না। যেভাবে প্যালেস্তিনীয়দের উপরে অত্যাচার চালানো হয়েছে, তা কি সন্ত্রাসবাদ নয়? এবং সেই হামলাকে সমর্থন করছে আমেরিকা। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে হামাস কোথায়? সেখানে তাহলে হামলা চালাচ্ছে কেন ইজরায়েলী দখলদাররা? এটাই আমেরিকার দ্বিচারিতা।’’

এআইপিএসও’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন বেরা বলছেন, ‘‘দেশে দেশে বামপন্থী এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তিগুলিকে হারাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে উদ্যোগী হয়েছে নিয়েছে আমেরিকা। মৌলবাদী শক্তিগুলির সবথেকে বড় ‘প্রোমোটার’ হচ্ছে আমেরিকা। বিন লাদেনকে কে তৈরি করেছিল? কলম্বিয়ায় ড্রাগ মাফিয়াদের মদত যুগিয়েছে আমেরিকা, সিআইএ’র মারফৎ।’’

বেরা বলছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে কলম্বিয়ার দক্ষিণপন্থী স্বৈরাচারী শাসকরা লাতিন বিশ্বে আমেরিকার সবচেয়ে বড় অনুগামী। খুঁজলেই পাওয়া যাবে, স্বৈরাচারি হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করা সমস্ত শাসককে মদত যুগিয়েছে আমেরিকা।’’

শুক্রবার নয়া দিল্লিতে ভারতের প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন আমেরিকার বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা সচিব। ওয়াশিংটন ডিসি এবং নয়া দিল্লির তরফে জানানো হয়েছে, এই বৈঠকে উভয় পক্ষই সন্ত্রাসবাদ এবং হিংসাত্মক উগ্রপন্থার তীব্র নিন্দা করেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ছায়া সংগঠন বা প্রক্সির ব্যবহার, এবং উগ্রপন্থী সংগঠনগুলিকে আর্থিক সাহায্য করাকেও নিন্দা জানানো হয়েছে এই বৈঠকে। 

১৯৬১ সালে কিউবা’র সমাজতান্ত্রিক সরকারকে হঠাতে ‘বে অফ পিগ্‌স’-এ সশস্ত্র অভিযান চালায় কিউবান ডেমোক্রেটিক রেভোলিউশনারি ফ্রন্ট। সিআইএ’র মদতে পাঁচটি ফিদেল কাস্ত্রো বিরোধী গোষ্ঠীকে নিয়ে গড়ে ওঠে এই সংগঠন। সিআইএ’র ছকে দেওয়া নকশা অনুযায়ী স্বাধীন সর্বভৌম একটি রাষ্ট্রের সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র চালানো হয়। ব্যবহার করা হয় ছায়া সংগঠন। যদিও কিউবা সেনার তৎপরতায় গোটাটাই ভেস্তে যায়। 

আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনাকে হারাতে আফগান মুজাহিদদের ব্যবহার করে আমেরিকা। সৌদি আরবের প্রভাবশালী বিন লাদেন পরিবারের সন্তান ওসামা আফগান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৪ সালে ওসামা মক্তব আল-খিদমত নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। মার্কিন বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একাধিক ফাঁস হওয়া ফাইল বলছে, পাকিস্তানের আইএসআইকে ব্যবহার করে এই সংগঠনে টাকা পাঠাতো সিআইএ। সিআইএ যদিও এরকম অনেক মুজাহিদ বা উগ্রপন্থী ধর্মযোদ্ধাদের সাহায্য করত সোভিয়েত বিরোধী লড়াইয়ে। 

প্যালেস্তাইন মুক্তি সংগ্রামের রাশ পুরোপুরি ছিল ইয়েসর আরাফতের নেতৃত্বাধীন পিএলও’র হাতে। পিএলও’র চরিত্র ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। সমাজতান্ত্রিক এবং তৃতীয় বিশ্বে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা ছিল পিএলওর। প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল বিশ্বের সিংহভাগ দেশ। 

শান্তি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মনে করাচ্ছেন যে আরাফতকেও সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে ইজরায়েলের পক্ষে থাকত পশ্চিমী দুনিয়া। কিন্তু ভারত এই অবস্থানের বিপক্ষে থেকেছে বরাবর। 

নীলোৎপল বসু বলেছেন, ‘‘ভারত এখন পুরোপুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইটে পরিণত হয়েছে। মার্কিন অবস্থানকে সমর্থন করে ইজরায়েলের পক্ষে থাকছে মোদী সরকার। এই অবস্থান বদলাতে হবে। যুদ্ধবিরতির পক্ষে সরব হতে হবে ভারতকে।’’

Comments :0

Login to leave a comment