আমেরিকা প্রত্যর্পনের বিরুদ্ধে শেষ চেষ্টা করছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। তাঁকে আমেরিকায় ফেরানোর দাবিতে লন্ডন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি এবং গোপন রাষ্ট্রীয় তথ্য ফাঁসের অভিযোগ এনেছে আমেরিকা। ২০১৯ সাল থেকে লন্ডনের জেলে বন্দী রয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকেই আইনি লড়াই চালাচ্ছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১০ এবং ২০১১ সালে উইকিলিকস মার্কিন সেনাবাহিনীর কয়েক লক্ষ গোপন নথি প্রকাশ্যে আনে। সেই সমস্ত নথি এবং ভিডিও’তে দেখা গিয়েছে, কিভাবে বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং গণতন্ত্র রক্ষার নামে অত্যাচার চালায় আমরিকার সেনা। ২০১০ সালের এপ্রিলে উইকিলিকস ২০০৭ সালের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আনে। সেখানে দেখা যায় অ্যাপাশে হেলিকপ্টার থেকে বাগদাদের জনবহুল এলাকায় হামলা চালাচ্ছে মার্কিন সেনা। সেই হামলায় রয়টার্সের ২জন সাংবাদিক সহ এক ডজনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। তারপরেই গোটা দুনিয়ায় শোরগোল পড়ে যায় উইকিলিকসকে ঘিরে।
উইকিলিকস প্ল্যাটফর্মে আফগানিস্তান যুদ্ধের ৯০ হাজার নথি এবং ভিডিও, এবং ইরাক যুদ্ধের ৪লক্ষ নথি এবং ভিডিও প্রকাশ্যে আনা হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো আড়াই লক্ষের বেশি গোপন নথিও প্রকাশ্যে আনে উইকিলিকস। সেই সমস্ত নথিতে মার্কিন প্রশাসনের কদর্য রূপ সামনে এসে যায়।
মার্কিন প্রশাসনের রোষের মুখ থেকে বাঁচতে ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল অবধি লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ২০১৯ সালে তাঁকে বহিষ্কার করে ইকুয়েডর। সেই থেকে লন্ডনের জেলে রয়েছেন অ্যাসাঞ্জ।
বুধবার অ্যাসাঞ্জ প্রত্যর্পন মামলার শুনানির শেষ দিন। এরপর রায় ঘোষণা হবে। অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা প্রত্যর্পনের বিরোধীতা করেছেন। অপরদিকে মার্কিন প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রশাসনিক তথ্য ফাঁস করেছেন অ্যাসাঞ্জ। বিভিন্ন দেশে মার্কিন সেনার হয়ে কারা কাজ করেন, তাঁদের পরিচয়ও প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি। এরফলে বহু মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীদের তরফে পালটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সামনে আনা হয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমেরিকায় প্রত্যর্পন করা হলে ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে অ্যাসাঞ্জের। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে সেদেশে। এবং মার্কিন আইন অনুযায়ী, একটি মামলার কারাদন্ডের মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তীটির মেয়াদ শুরু হয়।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে প্রত্যর্পনের মামলা খারিজের দাবিতে ইতিমধ্যেই রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স, রাষ্ট্রসংঘের নিপীড়ন সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখার আধিকারিক অ্যালিস জিল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনালের মত সংস্থা সরব হয়েছে। অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে লন্ডন হাইকোর্টের বাইরেও তীব্র বিক্ষোভ হয়েছে এদিন। লন্ডন ছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।
Comments :0