WEST BENGAL HIGHER EDUCATION

সর্বনাশ হচ্ছে বাংলার, উপাচার্য নিয়ে মমতা-বোস কাজিয়ায় মন্তব্য চক্রবর্তীর

রাজ্য

CPIM BJP RSS TMC WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS HIGHER EDUCATION WEST BENGAL উপাচার্য নিয়োগ জটিলতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ব কায়েমের জন্য লড়ে যাচ্ছেন রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী। এই লড়াইয়ের ফলে বাংলার সর্বনাশ হচ্ছে। গোটা দেশের কাছে বাংলার মান-মর্যাদা মাটিতে মিশে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।

তিনি বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের বোঝা উচিত বাংলার ক্ষতি হচ্ছে। বাংলার মানুষ এই সঙ্কট থেকে মুক্তি চাইছেন।’’ তিনি বলেছেন যে শিক্ষায় এই পরিবেশ আসলে সুবিধা করে দেবে শিক্ষা ব্যবসায়ীদের।

বৃহস্পতিবারও রাজভবন এবং রাজ্যের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বক্তব্য এবং পালটা বক্তব্য দেখা গিয়েছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেছেন, ‘‘রাজ্যের প্রস্তাবিত উপাচার্য পদপ্রার্থীরা দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের হেনস্থা করারও অভিযোগ রয়েছে। তাই রাজ্যের সুপারিশ মেনে চলা হয়নি।’’ 

রাজ্যপালের আরও অভিযোগ, উচ্চশিক্ষা দপ্তর এবং আইএএস আধিকারিকদের হুমকির কারণে তাঁর নিযুক্ত ৫ উপাচার্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি সরাসরি রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘আমি দুর্নীতি মুক্ত ক্যাম্পাস গঠনে কাজ করছি। শেষ না দেখে ছাড়ব না। আসুন সকলে একসঙ্গে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে লড়াই করি।’’

রাজভবন থেকে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে সংঘাতের বার্তা দেওয়া যায় কিনা, সে প্রশ্ন আগেও উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে রাজ্য সরকারের নীতিতে। শিক্ষামহলের আপত্তি অগ্রাহ্য করে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। আদালতে তার জন্য ধাক্কাও খেতে হয়েছে। সেই ঘটনাকে নিজের পক্ষে হাতিয়ার করেছেন সিভি আনন্দ বোস। যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালী চক্রবর্তী ব্যানার্জির নিয়োগ খারিজ হয়েছে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে।

শিক্ষায় এই অরাজকতার প্রতিবাদেইসরব হয়েছে সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, ‘‘সার্চ কমিটি ছাড়াই উপাচার্য নিয়োগ হচ্ছে। সার্চ কমিটি গঠনের আগ্রহ রাজ্য সরকারেরও নেই। রাজ্যপালও একইভাবে সার্চ কমিটি গঠনের কোনও উদ্যোগ নেন না। রাজ্যপাল নিজের মতো এবং মুখ্যমন্ত্রী নিজের মতো করে উপাচার্য নিয়োগ করতে চান।’’ 

খেদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘এই লড়াইয়ের ফলে বাংলার সর্বনাশ হচ্ছে। গোটা দেশের কাছে বাংলার মান-মর্যাদা মাটিতে মিশে যাচ্ছে। এটা মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের বোঝা উচিত। বাংলার মানুষ এই সঙ্কট থেকে মুক্তি চাইছেন।’’ 

শিক্ষা মহলের মতে, রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি, নবান্ন এবং রাজভবনের দ্বৈরথে নাভিশ্বাস উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ৫০ শতাংশ অধ্যাপকপদ শূন্য। দীর্ঘদিন নিয়োগ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুল এবং কলেজেও একই অবস্থা।

চলতি মাসের ৪ তারিখ রাজভবনের তরফে একটি সার্কুলার জারি হয়েছে। সার্কুলারে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসার হলেন উপাচার্যরা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা কেবলমাত্র উপাচার্যের নির্দেশ মেনে চলবেন। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মানার কোনও দায়বদ্ধতা তাঁদের নেই। 

আবার মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি হুমকির সুরে বলেছেন, ‘‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন উনি। এটা আমরা কোনওভাবেই হতে দেব না। দরকার হলে রাজভবনের সামনে আমি ধরনা দেব। আর যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রাজ্যপালের কথা শুনে চলবে সেখানে আমি আর্থিক বাধা তৈরি করব। আমি এই ক্ষেত্রে একটুও নমনীয় নই।’’

রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের কথা বললেও, দেশের অন্যত্র ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার জেএনইউ ক্যাম্পাসে এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন গবেষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এবিভিপি’র বিরুদ্ধে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভোট নিয়েও এবিভিপি’র বিরুদ্ধে ছাত্রীদের কলেজে ঢুকে তান্ডব চালানোর অভিযোগ রয়েছে। 

সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘রাজ্য এবং রাজ্যপাল মিলিত ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার ১২টা বাজাতে উঠে পড়ে লেগেছে। একের পর এক স্কুল বন্ধ হচ্ছে। স্কুল আছে। কিন্তু সেখানে শিক্ষক নেই। পড়াশোনার পরিবেশ বজায় রাখার কোনও উদ্যোগ রাজ্যের তরফে নেওয়া হয়নি। একসময় স্কুল স্তরে পড়ুয়ার চাপ সামলানো যেত না। কিন্তু সরকারের ভুল নীতির ফলে এখন পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তারফলে স্কুলগুলিতেও পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে।’’ 

তিনি আরও বলেন, ‘‘এই অপদার্থতা সরকারের। বহু স্কুল ১-২জন শিক্ষক-শিক্ষিকার ভরসায় চলছে। সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ব ‘কমপ্রোমাইজ’ করছে। সরকার চাইছে ডামাডোল চলুক। তাতে ব্যবসায়ীদের হাতে শিক্ষা ব্যবস্থা তুলে দিতে সুবিধা হবে। কেন্দ্র সরকারও একই কায়দায় শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে চাইছে। এটা বিপদজ্জনক প্রবণতা।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment