লুটের টাকার হিসাব চাই। তৃণমূল-বিজেপি’র মধ্যে খেলা চলছে। মানুষই সেই খেলা শেষ করবেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দু’দলকেই পরাজিত করতে হবে। সোমবার কাকদ্বীপ এবং বাসন্তীতে পদযাত্রার শেষে এই আহ্বান জানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী এবং শমীক লাহিড়ী।
এদিন কাকদ্বীপে একটি বর্ণাঢ্য পদযাত্রা হয়। পদযাত্রার পরে হয় সভা। সেখানে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)’র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক শমীক লাহিড়ী। বাসন্তী ব্লক অফিসের সামনে হয় সভা। সেখানে বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা সুজন চক্রবর্তী।
এদিন রাজ্যের আরও অনেক জায়গাতেই পদযাত্রা হয়। যেমন বাঁকুড়ার তালডাংরা। সেখানে সন্ত্রাস-জর্জরিত গ্রামে দীর্ঘ পদযাত্রা হয়।
বাসন্তী ব্লক দপ্তরের সামনে আয়োজিত সভায় সুজন চক্রবর্তী বলেন, টাকা রোজগারের জন্য রাজনীতি করে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, এমএলএ’রা। কয়লা, বালি, পাথর, গোরু পাচারের টাকা খেয়েছে। দুষ্কৃতী, অসৎরা তৃণমূলের নেতা। তৃণমূল, বিজেপি’র মধ্যে খেলা চলছে। রাজ্যের মানুষ বুঝতে পারছেন। লুটের ভাগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল, বিজেপি-কে পরাস্ত করতে হবে। বামফ্রন্টের সময়কালে রাজ্যের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ব্যবস্থা, গ্রাম বাংলার উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তৃণমূল একটাও নতুন কোন প্রকল্প করতে পারেনি। সুন্দরবন এলাকার উন্নয়ন, সেতু তৈরি করেছে বামফ্রন্ট সরকার। কাকদ্বীপে শমীক লাহিড়ী বলেন, কয়লা, বালি, পাথর খাদান, চাল, টাকা, আমফানের ত্রিপল, বুলবুলের হাড়িও তৃণমূল খায়। এই লুটেরাদের হটাতে হবে। মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অবাধ লুট রাজ্য জুড়ে। কোন মন্ত্রী, এমএলএ, নেতা কে কতবার বিদেশ গেছে, টাকা পেল কোথা থেকে। আমরা হিসাব করছি। তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীদের অবৈধ টাকা। রাজ্য জুড়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে পদযাত্রা চলছে। কথা একটাই, হিসাব চাই। তৃণমূল পঞ্চয়েত, ব্লক চালিয়েছেন। হিসাব দিতে হবে জনগণকে। গ্রাম সংসদ ডেকে কাজের আগে কি কাজ হবে জানাতে হবে। বিডিও’র উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই সরকার চলে গেলে দু’হাতে হাতকড়া পরবে। পিসি, ভাইপোর কোনও সই নেই। সই আপনার। দেশের আইন অনুযায়ী সিএজি’র কাছে অভিযোগ জানালে দশ বছর পর্যন্ত হিসাব দেখাতে বাধ্য থাকবে সরকার।
এই সভায় তিনি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টি নেতা রাম দাশ, মিত্যেন্দু ভুইঞা প্রমুখ। সভা পরিচলনা করেন নিতাই মণ্ডল। এই সভা থেকে ৭ জনের এক প্রতিনিধি দল ডেপুটেশনে ১৪ দফা দাবিতে বিডিও’র কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন। বাসন্তী ব্লকেও ডেপুটেশন দেওয়া হয়। সোনাখালিতে ব্লক দপ্তরের সামনে সভায় সুজন চক্রবর্তী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন রুহুল আমিন গাজী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, দীপঙ্কর শীল, ইয়ুদ আলি শেখ, সায়ন ব্যানার্জি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন পার্টি নেতা রতন বোস।
অন্যদিকে বাঁকুড়ার তালডাংরায় বিবরদা পঞ্চায়েত এলাকায় কয়েক বছর দমবন্ধ পরিবেশ ছিল। নিষিদ্ধ ছিল লাল ঝান্ডা। সোমবার সকালে বিবরদায় ১৬কিমি পথে লাগাতার স্লোগান চলল। ‘কেন রেগার কাজ পায়না বিবরদার গরিব মানুষ? তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে যাঁরা মিছিল করেছেন সেই কিছু গরিব মানুষকে রেগায় কাজ দেওয়া হলেও কেন তাঁরা আজও মজুরি পেলেন না? কেন নতুন করে কাজ খোলা হচ্ছে না? কোথায় গেল উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা? হিসাব চাই’।
মিছিলে ছিলেন অনেক মহিলা। বিবরদার ছায়া দুলে, যুগদার সূচনা দুলে, কাবেরি মাঝিরা জানান, কম অত্যাচার করেনি মমতা ব্যানার্জির দল। মারধর, ঘর ছাড়া থেকে শুরু করে কাজ কেড়ে নেওয়া কি বাকি রেখেছিল? আমরা দেখলাম এত অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে মানুষের ঘরে কাজ নেই। কেন ওদের কিল মারার গোঁসাই করে রাখব? আমরা এগিয়ে আসতেও তৃণমূলের মস্তানি চুপসে গেল। বিবরদা গ্রামপঞ্চায়েতে কাজ চেয়ে ডেপুটেশন দিলাম। দেখেই তো বুঝতে পারছেন আর আগের বিবরদা এখন আর নেই। যাঁরা একদিন তৃণমূলকে পাশে রেখেছিল পরে পদ্মফুলেও যায় তাঁদের অনেকেই বুঝেছেন দিল্লি আর নবান্নের দুই সরকারই এক। তাঁদের অনেকেও আজ মিছিলে এসেছেন।
মিছিল এগিয়ে গেল হারাকোনা, নতুনগোড়া, ঘাটবাঁধা, ভেদুয়ার দিকে। আদিবাসী এলাকা জগৎপুর, ঢেঙ্গাশিমুল, কালিকাপুরের মানুষজন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। যে গ্রামগুলি দিয়ে মিছিল গেছে সেখান থেকেও বহু মানুষ মিছিলে পা মেলান। পুরো অঞ্চল জুড়ে সোমবার লাল ঝান্ডার লড়াইয়ের বার্তা বয়ে গেল। বিকালে বিবরদায় মিছিল শেষ হয়। সেখানে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
Comments :0