Dengue Death

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮০-রও বেশি, প্রশাসনিক গাফিলতি স্পষ্ট

রাজ্য

Dengue Death West Bengal

কোভিডের ক্ষেত্রে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যেভাবে আড়াল করা, ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, ডেঙ্গু সংক্রমণের ক্ষেত্রেও ওই একই চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল সরকার। এই অভিসন্ধির মাশুলই দিতে হচ্ছে রাজ্যচবাসীকে। ডেঙ্গু কার্যত মহামারীর পর্যায়ে যেতে বসেছে। 
গত ৪৮ ঘণ্টায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। সোমবার, কেষ্টপুরের বাসিন্দা নামে নামে এক ব্যহক্তির মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু সংক্রমণে। এছাড়াও মৃত্যু হয়েছে এনআরএস হাসপাতালের বুবাই হাজরা নামে এক সাফাই কর্মীর, মৃত্যু হয়েছে তপসিয়ার মণিকা বেগম ও মুর্শিদাবাদের এক ব্যরক্তির। যদিও ডেঙ্গু সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি বলে অভিমত অনেকেরই। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, নভেম্বর ৮ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যে  ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৮০ জনের বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। উত্তরবঙ্গে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, শুধুমাত্র শিলিগুড়িতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২-এ। আক্রান্তের সংখ্যাও হুহু করে বাড়ছে। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত যুবক বিশ্বজিৎ সরকারের বাড়িতে যান প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তিনি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং আগামী দিনে যে কোনও প্রয়োজনে সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 
ডেঙ্গু পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, কোভিড সংক্রমণের আতঙ্কের মধ্যে আবারও ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে একটা চূড়ান্ত বেগতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে, নির্বিকার সরকার। রাজ্যি স্বাস্থ্য দপ্তর সমানে সঠিক তথ্য আড়াল করা অপচেষ্টায় ব্যরর্থ। এই অপচেষ্টাই পরিস্থিতিকে আরও ভয়ঙ্কর পর্যায়ে নিয়ে চলছে বলে অভিমত জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মীদের। প্রকৃত তথ্য সামনে আসলে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতির নিরিখে সচেতনতা বাড়ে। সেক্ষেত্রে সরকারের তথ্য গোপনে সচেতনতা বিষয়ে একটি গা-ছাড়া ভাব  থাকে মানুষের মধ্যে। এমনই অভিমত কলকাতা মহানগরের বহু বাসিন্দাদের মধ্যে। 
এদিকে, ডেঙ্গু সংক্রমণের নিরিখে রাজ্যোর বিভিন্ন পৌরসভার মধ্যে প্রথম সারিতে উঠে আসছে কলকাতা পৌরসভা। তবে, এবিষয়ে হেলদোল দেখা যাচ্ছে না তৃণমূল পরিচিলিত পৌরবোর্ডের। মেয়র ফিরহাদ হাকিমও তথ্য গোপন করার কৌশল নিয়ে চলছেন। তিনি ভূগোল শাস্ত্রের পাঠ শোনাচ্ছেন। অথচ মহানগর জুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে কলকাতা কর্পোরেশন তাঁর করণীয় কী, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এনআরএস হাসপাতালের সাফাই কর্মী বুবাই হাজরার মৃত্যুতে তাঁর বাসস্থান ট্যাং রার মানুষজন ক্ষোভের সঙ্গেই প্রশ্ন তুলেছেন। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, মহানগরে ডেঙ্গু আক্রান্তের পজিটিভিটি রেট ২৫ শতাংশের কাছাকাছি। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেও ডেঙ্গু সংক্রমণ মোকাবিলায় বিজ্ঞাননির্ভর পদক্ষেপ না নিয়ে তথ্য গোপন করে কোভিড পরিস্থিতির মতো মৃত্যু মিছিল দেখাবে না তো শাসকদল?
এদিকে, শিলিগুড়িতে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শিলিগুড়িতে ফের অল্পবয়সি যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বাড়ছে। তৃণমূল পরিচালিত শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতিবেশী মৃত যুবক বিশ্বজিৎ সরকার গত তিনদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রবিবার শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন। এরপরেই সোমবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪৮ঘণ্টা মৃত যুবকের প্লেটলেট চেক করা হয়নি। চিকিৎসায় গাফিলতির কারণেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। 
এদিন মৃত যুবকের পরিবারের সাথে দেখা করে বেরিয়ে আসার পর প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, মেয়রের ওয়ার্ডেই হোক বা যে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতার ওয়ার্ডেই হোক না কেন, যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কোনও বস্তি নেই। অন্যান্য ওয়ার্ডের চাইতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বলেন, যে সময় তৎপর হয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করার প্রয়োজন ছিল সেই সময়কে অবহেলা করেছে কর্পোরেশনের বর্তমান বোর্ড। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বড় কোনও বিষয় নয়, একেবারে নিচু স্তরে স্বাস্থ্যকর্মী, ওয়ার্ড কমিটি, কাউন্সিলরদের মধ্যে সমন্বয় রক্ষার মধ্যে দিয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব ছিল। যা করা হয়নি। মেয়র সহ মেয়র পারিষদদের আরও তৎপরতার সাথে ডেঙ্গু মোকাবিলায় মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এই সময়কালে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার মধ্যে দিয়েই ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঠেকাতে সাধারণ মানুষের কাছেও আরও বেশি সচেতন হবার আবেদন জানান তিনি।
পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে ভট্টাচার্য বলেন, জ্বর বাড়তে থাকলে রোগীর প্লেটলেট কমতে থাকে। খুব আশ্চর্যজনক বিষয়, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ৪৮ ঘণ্টা প্লেটলেট চেক করা হয়নি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যা করা সম্ভব সেই অনুযায়ী অর্থ সাহায্য করা হবে। মেয়রের প্রতিবেশী দুঃস্থ পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য মেয়রের কাছে আবেদন জানান তিনি। 
চলতি মরশুমের এই সময় পর্যন্ত শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন এলাকাতেও ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় চার সহস্রাধিক। উদ্বেগ বাড়ছে শহর জুড়ে। স্কুল কলেজগুলিতে কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ডেঙ্গুর এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবকেরা তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। 

Comments :0

Login to leave a comment