অলকেশ দাস
তিলোত্তমার ঘটনায় পর মেয়েদের রাত দখলের দিনের উচ্চারণকে একটু পালটে নিয়ে লেখা যায়... এই ছোট জাত শোন/এই রাত, এই ভোর/যতখানি অন্যের/ততখানি তোর...। সমাজ যাদের নিম্ন বর্ণ এবং নিম্ন জাত বলে দাগিয়ে দিয়েছে এরা সবসময়েই অন্যদের সঙ্গে সমতা, সমানাধিকার, সামাজিক সম্মানের দাবি করে এসেছে। সামাজিক পরিমণ্ডলে, অর্থনীতিতে, শিক্ষার পরিবেশে অংশীদারিত্বমূলক প্রতিনিধিত্ব চেয়ে এসেছে। জানতে চেয়েছে সমগ্র সমাজে তার অবস্থানটা কোথায়? এই দাবির এক প্রতিবিম্ব জাতি গণনা।
জাতি গণনার অর্থ জাতিভিত্তিক জনগণনা। এখন যে সাধারণ জনগণনা হয় তাতে তফসিলি জাতি, আদিবাসী এবং সাধারণের, হিন্দু এবং মুসলমানের ব্যক্তি এবং পরিবারের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে। এটা হয় ১৯৪৮ এর জনগণনা আইন অনুযায়ী। এখানে সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখা হয়। গত ৩০ এপ্রিল রাজনৈতিক বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা জানিয়েছে এবারের জনগণনায় জাতিভিত্তি যুক্ত হবে। জাতি গণনায় গণনাকারীদের তফসিলি জাতি, আদিবাসীদের বাইরে যে সমস্ত জাতি আছে পৃথকভাবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। মূলত অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত মানুষের জাতি ভিত্তিক তথ্যগুলি আলোকপ্রাপ্ত হবে। ভারতবর্ষে জনগণনা শুরু হয় ১৮৭২ সালে। পূর্ণাঙ্গ জনগণনা হয় ১৮৮১ সালে। তারপর থেকে প্রতি ১০ বছর ব্যবধানে হয়ে আসছে এই কাজ। ভারতে শেষ জাতিভিত্তিক জনগণনা হয়েছিল ১৯৩১ সালে।
কাস্ট সার্ভে বা জাতি সমীক্ষায় জনগণের ‘স্যাম্পল’ গ্রহণ করে তার ওপরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই স্যাম্পল এমনভাবে বাছাই করা হয় যাতে তার মধ্যে সমগ্র জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব থাকে। ফলে জনগণনার থেকে তুলনামূলকভাবে এই সার্ভে কম নিখুঁত এবং স্বল্প সময়ের। বিহার, তেলেঙ্গানা এবং কর্নাটকে জাতি সমীক্ষা সংগঠিত হয়েছে। এই সমীক্ষার তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশে কোনও অসুবিধা নেই। স্বাধীন দেশের প্রথম সোশিও ইকোনমিক রিভিউ হয় কেরালায়। ১৯৫৭ ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এই কাজ করেছিলেন।
সোশিও ইকনোমিক কাস্ট সেন্সাস ২০১১ ইউপিএ-২ সরকারের সময়কালে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু এর প্রতিবেদন মোদী সরকার বিগত ১১ বছরে প্রকাশ করেনি। অথচ এর তথ্য, পরিসংখ্যান বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহার করেছে সরকার। জাতিগত তথ্য, পরিসংখ্যানকে চেপে রেখেছে বিজেপি সরকার কারণ, সঠিক তথ্য সম্মুখে এলে জাতিগত বৈষম্যের পাহাড় উন্মোচিত হবে।
ওবিসি জনসংখ্যার শতাংশ নির্ণয়ে প্রথম ভূমিকা পালন করে ১৯৭৯ সালে মোরারজী দেশাই নিযুক্ত বিন্ধ্যেশ্বরী প্রসাদ মণ্ডল কমিশন। এই কমিশন নানাবিধ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেখে জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ ওবিসি। এই সময়কালের মধ্যে প্রচুর অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষাগত পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে সমসাময়িক ওবিসি তথ্য নির্ণয়ে জাতিভিত্তিক জনগণনা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। দাবি ওঠে সেই সময় থেকেই।
