editorial

সংসদের বিশেষ অধিবেশন কবে?

সম্পাদকীয় বিভাগ

সিপিআই(এম), কংগ্রেস সহ প্রায় সমস্ত বিরোধী দল পহেলগামে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতা এবং ভারত-পাক সামরিক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানালেও মোদী সরকার কোনোরকম উচ্চবাচ্য করছে না। বিষয়টি যেহেতু পক্ষ-বিপক্ষের দলীয় রাজনৈতিক ইস্যু নয়, বরং সমগ্র দেশ ও জাতির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় তাই সকলেই এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে কোনও দল বা জোট সরকার পরিচালনা করে বটে তার অর্থ এই নয় যে দেশটা তাদের জমিদারি হয়ে গেছে আর দেশের নাগরিকরা বিবেচিত হবেন তাদের খাস তালুকের প্রজা হিসাবে। সরকার এবং তার কর্তারা যখন যা ইচ্ছে করবেন, খেয়াল-খুশি মতো চলবেন সংসদীয় গণতন্ত্র সেটা অনুমোদন করে না। সরকার যাই করুক, সেটা ঠিক হোক বা বেঠিক সংসদে তাদের জবাবদিহি করতে হয়। কারণ সংসদে থাকেন দেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। সংসদে জবাবদিহি মানে জনগণের কাছে জবাবদিহি।
এটা ঠিক রাষ্ট্রে নিরাপত্তার স্বার্থে এমন কিছু বিষয় থাকে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত, যেগুলি অত্যন্ত গোপনীয় এবং স্পর্শকাতর। তেমন কিছু ছাড়া সবটাই সরকার জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে বাধ্য। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতাই গণতন্ত্রের প্রধান প্রতিফলন। দেশটা যেহেতু শাসক দলের একার নয়, সব দলের, সব মানুষের তাই দেশের যাবতীয় ভালো-মন্দ অকপটে জনগণের কাছে স্পষ্ট করতে হয়। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী বারবার সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়ে গেছে, কাশ্মীরে শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে বলে দে‍‌শের মানুষকে আশ্বস্ত ও উদ্বুদ্ধ করার পরও পহেলগামে কেন এবং কীভাবে সন্ত্রাসবাদী হামলা হলো তার কৈফিয়ত তো মোদী-শাহকে দিতে হবে। যে ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হলো তার দায়ও তো মোদী সরকারের। সবচেয়ে বড় কথা তিন লক্ষাধিক নিরাপত্তা রক্ষী বেষ্ঠিত কাশ্মীরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে পাক সন্ত্রাসবাদীরা এল কি করে? ২৬জনকে হত্যা করে ফিরেই বা গেল কি করে! দেশবাসীকে সেটা তো জানাতে হবে। হামলার পর তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও তিন সন্ত্রাসবাদীর হদিশ মিলল না, কোথায় ব্যর্থতা কোথায় অপদার্থতা সেটাও বলতে হবে।
পহেলগামের পর যখন দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে, সীমান্তে চলছে জোর তৎপরতা তখন দু’দুবার সর্বদলীয় সভা ডেকেও প্রধানমন্ত্রী সেখানে হাজির হলেন না কেন? কি এমন রাজকার্যে তিনি ব্যস্ত ছিলেন যে সর্বদলীয় সভা তাঁর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। তবে কি লোক দেখানোর জন্য এবং বিরোধীদের হাতে ললিপপ ধরিয়ে দেবার জন্য সর্বদলীয় সভা ডাকা হয়েছিল? বিরোধীদের তরফ থেকে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার পূর্ণ স্বাধীনতা সরকারকে দিয়েছিল বিরোধীরা। সরকার তার ন্যূনতম মর্যাদাও দিল না কেন? পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান অপারেশন সিঁদুর শুরু করে চারদিনের মাথায় আচমকা বন্ধ করে দিতে হলো কেন? কার চাপে তা করতে বাধ্য হলেন মোদীরা। সবচেয়ে বড়কথা সংঘর্ষ বিরতির ঘোষণা ভারতের জনগণকে শুনতে হলো আমেরিকার রাষ্ট্রপতির মুখ থেকে। শুধু শোনা নয় টানা চার-পাঁচ দিন ধরে ট্রাম্প লাগাতার বলে গেছেন তাঁর কথায়, তাঁর মধ্যস্থতায় তাঁর চাপে, তাঁর হুমকিতে ভারত ও পাক সরকার যুদ্ধ‍‌ বিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি নাকি দু’দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর লোভ দেখিয়েছেন। আবার বাণিজ্য বন্ধের হুমকিও দিয়েছেন। কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা নিতে চেয়েছেন। নিরপেক্ষ কোনও জায়গায় দু’দেশের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করবেন বলেছেন। এমনকি দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীদের নৈজভোজের আয়োজনও করবেন বলেছেন। অর্থাৎ ট্রাম্প দুনিয়াকে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন কাশ্মীরকে ঘিরে পাক-ভারত সংঘাতের মধ্যমণি তিনি। মোদী-শরিফরা নিমিত্ত মাত্র। ট্রাম্পের এমন অতি সক্রিয়তা, ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে প্রবলভাবে নাক গলানো সত্ত্বেও মোদীদের নীরবতা, প্রতিবাদহীনতা গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে দেশের অবস্থান কেন প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে তুলে ধরলেন না। কেন ট্রাম্পের অনধিকার চর্চা ও অনাহুত নাক গলানোর বিরুদ্ধে সরব হলেন না মোদী। এই প্রশ্ন প্রতিটি নাগরিকের, জবাব তো প্রধানমন্ত্রীকে দিতেই হবে এবং দিতে হবে সংসদে দাঁড়িয়ে। পালিয়ে বাঁচা যাবে না।

Comments :0

Login to leave a comment