উন্মত্ত বিক্ষোভকারীদের হামলায় সাংবাদিকের মৃত্যুতে কাঠমান্ডুতে প্রতিবাদ জানালেন সংবাদকর্মীরা। শনিবার মইতিঘরের রাজপথে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে একদল বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ চালাচ্ছে নেপালের বিভিন্ন অংশে। বিক্ষোভকারীরা, শুক্রবার, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দপ্তরে আক্রমণ চালায়। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভের সময় হামলার শিকার হন সংবাদকর্মীরা। নেপালের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মী সুরেশ রজকের দগ্ধ দেহ পাওয়া যায় তিনকুনের একটি বহুতলের তিনতলায়। সংবাদকর্মীরা বলেছেন, লাইভ স্ট্রিম চালানোর সময় হত্যা করা হয় তাঁকে। আরেক চিত্র সাংবাদিক রাজেশ গুরুঙও আহত হয়েছেন। শুক্রবার মইতিঘরে প্রতিবাদ মিছিল বের করে ফেডারেশন অব নেপালি জার্নালিস্টস।
নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী এই সাংবাদিকের পাশাপাশি আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বিক্ষোভের জেরে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। ৫০ জন পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন। তিনকুনে এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে জড়ো হন বিক্ষোভেকারীরা। পাথর ছোঁড়ে, একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে আক্রমণ করে, যানবাহনে আগুন দেয় এবং দোকানপাট লুট করার পর উত্তেজনা দেখা দেয়। ১০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে নেপাল প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসনের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, শনিবার সকাল ৭টায় বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবারের বিক্ষোভের সময় বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া এবং যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ১০৫ জন বিক্ষোভকারীকে পুলিশ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির সাধারণ সম্পাদক ধাওয়াল শমসের রানা এবং দলের কেন্দ্রীয় সদস্য রবীন্দ্র মিশ্র। এই রাজনৈতিক দলই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের একাংশ প্রথমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দপ্তর লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে বলে জানাচ্ছে নেপালের একাধিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান। এরপর আগুন ধরিয়ে দেয়।
নেপালে গণ অভ্যুত্থানের পথে রাজতন্ত্রের অবসান করে সাধারণতন্ত্র ঘোষণা হয়েছিল। নেপালের বামপন্থী শক্তিগুলি নেতৃত্ব দিয়েছিল সেই লড়াইয়ে। কিন্তু রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পক্ষে বিভিন্ন শক্তির পিছনে মদত দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়েই। পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, ২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর থেকে ১৩বার সরকার বদল হয়েছে। এই অনিশ্চয়তাকে ব্যবহার করতে সক্রিয় রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পক্ষে বিভিন্ন শক্তি। দুর্নীতি ঘিরে ক্ষোভও বিক্ষোভের আংশিক কারণ।
নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের ছবি নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জ্ঞানেন্দ্র রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আহ্বান জানান।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী এবং নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (সংযুক্ত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)’র চেয়ারপার্সন কেপি শর্মা ওলি জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা বৈঠক ডেকে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
Nepal Unrest
রাজতন্ত্র ফেরাতে উন্মত্ত বিক্ষোভে কাঠমান্ডুতে নিহত সাংবাদিক, প্রতিবাদ

×
Comments :0