Budget: effort to save Modi

মোদীর গদি রক্ষায়

সম্পাদকীয় বিভাগ

Budget effort to save Modi ছবি প্রতিকী


ক্রমশ ঝি‍‌মিয়ে পড়া এবং গতিহারা অর্থনীতিতে গতি আনতে অর্থনীতির বুনিয়াদি ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল সেদিকে না গিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে চমক দেখিয়েছেন অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অর্থনীতিকে গতির ট্র্যাকে আনার ব্যবস্থা না করে তিনি নজর দিয়েছে দু’দিন পর দিল্লির ভোটে এবং আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বিহারের ভোটে কীভাবে জেতা যায়। মোদীর নির্দেশনায় নির্মলা যে বাজেট নির্মাণ করেছেন সেটা যতটা না অর্থনৈতিক তার থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক। তাই বাকি সব রাজ্যগুলিকে অগ্রাহ্য করে বিহার ও দিল্লির জন্য দরাজ হস্ত হয়েছেন। তাই বিরোধীদের কেউ কেউ একে বিহার বাজেট বা দিল্লি বাজেট বলতেও ছাড়েননি।
এবারের বাজেট নিয়ে সর্বাধিক আলোচনা হচ্ছে ‘মধ্যবিত্তের কর ছাড়’ প্রসঙ্গ। এমন এক আবহ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে যেন মধ্যবিত্তরা হাতে সোনার হরিণ পেয়ে গেছেন। চাকরিজীবীদের মধ্যে যাদের বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে তাদের আয়কর থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে এই ছাড়ের ফলে বিরাট অংশের মানুষের হাতে বাড়তি অর্থ থাকবে এবং সেটা খরচ করে তারা কেনাকাটি বাড়াবেন। বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়বে। তাতে নতুন বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জোগান নির্ভর বৃদ্ধিকেই অর্থনীতির অভিমুখ করার চেষ্টা করেছে। সেজন্য মানুষের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বাড়িয়ে বেকারি হ্রাস ইত্যাদির দিকে নজর দেয়নি। বিপরীতে কর্পোরেটকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে তাদের মুনাফা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছে এই আশায় যে তারা বিপুল বিনিয়োগ করে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং মানুষের আয় বাড়বে, ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে, বাজারে চাহিদা বাড়বে। বাস্তবে গত এক দশকে মোদী জমানায় কর্পোরেট মালিকরা নানাভাবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেয়ে মুনাফার পাহাড় জমিয়েছে। কিন্তু নতুন বিনিয়োগ করেনি। তাই চাহিদা বৃদ্ধি ভিত্তিক অর্থনীতির পক্ষে জোরালো সওয়াল হতে থাকে। সেই রাস্তাতেই মধ্যবিত্তের সামান্য একটা অংশের জন্য কর ছাড় দিয়ে চাহিদা বৃদ্ধির প্রচার চলছে। বাস্তবে কর ছাড়ের ফলে যে পরিমাণ চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে তাতে অর্থনীতির বিশেষ কোনও সুবিধা হবে না। কেননা, কর ছাড়ে যে পরিমাণ রাজস্ব হ্রাস পাচ্ছে সেটা অন্যান্য সব সামাজিক খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। এতে অর্থনীতির আসলে কোনও ভালো হবে না। তবে এটা দিল্লির ভোটে বিজেপি-কে বাড়তি মাইলেজ দেবে। দেশে সর্বাধিক চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত থাকে দিল্লিতে। তাদের কর ছাড় দিয়ে দিল্লির ভোটে বড় থাবা বসানোর ছক কষেছে কেন্দ্র।
একইভাবে তৃতীয় মোদী সরকারের অস্তিত্ব নির্ভর করছে বিহারের জেডিইউ এবং অন্ধ্রের টিডিপি’র ওপর। এই দুই দলের সঙ্গে জোট করে দুই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আছে। তাই এই দুই রাজ্যকে খুশি রাখা মোদী সরকারের দায়। গত লোকসভা ভোটের পর জুলাই মাসে মধ্যবর্তীকালীন বাজেটে দু’হাতে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অন্ধ্রকে। এবার বিহারের উপর করা হয়েছে বাজেটকে। অন্য রাজ্যের কোনও প্রসঙ্গ নেই নির্মলার বাজেটে শুধু বিহার। নিজেও সেজে এসেছেন বিহারের ঐতিহ্যবাহী মধুবনী শাড়ি পরে। বিহারের গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে বছর শেষে ভোটের দিকে তাকিয়ে। নীতীশ কুমারকে ধরে মোদীরা যদি বিহারে ক্ষমতায় ফিরতে না পারে তাহলে কেন্দ্রে মোদী সরকার টলমল করতে শুরু করবে। তাই দেশের বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে বিহার। মোদীর গদি রক্ষার জন্য।

Comments :0

Login to leave a comment