প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের অধীনে থাকা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তাদের পেশাদারির দক্ষতা ও দায়িত্ব পালনে কতখানি অদক্ষ ও অপদার্থ তা আর একবার প্রমাণ হয়ে গেল আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও অদলবদলের গুরুতর অভিযোগে ধৃত হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং স্থানীয় থানার ওসি সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের জামিন হয়ে যাবার ফলে। ৮ আগস্ট শেষ রাতে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের পর পরদিন সকাল থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ সর্বস্ব পণ করে নেমেছিল যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে। একাজের নাটের গুরু ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ট অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং লালবাজারের বিশ্বস্ত টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। সেদিনের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনায় জলের মতো পরিষ্কার চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে এবং তারপর গোটা ঘটনা ধামাচাপা দিতে ঝড়ের গতিতে নানা জায়গা থেকে ঘনিষ্টবৃত্তের লোকজনদের জড়ো করে ঘটনাস্থলের চরিত্র বদলে ফেলা হয়েছে যাতে কোনও প্রমাণ খুঁজে না পাওয়া যায়। নিয়ম লঙ্ঘন করে ময়নাতদন্তের নামে প্রহসন হয়েছে যাতে দেহ থেকে কোনও প্রমাণ না মেলে। তারপর বেপরোয়া হয়ে দেহ পোড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে যাতে কোনও অবস্থাতেই দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটিত করার সুযোগ না থাকে। ঘটনার গোটা ছবি ও বিবরণ দেখে যে কোনও সচেতন নাগরিকই নিশ্চিতভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে এটা এক নজিরবিহীন নৃশংস ও চরম অমানবিক বর্বরতা। এটা কোনও একজন অপরাধীর কাজ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বড়সড় দুর্নীতি, থ্রেট কালচার, এবং নিখুঁত ষড়যন্ত্র। ধর্ষণ-খুনের ঘটনার কিনারা হলে প্রকাশ্যে এসে যাবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতির মহাভারত। ধরা পড়বে শাসকদলের নেতা, আমলা, পুলিশ সহ বৃহত্তর চুরি-দুর্নীতির চক্র। সেইজন্য উপরওয়ালার পরামর্শে যাবতীয় তথ্য প্রমাণ লোপাট করে নিছক একটি মৃত্যুর ঘটনা বলে চালাতে আদা-জল খেয়ে নেমে পড়ে সন্দীপ-অভিজিৎরা।
সাধারণ মানুষের চোখের সামনে যে ছবি পরিষ্কার, ৯০ দিন পার করেও দেশের সেরা তদন্ত সংস্থা বলে কথিত সিবিআই তা চার্জশিট আকারে হাজির করতে পারলো না। ঘটনার প্রথম তিন-চারদিন রাজ্য পুলিশ তদন্তের যে ছক কষে দিয়েছে এবং সেই মতো একজনকে গ্রেপ্তার করে দায়িত্বে ইতি টেনেছে সিবিআই পরবর্তী ৮৫-৮৬ দিনে তার থেকে এক চুলও এগোতে পারেনি। তদন্তের নামে, জিজ্ঞাসাবাদের নামে বিস্তর লম্ফঝম্ফ করেছে। কিন্তু নিট ফল শূন্য। এটা কি সিবিআই’র ব্যর্থতা? নাকি সেই রাজনৈতিক উপরওয়ালার নির্দেশে খাঁচাবন্দি তোতাপাখি হয়ে থাকা। আর জি করের এই ঘটনা যে কোনও অযোগ্য সংস্থার পক্ষেও কিনারা করা কঠিন কিছু নয় যদি সত্যি সত্যি তারা স্বাধীনভাবে সততার সঙ্গে তদন্ত করে। মোদী জমানায় এরাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে যাবে এমন কোনও ভয়ঙ্কর ঘটনায় সঠিক তদন্তের স্বাধীনতা সম্ভবত নেই সিবিআই’র। যদি থাকত তাহলে সেই ২০১৪ সাল থেকে সারদা চিটফান্ড দুর্নীতি থেকে শুরু প্রায় ডজনখানেক ভয়াবহ দুর্নীতির মামলার দায়িত্ব সিবিআই পেয়েছে তার সব কটাতেই চূড়ান্ত ব্যর্থতা ও অপদার্থতার নজির স্থাপন করতে পারত না। আসলে পিসি-ভাইপো ফেঁসে যাবে এমন কোনও মামলায় সিবিআই-কে তদন্তের স্বাধীনতা দেবে না মোদী সরকার। লাগাম হাতে রেখে শুধু চোর-পুলিশ খেলা চলবে। দিদি-মোদীর সেটিং-য়ের এটাই মহিমা। এরাজ্যের ক্ষমতা দখল নিয়ে দিদি-মোদীর যতই নকল যুদ্ধ চলুক দু’জনেই জানেন মোদীরা দিদিকে ক্ষমতাচ্যুত করবেন সেদিন যেদিন বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারবে, অন্য কোনও দল বা জোট নয়। অর্থাৎ বিজেপি ক্ষমতায় আসতে না পারলে দিদিকে রক্ষা করে যাবে মোদী।
CBI TMC
সেটিং আর ব্যর্থতার নয়া নজির
×
Comments :0