Meenakshi Mukherjee at Kanksa

ভোট লুট রুখার মেজাজেই আছেন গ্রামের মানুষ

রাজ্য

Meenakshi Mukherjee at Kanksa কাঁকসা বিডিও দপ্তরের সামনে গণবিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখছেন মীনাক্ষী মুখার্জি। ছবি : দেবদাস ভট্টাচার্য।

দুর্নীতি হচ্ছে তৃণমূলের ভূষণ। পঞ্চায়েত থেকে কালীঘাট সর্বত্র রমরমা দুর্নীতি। ভাইদের জমি, ভাইপোর কয়লা। নীল সাদা রঙের কারবার, বাড়িতে চলমান সিঁড়ি। নিজের বাড়ির লক্ষ্মীর জন্য সোনার তাল, অন্য বাড়ির লক্ষ্মীর দু’জোড়া কাপড় জোটে না। পঞ্চায়েতে মাতব্বরদের আঙুল ফুলে কলাগাছ। গোরু চোর, বালি চোর তো আছেই। শিকড় থেকে দুর্নীতি উপড়ে ফেলতে হবে। কোমর শক্ত করে রুখে দাঁড়ান। মানুষ ওদের স্বরূপ চিনতে পারছেন। ওরা পুলিশ প্রশাসনের দলদাসদের খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছে। কেউ ওদের বাঁচাতে পারবে না। ওরা ডুববেই। বুধবার কাঁকসায় উপচে পড়া বিক্ষোভ সমাবেশে একথা বলেন যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি।  


এদিন কাঁকসা ব্লকের মানুষ হাজারে হাজারে শামিল হয়ে বিক্ষোভে সোচ্চার হন। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চ, আদিবাসী লোকশিল্পী সঙ্ঘ, সামাজিক ন্যায়মঞ্চ, ছাত্র-যুব-মহিলা ও বামপন্থী গণসংগঠনগুলি একযোগে কাঁকসা বিডিও দপ্তরে গণ বিক্ষোভ ও ডেপুটেশনের ডাক দিয়েছিল। মানুষ এসেছিলেন কাঁকসা, মলানদিঘি, ত্রিলোকচন্দ্রপুর, বনকাঠি, বিদবিহার, আমলাজোড়া, গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রাম থেকে। দলে দলে আদিবাসীরা এসেছিলেন। মহিলারা ছিলেন উল্লেখযোগ্য হারে। ডাক বাংলো এলাকা থেকে মিছিল শুরু হয়। বিশাল মিছিল আছড়ে পড়ে বিডিও দপ্তরে।

 
বিক্ষোভ সভায় ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন খেতমজুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক বীরেশ মণ্ডল, সিআইটিইউ নেতা পঙ্কজ রায় সরকার, কৃষক নেতা রঞ্জিৎ দত্ত, অলোক ভট্টাচার্য প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী আন্দোলনের নেতা ভৈরব টুডু। আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কাঁকসা জুড়ে। প্রকৃত গরিব মানুষের নাম বাদ হয়েছে তালিকায়। চূড়ান্ত দলবাজির তালিকা। পশ্চাদপদ গরিব প্রধান সমগ্র বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের একজনেও নাম নেই আবাস যোজনার তালিকায়! এক বছর হল ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। ১০০ দিনের মজুরি বকেয়া রয়েছে। ‘৪-ক’ ফরম ভরে মানুষ জমা দিয়েছেন জবকার্ডের জন্য। কারো জবকার্ড হয়নি। ১০০ দিনের কাজে সীমাহীন লুট। লুট ও দুর্নীতির জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ১০০ দিনের টাকা দিচ্ছে না বলা হচ্ছে। কিন্তু বিজেপি সরকার লুটেরাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নেয়নি। তৃণমূল বিজেপি’র আপস-সমঝোতার বলি হচ্ছেন কাজ না পাওয়া গ্রামীণ গরিব মানুষ।


