সেখ সাইদুল হক
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো পহেলগামের বৈসরনে নিরীহ পর্যটকদের উপর ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদী জেহাদীদের নৃশংসতম আক্রমণ। বর্বরতার সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে এই জঘন্য ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই এবং সঠিকভাবেই এই ঘটনার বিরুদ্ধে এবং ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা সর্বত্র বর্ষিত হচ্ছে। কিন্তু এটাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র এক ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী ভাবনাকে সচেতনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনাকে নস্যাৎ করা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের এবং ব্যক্তি হত্যার মান্যতা নেই কোনও ধর্মেই।
ধর্ম পরিচয়ে হত্যা কখনই সমর্থন যোগ্য নয়। তবে এটাও ঘটনা স্বাধীনতার পরপরই ঘটে যাওয়া দাঙ্গায় কিংবা গুজরাটের গোধরা কাণ্ডের পরবর্তী দাঙ্গায় এবং আরও পরে মোদী জমানায় আখলাক, পেহেলু খাঁ, জুনেইদ, আফজারুলকে ধর্ম পরিচয়েই হত্যার ঘটনা ঘটেছে সেগুলিও সমর্থন যোগ্য ছিল না। ঠিক তেমনি পহেলগামেরর ক্ষেত্রেও নয়। আবার যারা ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনার উপর তোপ দাগছেন তাঁরা সাম্প্রদায়িকতাকেই কি মুক্তির পথ ভাবছেন বা গোলওয়ালকারের ভাবনাকে মান্যতা দিয়ে বিধর্মীদের বিতাড়নকেই সমাধান মনে করছেন? সবচেয়ে বিস্ময়কর, বামপন্থী বলে দাবি করা কিছু বিশিষ্টজনের ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে গিয়ে সোশাল মিডিয়ায় নানা ধরনের পরষ্পর বিরোধী মন্তব্য করছেন। এই প্রসঙ্গেই ধর্মীয় মৌলবাদ, ইসলামী জেহাদ ও পহেলগামের ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা বলা দরকার। উল্লেখ করে রাখা দরকার, সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিগুলিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণ এবং তার প্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া সামরিক সংঘাত অথবা গতকাল ঘোষিত সংঘর্ষ-বিরতি এই নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়।
ধর্মীয় মৌলবাদ
ধর্মীয় মৌলবাদ কথাটির মানে হলো ধর্মের শিকড়ে বা মূলে ফিরে যাওয়া। মূলত মতবাদ হিসাবে এর উদ্ভব হয় ১৮৯৫ সালে আমেরিকার নায়াগ্রা সম্মেলনে যেখানে খ্রিস্টান প্রোটেস্ট্যান্টদের একটি শাখাকে ফান্ডামেন্টালিস্ট বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল যারা সমস্ত খ্রিস্টানদের খ্রিস্টধর্মের মূলে ফিরে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিল। এরা বেশির ভাগ ছিলেন লুথেরান এবং প্রেসবাইটেরিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত। সেই থেকে ধর্মীয় মৌলবাদ একটি মতবাদ হিসাবে গড়ে ওঠে, যাদের মূল দৃষ্টিভঙ্গি হলো ধর্ম শাস্ত্রের বিশুদ্ধতাকে রক্ষা করা এবং ধর্মীয় অনুশাসনকে কঠোরভাবে মেনে চলা।
পরবর্তীতে মৌলবাদীরা ধর্মের বিশুদ্ধতা রক্ষার নামে প্রবহমান সমাজের গতি ধারায় অচল কিংবা অপ্রয়োজনীয় প্রাচীন রীতিনীতিগুলিকে আঁকড়ে ধরে সমাজের অগ্রগতির অভিমুখটিকে পিছনে ফেরাতে চায়। মৌলবাদীরা হিংস্রতার পথে বিজ্ঞানের আলোকে ঐতিহাসিকভাবে বিলুপ্ত চিন্তাধারাকে নিজ ধর্ম বিশ্বাসীদের মধ্যে ধর্মীয় পুনরুজ্জীবনবাদের নামে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এবং সেই কাজে অপর ধর্মের প্রতি বিভেদ, ঘৃণা এবং হিংসার বার্তা পৌঁছে দিতে চায়। আর এই বার্তা হলো সাম্প্রদায়িকতার বার্তা যেখানে বোঝানো হয় একই ধর্মবিশ্বাসী সমস্ত মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ এক। আর সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা মৌলবাদকে ব্যবহার করে নিজেদের হাতিয়ার হিসাবে।
এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার। পশ্চিমী গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ মৌলবাদ বলতে কেবল ধর্মীয় মৌলবাদকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। সেই সাথে মুসলিম মৌলবাদ মানেই সন্ত্রাসবাদী বলে আখ্যায়িত করেন। প্রথমত, ধর্মীয় মৌলবাদ ছাড়াও পুঁজিবাদী মৌলবাদের কথা কেউ কেউ উল্লেখ করেন, যেখানে বলা হয় পুঁজিবাদই হলো শেষ কথা এবং তাকে রক্ষা করতে যে কোনও হিংসাত্মক পথ গ্রহণ করা দরকার। কেউ কেউ সাংস্কৃতিক মৌলবাদের কথা বলেন, যেখানে একটি নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলা হয়। অপর বিষয় হলো মুসলিম মৌলবাদ মানেই সন্ত্রাসবাদী নয়। বিশ্বে এবং আমাদের দেশে বহু মৌলবাদী সংগঠন আছে যারা নিজ ধর্মের বিশুদ্ধতা রক্ষার কথা বলে, ধর্মীয় অচলায়তনকে টিকিয়ে রাখতে চায়, কিন্তু সন্ত্রাসবাদীদের পথে তা করে না। তবে সব ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীরা ধর্মকে বর্ম করতে চায়। ভারতে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলির তৎপরতা আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেশ কিছু জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রুপ নিয়েছে। আমাদের রাজ্যেও তা ঘটেছে।
মুসলিম মৌলবাদ
মুসলিম মৌলবাদ বর্তমানে একটি বিশ্বজোড়া বৈশিষ্ট্য। কিছু বুদ্ধিজীবী এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ইউরোপের রেনেসাঁ এবং শিল্প বিপ্লবের ফল এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে স্পেনে আটশত বছরের মুসলিম শাসনের পতন এবং তুরস্কে খলিফাতন্ত্রের অবসান মুসলিম জগতে ও মুসলিম মননে যে শূন্যতার সৃষ্টি করেছে, তাকে ঘিরেই মৌলবাদী ধারণার বিকাশ ঘটেছে। নিউইয়র্ক শহরের যমজ মীনার ধ্বংসের পর মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দোসররা যে ইসলাম ফোবিয়া গড়ে তুলতে চেয়েছে, তার ফলশ্রুতিতে মুসলিম মৌলবাদ মুসলিম জনমানসে তার ভিত্তিকে অনেকটা বাড়াতে পেরেছে।
আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর থেকেই মুসলিমদের মধ্যে বঞ্চনা বোধ এবং জীবন-জীবিকার নিরাপত্তাহীনতার ভাবনা বেড়ে উঠতে শুরু করলে, মুসলিম মৌলবাদীরা তাকেই রসদ হিসাবে ব্যবহার করে মুসলিম স্বাতন্ত্র্যবোধের ধারণাটি গড়ে তুলতে চেয়েছে এবং জাতীয়তাবোধ অপেক্ষা ইসলামবোধের ধারণাটিকে তাঁরা সামনে আনতে সচেষ্ট থেকেছে। সাচার কমিটি তাঁর রিপোর্টে ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর পরিচিতি, নিরাপত্তা ও সমতার বিষয়টির প্রশ্নে তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কথা তুলে ধরে বলেছে, সাধারণভাবে ভারতে মুসলিমদের দু’ধরনের বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়। তা হলো, হয় তাঁরা জাতীয়তা বিরোধী, না হয় তোষণগ্রাহী। মুসলিমদের দৈনন্দিনভাবে প্রমাণ করতে হয় যে তারা জাতীয়তা বিরোধী ও সন্ত্রাসবাদী নন এবং তোষণগ্রাহীও নন।
এই পটভূমিতে মুসলিম মৌলবাদীরা এটা প্রচার করে যেহেতু মোদীর ভারতে ইসলাম ক্রমশ ধ্বংসের পথে এগচ্ছে এবং যেহেতু ইসলামই হলো বিশুদ্ধ ও নির্ভুল জীবন ব্যবস্থা, তাই ভারতে ইসলাম রক্ষার এবং প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জেহাদি ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইসলামী জেহাদ
জেহাদ বলতে সাধারণভাবে আমরা বুঝি সংগ্রাম। ইসলামী জেহাদ বলতে বোঝায় ইসলামের জন্য সংগ্রাম। সেই ইসলাম নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা অথবা সমাজে প্রতিষ্ঠা করা বা দুইই হতে পারে। ইসলাম শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞরা জেহাদের দুটি মূল ধারার কথা বলেছেন। একটি হলো আল জেহাদ আল আকবর এবং অপরটি হল আল জেহাদ আল আসগর। প্রথমটি হলো ব্যক্তির নিজ দুর্বলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আত্মসংশোধনের মাধ্যমে একজন প্রকৃত মুসলিম হয়ে ওঠা। দ্বিতীয়টি হলো বহিঃশত্রুর হাত হতে ইসলামকে রক্ষার করার জন্য কিংবা স্বনিরাপত্তার স্বার্থে কোনও অন্যায়কারী শাসকদের উৎখাতের জন্য সংগ্রাম গড়ে তোলা। দ্বিতীয় এই ভাবনাটিকে মৌলবাদী জেহাদিরা সামনে আনতে চায়।
বর্তমানে আমাদের দেশে মোদী সরকার সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং কর্পোরেট তোষণের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সরকার পরিচালনা করে চলেছেন। এই সরকার দেশে সংখ্যালঘুদের নিশানা বানিয়ে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। গোরক্ষার নামে মুসলিমদের পিটিয়ে মারা, উপাসনা আইনকে উপেক্ষা করে মসজিদের নিচে মন্দির খোঁজা, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন, কাশ্মীরের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ ধারা বাতিল, ওয়াকফ আইনের সংশোধন এই পদক্ষেপের উদাহরণ।
এই পটভূমিতেই কাশ্মীর সমস্যার অভিমুখকে উপলব্ধি করতে হবে। এই সবের মোকাবেলায় ভারতের মুসলিম মৌলবাদীরা ধর্মের মোড়কে জেহাদি আন্দোলনের ডাক দিয়ে ইসলাম বিরোধীদের নির্মূল করার আহ্বান জানায় এবং সন্ত্রাসবাদী পথে তার নিষ্পত্তি করতে চায়। এটা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। এবং আশার কথা ভারতীয় মুসলমানদের বড় অংশ এই সব মৌলবাদীদের সমর্থন করেন না। দেশের সংখ্যালঘুদের ভোট প্যাটার্ন দেখলে বোঝা যাবে তাঁরা মৌলবাদীদের ভোট বয়কটের ডাককে উপেক্ষা করেছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুসলিম দলগুলিকে সমর্থন না করে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির অনুকুলে মতদান করেছেন। সুতরাং সঙ্ঘ পরিবার ও হিন্দুত্ববাদীদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন ঘাটতির ও নিরাপত্তাহীনতার পটভূমিতে সংখ্যালঘু মনস্তত্ত্বকে বুঝতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন কেবল মুসলিমদের মধ্যেই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদী, বৌদ্ধ ধর্মমতের মধ্যেও আছে। সেগুলির কোনোটাই সমর্থনযোগ্য নয়। এগুলি সব সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। কোনও ধর্মেই এদের মান্যতা নেই। কেননা সন্ত্রাসবাদীরা সন্ত্রাসবাদীই। এদের কোনও ধর্ম হয় না।
প্রাসঙ্গিক যে কথা ভাবতে হবে
খুবই আশার কথা যে আমাদের দেশের বড় অংশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, কাশ্মীরের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করেনি। পহেলগামের ঘটনায় আদিল হোসেন শাহ নিজের জীবন দিয়েছেন, সেনা জওয়ান নদীয়ার ছেলে ঝন্টু আলি শেখ দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, কাশ্মীরের গণতান্ত্রিক সংখ্যালঘু জনগণ পথে নেমে সন্ত্রাসবাদীদের ধিক্কার জানাচ্ছেন, তাঁরাই আহতদের পিঠে বয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। বর্তমানে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি ধ্বংসের সামরিক অভিযানে হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ-জৈন-নাস্তিক সহ ভারতবর্ষের সব ধর্মের সেনারাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছেন।