মণ্ডল কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে ভিপি সিং সরকার ওবিসিদের জন্য ৫২ শতাংশ সরকারি কাজ ও শিক্ষায় সংরক্ষণ গ্রহণ ও প্রয়োগ করে। আরএসএস, বিজেপি হিংস্রভাবে এর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইন্দিরা সাহনি সুপ্রিম কোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলা করলে প্রথমে আদালত ওবিসিদের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্রিমি লেয়ারকে সংরক্ষণের আওতা থেকে বিযুক্ত করে। আদালত বলে সংরক্ষণকে সুষ্ঠুভাবে এবং যৌক্তিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রম ছাড়া তারা সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা ৫০ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেন। ফলে ওবিসিদের সংরক্ষণ কমে হয় ২৭.৫ শতাংশ। সংরক্ষণে অংশীদারিত্ব মূলক প্রতিনিধিত্বর দ্বন্দ্ব ওবিসিদের ক্ষেত্রে থেকে যায় ।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার অর্থনৈতিক দুর্বলতর অংশের মানুষের জন্য সরকারি কাজ ও শিক্ষায় ১০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করে শুধুমাত্র তথাকথিত উচ্চবর্ণের সচ্ছল মানুষের জন্য। সরকারকে আয়কর দেওয়া মানুষও সেই সরকারের সংজ্ঞায় অর্থনৈতিক দুর্বলতর হয়ে যায়। অর্থনৈতিক দুর্বলতর অংশের সংরক্ষণকে বিশেষ পরিস্থিতি দেখিয়ে সংরক্ষণের ৫০ শতাংশ উর্ধ্বসীমাকে ভেঙে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। তখনই প্রশ্ন ওঠে তফসিলি জাতি, আদিবাসী, ওবিসিদের জনসংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ। তাদের জন্য সংরক্ষণ ৫০ শতাংশ। আবার ১০ শতাংশ তথাকথিত হিন্দু উচ্চবর্ণের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ! সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা ভেঙে দেওয়ার দাবিও জোরদার হয় এই সময় থেকে।
বিহার কাস্ট সার্ভেতে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্মুখে আসে। তফসিলি জাতির জনসংখ্যা ১৯.৬৫, আদিবাসী ১.৬৮ শতাংশ। ওবিসি জনসংখ্যার ৬৩.১৪ শতাংশ। এদের মধ্যে ৩৬.০১ শতাংশ অত্যন্ত পশ্চাৎ অর্থাৎ ইবিসি। ২৭.১২ শতাংশ পিছিয়ে পড়া জাতিভুক্ত ওবিসি। অর্থাৎ মোট ওবিসি ৬৩.১৪ শতাংশ। যারা দাপটে সমাজে ক্রিয়াশীল সেই তথাকথিত উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণ, রাজপুত, ভূমিহার, কায়স্থ ইত্যাদি মিলে ১০.৬৫ শতাংশ। বিহার সরকার সংরক্ষণের পরিমাণ ঠিক করে ৭৫ শতাংশ। তফসিলি জাতির জন্য ২০ শতাংশ, আদিবাসী ২ শতাংশ, ইবিসি ২৫ শতাংশ, বিসি ১৮ শতাংশ, অর্থনৈতিক দুর্বলতরদের ১০ শতাংশ। এই তথ্য পাওয়ার পরে দেখা যায় ৬৩.১৪ শতাংশ ওবিসি যাদের হাতে পাঁচ একরের বেশি জমি আছে, তাদের মোট যে পরিমাণ জমি আছে, মাত্র ১০ শতাংশ তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষের হাতে তার দ্বিগুণ জমি আছে। মোট স্নাতকদের ১০.৫ শতাংশ হিন্দু উচ্চবর্ণের যারা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, আর জনসংখ্যার ৬৩.১৪ শতাংশ ওবিসিদের মধ্যে স্নাতক মাত্র ২.৮ শতাংশ। জাতি সমীক্ষা যে বৈষম্যের নতুন দিগন্তকে উন্মোচিত করবে, তা পাটিগণিতের অঙ্কের মতো মিলে যায়।
আম্বেদকর চতুর্বর্ণের কয়েক সহস্র বছরের সামাজিক নিপীড়নের প্রতিবিধানের জন্যই সংরক্ষণের সংস্থান রেখেছিলেন সংবিধানে। হিন্দুত্বের পূজারীরা কি করে এই সংরক্ষণের পাশে দাঁড়াবে? এইজন্যেই মোহন ভগবত গত বিহার বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন— সংরক্ষণ নীতির সমীক্ষা প্রয়োজন। গত লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে ২০২১, ২০২৩ সালে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই এককথায় জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন।