এদিন মানুষ বিডিও দপ্তরে এসেছিলেন সাড়ে চার হাজার আবাস যোজনার আবেদন পত্র নিয়ে। নির্ধারিত আবেদন পত্রে ছিল আধারকার্ড, ফটো ইত্যাদি। ছিল তাদের মাথাগোঁজার মাটির ঘরের ছবিও। 
মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, তৃণমূল-বিজেপি সমঝোতা করে একদল মানুষের সামনে গাজর ঝুলিয়ে রেখেছে, আর একদল চোখে ঠুলি পরিয়ে রেখেছে। ওরা মানুষের ভোটাধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়ে কিছু পাইয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করতে চায়। আমরা বলছি, গরিবের হাতে টাকা দিতে হবে। কাজ দিতে হবে। মাথায় ছাদ দিতে হবে। কম্বল, দাদন দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। বিভেদের রাজনীতি দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। এবার ভোট লুট করতে এলে মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলার মেজাজে রয়েছেন। যাদের ভোটলুট রোখার কথা, তারা যদি নিশ্চুপ থাকে, মানুষ চুপ থাকবে না। ভোট লুটেরারা নিজেদের পায়ে বাড়ি ফিরে যাবে, না কারো কাঁধে যাবে, সেই দায়িত্ব প্রতিরোধী মানুষ নেবেন না। 
বীরেশ মণ্ডল বলেন, কাঁকসার মানুষ স্বেচ্ছায় শিল্পের জন্য জমি দিয়েছিলেন। শর্ত ছিল স্থানীয় বেকাররা শিল্পে কাজ পাবে। স্থানীর বেকাররা কাজ পাচ্ছে না। ভিন রাজ্য থেকে বহাল হচ্ছে। চুক্তির অবহেলা দেখেও প্রশাসন নীরব রয়েছে। 


নেতৃবৃন্দ বলেন, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা সহ বিভিন্ন ভাতা নিয়মিত মানুষ পাচ্ছেন না। রেশনকার্ড ও রেশন নিয়ে হয়রান হচ্ছেন মানুষ। গরিব মানুষের বাস্তু জমি বিএলএলআরও দপ্তরের দালালরা জমির চরিত্র বদল করে বনবিভাগের জমি করে দিয়েছে। আদিবাসীদের ৭ শতক বসত জমি নতুন রেকর্ডে এক শতক হয়ে গিয়েছে। ২০ হাজার করে টাকা দিলে জমি সাত শতক হয়ে যাচ্ছে। বিডিও দপ্তর, বিএলএলআরও দপ্তর দালালদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পাথর বসানো মোজাইক করা দোতলা বাড়ির মালিক আবাস যোজনায় বাড়ির টাকা পাচ্ছে। বিডিও দপ্তর ঘিরে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ অবস্থান চলে। রঞ্জিৎ দত্তের নেতৃত্বে ছয় সদস্যর প্রতিনিধি দল বিডিও’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ডেপুটেশন দেন। বিডিও বলেছেন আবাস যোজনার সমীক্ষায় আড়াই হাজার নাম বাতিল হয়েছে। এরা আবাস যোজনার বাড়ি পাবার যোগ্য নয়। 
বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতে কেন একজনেও আবাস যোজনায় নাম নেই? এই প্রশ্নের উত্তরে বিডিও বলেছেন, সমগ্র জেলায় এমন ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে, যেখানে একজনেরও নাম আবাস যোজনার তালিকায় নেই। এই ভুল সংশোধনের চেষ্টা হচ্ছে। ১০০ দিনের বকেয়া মজুরি মেটাতে হবে। ধান কাটা, ধান ঝাড়াই হয়ে গেছে, গরিব মানুষের হাতে কাজ নেই, অবিলম্বে  ১০০ দিনের কাজ চালু করতে হবে। দাবি আদায়ের জন্য ব্লক প্রশাসনকে চারদিন সময় দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হলে এলাকায় এলাকায় এবং প্রশাসনিক স্তরে হবে দুর্বার আন্দোলন। 
 

Comments :0

Login to leave a comment