অন্যকথা
বিশ্ব পরিবেশ দিবস — কিছু কথা, কিছু প্রশ্ন
পল্লব মুখোপাধ্যায়
মুক্তধারা
পরিবেশকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার কথা শুধুমাত্র কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। এ
অভিযোগ অনেকদিন ধরেই দানা বাঁধছে। আর বিশেষ বিশেষ দিন উদযাপনের জন্য
স্লোগান তৈরি হয়। কিন্তু আদতে কি আদৌ কোনও ফল পাওয়া যায়? মানুষ যত উন্নয়নের
পথে এগোচ্ছে, ততই নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি শোনা
গেলেও একের পর এক গাছ কেটে মাথা তুলছে আকাশছোঁয়া বহুতল। মানুষ এবং পরিবেশের
মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃতি ছাড়া জীবন সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষ এই প্রকৃতির
ক্ষতি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। অজান্তে নয়, জেনে বুঝেই ঘটছে সব কিছু। আর
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে, তারও সম্মুখীন হতে হচ্ছে, হবে মানুষকেই। আর মানবজাতির
এই গাফিলতির ফল ভুগতে হচ্ছে, হবে অন্যান্য প্রাণীকূলকেও। একটি সুস্থ জীবনের
জন্য প্রকৃতির সুরক্ষা এবং পরিবেশ রক্ষা করা আবশ্যিক। এই লক্ষ্যে প্রতি বছর ৫
জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয় সব দেশেই। এই নির্ধারিত দিনে পরিবেশ সম্পর্কে
মানুষকে সচেতন করা হয়। নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু তাতেও কি
সচেতন হন মানুষ?
ভারতসহ গোটা বিশ্বে ৫ জুন পরিবেশ দিবস (World Environment Day) পালিত হয়। এই
উপলক্ষ্যে সব দেশ বিভিন্নভাবে পরিবেশ সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করে।
১৯৭২ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন শুরু হয়। রাষ্ট্রসংঘ ১৯৭২ সালের ৫ জুন
প্রথম পরিবেশ দিবস উদযাপন করে, তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রতি বছর এই
দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। রাষ্ট্রসংঘ বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিলেও
পরিবেশ দিবস প্রথম পালিত হয় সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে। প্রথম পরিবেশ
সম্মেলন ১৯৭২ সালে স্টকহোমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে ১১৯ টি দেশ অংশগ্রহণ
করেছিল। বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের পিছনে উদ্দেশ্য হল, পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের
মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রকৃতিকে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য রোজই হতে পারে
পরিবেশ দিবস। কিন্তু প্রকৃতি না বাঁচলে মানবজাতিই যে বিপন্ন হবে তার গুরুত্ব এবং এ
নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোই মূলত ৫ জুনের উদ্দেশ্য।
শিল্পায়ন এবং নগরায়নের জেরে গোটা বিশ্বজুড়েই পরিবেশের দফারফা। বিশ্ব উষ্ণায়ণ
ঘুম ছুটিয়েছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের। যে ভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, ভূগর্ভে সঞ্চিত
জল ও জ্বালানি তলানিতে এসে ঠেকেছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার সামনে যে
বিশাল সংকট এসে উপস্থিত হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব
আমাদের সবার ওপরেই বর্তায়। একটু চেষ্টা করলেই পরিবেশ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য
অবদান রাখতে পারি আমরাও।
প্রায় দশ লক্ষ জীববৈচিত্র বিলুপ্তির পথে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
সময় আসেনি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে
খাদ্য, জল ও খনিজ দ্রব্যাদির জোগান ঠিক রাখে জীববৈচিত্র্য । পাশাপাশি জলবায়ুর
পরিবর্তন, দূষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং পৌষ্টিক উপাদানগুলি সঠিকভাবে
পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলায় গোটা বাস্তুতন্ত্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা ভীষণ
জরুরি। এবারের পরিবেশ দিবসে অবশ্যই একটি গাছ লাগিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে
সাহায্য করুন। তবেই মানবজাতি হবে সুরক্ষিত।
বিশ্বে প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়ছে। এই ক্রমবর্ধমান দূষণের কারণে প্রকৃতির অবস্থা
দিনের পর দিন শোচনীয় হয়ে উঠছে। আর সেই প্রকৃতিকে বাঁচানোর লক্ষ্যে পরিবেশ দিবস
উদযাপন শুরু হয়, যাতে মানুষ পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। প্রকৃতিকে দূষণের
হাত থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটি
বিশেষ থিম থাকে। সেই থিমের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিরোধের দিক উঠে আসে।
এই বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের স্লোগান "আমাদের জমি"। এই স্লোগানের অধীনে
ভূমি পুনরুদ্ধার, মরুকরণ এবং খরা প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে। তবেই সুরক্ষিত
হতে পারে আমাদের ভবিষ্যৎ। সৌদি আরব এবছর গোটা দুনিয়াজুড়ে বিশ্ব পরিবেশ
দিবসের উদযাপনের আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে।
Comments :0