এইজন্যেই ২০১১ তে সংসদে আরজেডি, এসপি ইত্যাদি যখন জাতি গণনার দাবি তুলেছিল, তখন বিজেপি প্রতিবাদ করেছিল। পরে অবশ্য বিজেপি সম্মত হয়। একই কথা প্রযোজ্য বিহারের কাস্ট সার্ভের ক্ষেত্রে। বিজেপি প্রতিবাদ করতেই থাকে। একেবারে শেষে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় সমর্থন করে। বামপন্থী, কংগ্রেস এবং আঞ্চলিক দলগুলো দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই, জনগণনার সঙ্গে জাতি বিষয়টিকে যুক্ত করতে হবে। এর পক্ষে তাদের স্লোগান ছিল– ‘জিতনি আবাদী উতনি হক’। কিংবা ‘যিসকি জিতনি সংখ্যা ভারী, উসকি ইতনি হিসসাদারি’। তেলেঙ্গানা, কর্নাটক বিধানসভা এবং সারাদেশে লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া ব্লক এই দাবির পক্ষে জনগণকে পেয়েছে। ততোই ক্ষুব্ধ হয়েছে মোদী, বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার। রাজস্থান, ছত্তিশগড় মধ্য প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতার পর মোদী বলেছিলেন জাত বলে কিছু হয় না। দেশে চারটি জাত - মহিলা, কৃষক, যুবক, গরিব। জাতি সমীক্ষাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার সরকার সুপ্রিম কোর্টে এফিডেভিটে বয়ান দিয়েছিল, ‘জনগণনা সেই যন্ত্র নয় যা দিয়ে জাতি গণনা হবে’। ১৯৫১ সাল থেকেই জনগণনায় জাতি বিযুক্ত হয়েছে নীতিগত প্রশ্নেই। সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি নেতারা সব সময় বলে এসেছে যে জাতি গণনা হলে সমাজের মধ্যে বিভাজন হবে। দায়ী করেছে বিভাজনের শক্তি হিসাবে বিরোধীদের। বলেছে জাতির যুদ্ধ লেগে যাবে। এক বছর আগেই মোদি বলেছিল যারা জাতি গণনার দাবি করছে তারা হচ্ছে শহুরে নকশাল। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী একজন দাগী অপরাধীর মতো বলেছিলেন, বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে। বলেছিলেন যে জাতি গণনা হলে হিন্দু ঐক্য বিঘ্নিত হবে। মোদী বলেছিলেন – ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’। মানে হিন্দুরা যদি এক থাকে তবে নিরাপদে থাকবে। এই মার্চেই নীতিন গডকরি বলেছেন- একজন মানুষকে জাত, সম্প্রদায়, ধর্ম, ভাষা দিয়ে জানা যায় না, যায় তার গুণাবলী দিয়ে। আরও বলেছেন, আমি পঞ্চাশ হাজার লোককে বলেছি, ‘জো করেগা জাত কি বাত, উসকো কাসকে মারুঙ্গা লাথ’।
হিন্দু ধর্মের নাম করে এক জাতকে অন্য জাত থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে কখনো অন্তঃগ্রথিত শ্রেষ্ঠত্ব, কখনো হীনমন্যতার সম্পর্ক। যদি এরা জাতি গণনায় দেখে যে এরা সবাই বৈষম্যের একই বন্ধনীতে এবং তাদের বৈষম্যের উৎসও এক, তখনই জাতি ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়বে। যে হিন্দুকে লড়িয়ে দেওয়া হয় মুসলমানের বিরুদ্ধে তোষণের রাজনীতির কথা বলে, তারা যখন দেখে বঞ্চনা আর বৈষম্যের দাঁড়িপাল্লায় তারাও সমানভাবে ঝুলছে, তখন মুসলমান বিদ্বেষ আর তার ওপর দাঁড়িয়ে হিন্দু ঐক্য তৈরি করার রাস্তায় কাটা পড়বে না?
বিজেপি শেষ পর্যন্ত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জাতি গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন এই অবস্থানের বদল? প্রথমত পহেলগ্রামে সন্ত্রাসবাদী হানায় সরকারের মুখ পুড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতা লোকের মুখে মুখে। ঘটনাকে হিন্দু মুসলমান দ্বৈরথে পরিচালিত করতে গিয়েও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি। সামনেই বিহারের নির্বাচন। এর থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য জাতি গণনার ঘোষণা। এই দাবি তুলেই কংগ্রেস চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কর্নাটক, তেলেঙ্গানায়। তাই এই স্লোগানটা ছিনিয়ে নিতে হবে বিরোধীদের থেকে। এই ঘোষণাই নাকি বিজেপি’র সার্জিকাল স্ট্রাইক বিরোধীদের বিরুদ্ধে! এছাড়া ২০২৯ সালে আছে মহিলাদের এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ। এই বছরেই বিহারের ভোট। ২০১৯ এর তুলনায় ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচনে হিন্দু আপার কাস্ট ওবিসি ভোট এনডিএর কমেছে ৪ শতাংশ। ইন্ডিয়া ব্লকের বেড়েছে ১১ শতাংশ। হিন্দু লোয়ার কাস্ট ভোট এনডিএ’র একই থাকলেও ইন্ডিয়া ব্লকের বেড়েছে ৭ শতাংশ। তফসিলি জাতির ভোট এনডিএ’র কমেছে ৫ শতাংশ, ইন্ডিয়া ব্লকের বেড়েছে ৭ শতাংশ। যদিও আদিবাসীদের ভোট এনডিএ’র বেড়েছে ৬ শতাংশ। একই শতাংশ ভোট কমেছে ইন্ডিয়া ব্লকের। ২০১৯ এর তুলনায় ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে বিহার, উত্তর প্রদেশে দলিত, ওবিসি সমর্থন এনডি’র কমেছে। বিহারে কুর্মি, কোয়েরি সম্মিলিত ভোট কমেছে ১২ শতাংশ, অন্যান্য ওবিসি’র ২৭ শতাংশ, দুষাধ-পাসি-যাদবদের ১৯ শতাংশ, অন্যান্য তফসিলি জাতি ১৮ শতাংশ। ইন্ডিয়া ব্লকের ঐ অংশগুলিতে ভোট বেড়েছে যথাক্রমে ৯, ১, ২৮ এবং ৩৮ শতাংশ। ২০১৯- এর তুলনায় ২০২৪ -এ উত্তর প্রদেশে উপরোক্ত অংশে এনডি’র ভোট হ্রাস-বৃদ্ধি যথাক্রমে ১৯, -১৩, +৭, -১৯ শতাংশ। একইভাবে ইন্ডিয়া ব্লকের ভোট হ্রাস-বৃদ্ধি যথাক্রমে +২০, +১৬, -৫০, +১৪ শতাংশ। ২০২৪ এ উত্তর প্রদেশে এনডিএ'র আসন এর ফলে ৬৪ থেকে কমে ৩৬ হয়েছে। অখিলেশের পিডিএ (পিছড়ে, দলিত, অল্পসংখ্যক) জোট হিন্দুত্বের শক্তিকে পরাভূত করে। ২০২০-এর বিধানসভা ভোটে ইসিবি, বিসি ভোট ১০ শতাংশ কমেছিল। মহাগাটবন্ধনের সঙ্গে তাদের ভোটের ব্যবধান ছিল কেবলমাত্র ১২,০০০। দু’পক্ষেরই প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৭ শতাংশ। ২০২০ বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে এনডিএ’র ওবিসি ও ইবিসি ভোট ১০ শতাংশ, তফসিলি ভোট ১৪ শতাংশ, আদিবাসী ভোট ২ শতাংশ কমেছিল। ওই অংশগুলি থেকে ইন্ডিয়া ব্লকের ভোট বেড়েছিল যথাক্রমে ৭, ৭, ৩ শতাংশ। এসব বুঝেই মোদী আর মোহন ভাগবতের একান্ত সভা। আর তারপরই জাতিগণনার ঘোষণা। মাইক্রো লেভেল সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং আরএসএস’র নখদর্পণে। এখন দেখা যাক জাতি সমীক্ষার ঘোষণায় নখ অক্ষত আর দর্পণ ভঙ্গুর হয় কি না।
জাতিভিত্তিক জনগণনা যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে ও বস্তুগত ভিত্তিতে সংগঠিত হয় তাহলে এর তথ্য ও পরিসংখ্যান সেইসব প্রকল্পগুলিকে সাহায্য করতে পারে যা সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চাৎপদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা গ্রহণ করে। শিক্ষা, কাজ এবং অর্থনৈতিক সুবিধা প্রান্তিক অংশের মানুষের কাছে পৌঁছাতেও তা কার্যকরী হয়। সুষম উন্নয়ন অনুন্নত অংশের মানুষের অবস্থা উন্নীত করতে সাহায্য করবে। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে। জাতি গণনা হবে ঘোষণা হয়েছে। সময়সীমা নির্দিষ্ট হয়নি। সূচক, শর্তাবলী নির্ধারণ হয়নি। প্রশ্ন উঠছে বিহারের নির্বাচনের পর ঠকে যাব না তো? গলায় জোর, আবেগের প্রাবল্য, শব্দের প্রাচুর্য যদি কোন তর্ক-বিতর্কের অনুমান যাচাইয়ের মাপকাঠি হতো তাহলে সেই অনন্য পুরস্কার মোদী ছাড়া এদেশে আর কারোর ভাগ্যে জুটতো না। তার যুক্তি তরবারির মতো নয়, হাতুড়ির মতো। আড়াই হাজার বছর আগে সক্রেটিস বলেছিলেন, যে যে বিষয়ে তর্ক তার স্বরূপ আগে ঠিকমতো জানা চাই। শাসক মানুষের চোখকে এবং অনুভূতিকে ক্ষণিকের সুড়সুড়ি দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখতে চায়। তাদের ঘোষিত জনকল্যাণের কর্মসূচিতে থাকে রাজনীতির লাভ-লোকসানের হিসাব। তাকে সত্যিকারের কল্যাণকামী করতে হলে তার অভিমুখ নির্দিষ্ট করতে হয় জনগণের ব্যাপক অংশের নজরদারিতে।
Comments :0