‘‘পুজোর পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন হবে।’’ মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমাবেশ থেকে একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। রাজ্যে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয় শেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ২০১৭ সালে। সেই নির্বাচন প্রসঙ্গে এসএফআই বার বার দাবি করে এসেছে যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ গায়ের জোড়ে ভোট না করে বিরোধীদের মনোনয়ন দিতে না দিয়ে ছাত্র সংসদ দখল করেছে।
এদিন দলের ছাত্র সলগঠনের প্রতিষ্টা দিবসের সমাবেশের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘পুজোর পর আপনাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। শান্তিপূর্ন ভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে হবে। আমরা যেমন শান্তিপূর্ন ভাবে নির্বাচন করি আপনারাও তেমন ভাবে করবেন।’’ এখানে না থেমে মঞ্চে বসে থাকা দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘ছেলে মেয়েরা যাতে ভালো ভাবে ভোট করতে পারে সেইদিকটা দেখবে তোমরা। ওদের সাহায্য করবে।’’
কোন শান্তিপূর্ন নির্বাচনের কথা বললেন তৃণমূল নেত্রী, পঞ্চায়েত নির্বাচন? যা জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে?
ভোট লুঠ। মানুষের মৃত্যু। ব্যালট বাক্স লুঠ। শান্তিপূর্ন নির্বাচনের এই নমুনার কথা তিনি বললেন?
যদিও তৃণমূল নেত্রী ‘শান্তিপূর্ন নির্বাচনের’ ব্যাখ্যা কোনদিনই দিতে পারেননি।
২০১১ সালের আগে থেকেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় প্রান গিয়েছে এসএফআই কর্মীর। হাওড়ার আন্দুল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাতে খুন হন এসএফআই কর্মী স্বপন কোলে। তারপর এই ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিকবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কলেজ ক্যাম্পাস গুলো। কোথাও বিবরোধী ছাত্র সংসদের সদস্যদের ওপর আক্রমণ তো কোথাও তাদের মনোনয়ন দিতে না দেওয়া। বিগত ১২ বছরে যেই দুইবার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে তাতে বেলাগাম অশান্তির সাক্ষী থেকেছে রাজ্য। তবে এর মধ্যে নিয়ম মেনে প্রতি দুবছর অন্তর ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যাদবপুর এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কোন অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। রক্ত ঝড়েনি। সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের প্রতিনিধিকে বেছে নিয়েছেন। উল্লেখ্য এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এসএফআইয়ের দখলে।
ছাত্র ভোটে হিংসা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘এই রাজ্যে সিপিআই(এম), বিজেপি এবং কংগ্রেস এক হয়েছে। লাল হলুদ মিশে গিয়ে ঝামেলা তৈরি করছে। ওরা যদি কোন অশান্তি তৈরি করে তবে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে।’’ রাজ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপিকে কোনদিন দেখা যায়নি। কিন্তু কিছু স্বাধীনচেতা ছাত্র সংগঠনের সুবাদে তারা কিছুটা সংগঠন তৈরি করেছে। ঠিক যেমন ভাবে টিএমসিপি করেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। পুজোর পর নির্বাচন হতে পারে। তার অনেক আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী কার্যত নির্দেশ দিয়ে দিলেন পুলিশকে যে বিরোধীরা কোন অশান্তি করলে পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু কোন জায়গায় তার দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা যদি অশান্তি করে তখন পুলিশ কি করবে?
এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রতীকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এসএফআই নির্বাচনের জন্য তৈরি। তবে এর আগে অনেকবার মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রী দুজনেই বলেছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। কিন্তু হয়নি, তাই না আঁচালে বিশ্বাস নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি গনতন্ত্রকে ভয় পায় তাই চায়না নির্বাচন হোক। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেতাদের বলছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাহায্য করার জন্য। কলেজের ভোটে পাড়ার নেতারা কি করবে? তার মানে তিনি চাইছেন পঞ্চায়ের নির্বাচনের মতো ভোট লুঠ করতে। তিনি বলছেন পুলিশ বিরোধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। আমরা বলতে চাই পুলিশ, ভাই, ভাইপোদের দিয়ে ক্যাম্পাসে এসএফআইকে রোখা যাবে না। এসএফআই তৈরি ক্যাম্পাস থেকে চোর তাড়াতে। আমারা চাই র্যাগিং এবং চোর মুক্ত ক্যাম্পাস।’’
এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার। এই দাবিকে সমানে রেখে পথেও নেমেছে এসএফআই। তাদের দাবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র সংসদ গুলো দখল করে বসে রয়েচে তৃণমূলের বাহিনী। কলেজে কলেজে টাকার বিনিময় ভর্তি চলছে এই ইউনিয়নের মদতেই। সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের কোন সমস্যার কথা না তুলে ধরে ইউনিয়ন রুম দখল করে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
Comments :0