গুজরাটে ভোটে জিতে পর পর তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। তারপর পরপর তিনবার জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা তথা মোদী ঝড়ের দাপট সত্ত্বেও দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে দিল্লি বিধানসভায় জিততে পারেনি মোদীর দল। যে দিল্লিতে স্বৈরচারী কায়দায় একক নেতৃত্ব চালান মোদী সেই দিল্লির বিধানসভা ভোটে বার বার বিজেপি’কে প্রত্যাখ্যান করছেন দিল্লির মানুষ। লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির জনতা বিজেপি’কে ঢেলে ভোট দিলেও বিধানসভায় কাছে ঘেঁষতে দেননি। বিগত পাঁচ দফায় প্রথমে শীলা দীক্ষিতের নেতৃত্বে কংগ্রেস তিনবার সরকার চালিয়েছিল। পরের দু’বার কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে আপ। স্বাভাবিকভাবেই মোদী-শাহদের কাছে এটা নিতান্তই লজ্জার ও অবমাননার। এবার আরএসএস’র পূর্ণ সহায়তায় মোদী বাহিনী জানকবুল লড়াই চালিয়েছিল দিল্লি দখলের লক্ষ্যে। তারা এটাও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল সাধারণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রচারের মাধ্যমে কেজরিওয়ালের দলকে টলানো যাবে না। তাই কয়েক বছর আগে থেকে ছক কষে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে কেজরির সরকারকে কোণঠাসা করার ধারাবাহিক চেষ্টা চালাতে থাকে। দিল্লির মতো মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত শহরে সৎ, শিক্ষিত, সাধারণ ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করা না গেলে কেজরিকে সরানো কঠিন। তাই ইডি-সিবিআই দিয়ে আপ শীর্ষ নেতাদের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রমাণের অভিযান শুরু হয়। স্বয়ং কেজরি, সিসোদিয়া সহ আপ নেতাদের জেলেও পোরা হয়। তার উপর একের পর এক আইন সংশোধন করে দিল্লি সরকারের ক্ষমতা ও অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। দিল্লির উপ রাজ্যপালের ক্ষমতা বাড়িয়ে সরকারকে ঠুঁটো জগন্নাথ করা হয়। একইভাবে দিল্লি পৌর সংস্থার নির্বাচিত পরিচালকের ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়া হয়। সব দিক থেকে চেপে ধরে যে ভাবেই হোক ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে বিজেপি।
বিপরীতে বিরোধী তথা কংগ্রেস ও আপ বিজেপি’কে হারানোর জন্য জোট বাঁধতে চায়নি। ইন্ডিয়া মঞ্চের অংশ হয়ে আপ গত লোকসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে জাট বেঁধে লড়ে ভালো ফল করেছিল। কিন্তু তখনই আপ জানিয়ে দেয় লোকসভায় জোট হলেও বিধানসভায় হবে না। তারা একাই লড়বে। কংগ্রেসও তখন একলা লড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আশ্চর্যজনকভাবে বাংলার তৃণমূল আগবাড়িয়ে আপকে সমর্থন জানায়। ফলে যা আশঙ্কা করা গিয়েছিল সেটাই হয়েছে। বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে বিজেপি’র জয় সহজ হয়ে গেছে। অতীতে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনেও দেখা গেছে আপ এবং তৃণমূল বিরোধী জোটের বাইরে গিয়ে এককভাবে লড়ে বিরোধী ভোট ভাগ করে দিয়ে বিজেপি’কে জেতার রাস্তা করে দিয়েছে। এবার দিল্লিতেও ঠিক সেটাই হয়েছে। এবং তার মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে আপ। এটা ঠিক প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এবং আপ’র সততার ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হওয়া পরাজয়ের একটা কারণ। তবে যদি বিজেপি’কে ঠেকানোর জন্য, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ পাশে সরিয়ে কংগ্রেস-আপ জোট বেঁধে লড়াই করত তাহলে বিজেপি’র পক্ষে জয় হাসিল সম্ভব হতো না। দিল্লির ভোট থেকে ইন্ডিয়া মঞ্চকে ফের শিক্ষা নিতে হবে।
Delhi Elections 2025
দিল্লির ভোট বিরোধীদের শিক্ষা
![](https://ganashakti-new-website.s3.ap-south-1.amazonaws.com/24013/67a99badd405b_1000468047.jpg)
×
Comments :0