CRICKET COMMERCIALISATION

অতি বাণিজ্যে আহত ক্রিকেট!

খেলা বিশেষ বিভাগ

CRICKET COMMERCIALISATION

অনিন্দ্য হাজরা
 

অতি বাণিজ্যেই কী ভারতে জৌলুস হারিয়েছে একদিনের ক্রিকেট? ২০২৩ একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামে হাল দেখে উঠছে এমনই প্রশ্ন। 
৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। উদ্বোধনী ম্যাচ হয় গুজরাটের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। ১ লক্ষ ৩২ হাজার দর্শকের স্টেডিয়ামে উপস্থিতির হার ছিল ২০ থেকে ৩০ হাজার। ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট দুই দলের ম্যাচে এই হাল হলে, বাকি ম্যাচগুলিতে কী অবস্থা হতে পারে, তা স্পষ্ট হয়ে যায় সেখানেই। 
দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ হলেও পাড়ায় পাড়ায় প্রিয় দলের সমর্থনে পতাকা, কিংবা জাতীয় দলের জার্সি কেনার হিড়িক চোখে পড়ছে না। এক কথায় বিশ্বকাপ জ্বরের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। 
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সারা বছর ধরে ক্রিকেটের তিনটি ফর্ম্যাট মিলিয়ে অজস্র ম্যাচ খেলতে হয় বিরাট কোহলিদের। ক্রিকেটকে অত্যধিক হারে ব্যবহার করে বিপুল অর্থ লাভ করে বিসিসিআই। মুনাফা করে আইসিসি’ও। আর কয়েক সপ্তাহ বাদে বাদে ক্রিকেট দেখতে পাওয়ায় বিশ্বকাপের ‘ক্রেজ’ নষ্ট হয়েছে। 
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ এবং ২০২৩ পুরুষদের একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাঝেই হয়েছে ৩টি বিশ্বকাপ। ২০২২ সালে হয়েছে পুরুষদের টি-২০ বিশ্বকাপ, এবং মহিলাদের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। ২০২৩ সালে হয়েছে মহিলাদের টি-২০ বিশ্বকাপ। এরমাঝে ভারতীয় দলকে খেলতে হয়েছে এশিয়া কাপ, আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সিরিজও। এছাড়াও রয়েছে ২ মাস ধরে চলা আইপিএল। 
প্রায় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ক্রিকেট দেখছেন দর্শক। তাই বিশ্বকাপ নিয়ে বাড়তি আগ্রহ না থাকাই স্বাভাবিক। 


এই যুক্তিকে পোক্ত করছে ভারত পাকিস্তান ম্যাচ। নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে হওয়া এই ম্যাচে ১ লক্ষের বেশি দর্শক ছিল। মোবাইলে খেলা দেখেছেন সাড়ে তিন কোটি মানুষ। ভারত পাকিস্তান ম্যাচ নিয়মিত না হওয়া, এবং পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা আইপিএলে না খেলার ফলে এই ম্যাচ নিজের অনন্যতা টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। একই অঙ্কে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচেও মাঠ ভরিয়ে ছিলেন দর্শকরা। 
পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরাট কোহলিও। ২০২০ সালে ভারত-নিউজিল্যান্ড টি-২০ সিরিজের সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যে মনে হচ্ছে আমরা এক দেশের স্টেডিয়াম থেকে অপর দেশের স্টেডিয়ামে সরাসরি চলে যাচ্ছি। মাঝে কোনও অবসর নেই।’’
ভারতে হওয়া বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ তৈরি না হওয়ার পিছনে পিচেরও ভূমিকা রয়েছে। পাটা পিচে স্পিনের জাল তৈরি করতে পারলে ভালো। নইলে জোরে বোলারদের বধ্যভূমি তৈরির যাবতীয় উপাদান মজুত ভারতের পিচগুলিতে। তারফলে খেলাও হয়ে গিয়েছে গতে বাধা। 
সচীন টেন্ডুলকরও বলছেন, ‘‘একদিনের ক্রিকেট ছকে বাধা হয়ে গিয়েছে। ম্যাচে কোনও অনিশ্চয়তা নেই। বিশেষ করে ১৫ ওভার থেকে শুরু করে ৪০ ওভার অবধি খেলা খুবই বিরক্তিকর। তারফলে ‘মোমেন্টাম’ হারাচ্ছে একদিনের ক্রিকেট।’’
একদিনের ক্রিকেট ৭ ঘন্টা দীর্ঘ। নিয়মতি ক্রিকেট দেখার ফলে ৭ ঘন্টা ধরে ম্যাচ দেখার আগ্রহ অনেক দর্শক হারিয়ে ফেলছেন। এই যুক্তিতেই অলিম্পিক এবং এশিয়াডে টি-২০ ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। 
যদিও এর পালটা যুক্তি রয়েছে। একাংশের বিশেষজ্ঞ বলছেন, যে কোনও খেলার মূল উপাদান হচ্ছে তার অনিশ্চয়তা। অনিশ্চয়তাই দর্শককে মাঠে টেনে আনে। টেস্ট ক্রিকেট এখনও সেই উপাদান বজায় রাখতে সফল হয়েছে বলেই ৫ দিনের খেলা দেখতেও মানুষ মাঠে আসেন। টি-২০’র মূল উপাদান হল অনিশ্চয়তা। এর এখানেই মার খাচ্ছে একদিনের ক্রিকেট। ঠিক যেমনটা বলেছেন শচীন তেন্ডুলকর।

Comments :0

Login to leave a comment