তাই ভারতের মুসলিম জনগণকে সঙ্ঘ পরিবারের কাছে ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে হবে না। তবু বলি বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগণকে অনেক বেশি যুক্তিবাদী হতে হবে। আজকের সময়ে ভারতে তো নয়ই, বিশ্বেও মুসলিম ঐক্যের ভাবনা কিংবা প্যান ইসলামিক মুসলিম বিশ্ব গড়ার ধারণা মোটেই বাস্তবসম্মত নয় এবং তা সমর্থনযোগ্যও নয়। মৌলবাদীদের বা তাঁদের মুখোশধারীদের খপ্পরে না পড়ে মুসলমানদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ, সহিষ্ণুতা ও স্বনির্ভরতার এবং যুক্তিবোধের উপর জোর দিতে হবে। তাঁদের বুঝতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের ঐক্যই হলো দেশের সংখ্যালঘু জনগনের নিরাপত্তার সব চেয়ে বড় গ্যারান্টি। মুসলিম ঐক্যের স্লোগান উঠুক এটা সঙ্ঘ পরিবার চায়, তাহলে তথাকথিত হিন্দু ঐক্যের স্লোগান ভিত্তি পাবে।
মনে রাখা দরকার, রুটি রুজির লড়াই মানুষের ঐক্য গড়ার বড় হাতিয়ার। সাম্রাজ্যবাদ চায় শোষণকে অব্যাহত রাখতে, ধর্মের নামে বিভাজনকে বাড়াতে। সাম্রাজ্যবাদ তাই মৌলবাদকে সব সময় মদত জোগায়। উভয়েই পরষ্পরের পরিপূরক।
আরও মনে রাখা দরকার, মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনগুলির নেতৃত্বে আসীন হয়ে আছে অর্থনৈতিক দিক হতে উচ্চ মধ্যবিত্ত যে অংশটি, নব্য ধনী যে অংশটি মুসলিম সমাজে তৈরি হয়েছে তারাই। এই অংশের মধ্যে গড়ে উঠা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করতে এরা মুসলিম মৌলবাদী ধারণাকে লালন পালন করে, ব্যবহার করে। মুসলিম সৌভ্রাতৃত্বের নামে তাঁদের বিভ্রান্ত করে। মুসলিম সমাজের শিক্ষাগত, স্বাস্থ্যগত পশ্চাৎপদতা, অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা নিয়ে এদের কোনও মাথাব্যথা নেই। এই সব ধর্ম ব্যবসায়ীরা বাগাড়ম্বর করে যে ইসলামের উপর আঘাত এলে কোনও কাফেরকে ছাড়া হবে না। এরা জেহাদ জারি রাখার আহ্বান জানায়। আর নিজেরা নিরাপদে জীবন কাটায়, রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাঙ্ক বানিয়ে দর কষাকষি করে। ধর্মীয় রাষ্ট্র কখনও মুক্তি বা শান্তি আনতে পারে না। তাহলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আরব দুনিয়ায়, মধ্যপ্রাচ্যে, আফ্রিকার কিছু দেশে এত হানাহানি হতো না, এত দারিদ্র্য থাকত না।
তাই ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন সমূহের বিপজ্জনক অবস্থানের বিরুদ্ধে আমাদের সরব হতে হবে। মেহনতি মানুষের ঐক্যকে রক্ষা করতে হবে। তবেই পহেলগামেরর ঘটনা এবং চলমান ভারত-পাক সামরিক সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে তোলা উগ্র জাতীয়তাবাদী উন্মাদনাকে যুক্তি জালে ছিন্ন করতে পারা যাবে। আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে যারা কাশ্মীরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থেকেও ওখানকার মানুষ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এবং ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে বিভক্ত করার শক্তি সব রকমের মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের।
Comments :0