Digha’s Jagannath Temple

মন্দির উদ্বোধনের জন্য দু’দিন আমিষ নিষিদ্ধ দীঘায়

রাজ্য

মন্দির তৈরির জন্য উচ্ছেদ হওয়া মানুষজন।

রামশঙ্কর চক্রবর্তী ও রাধাগোবিন্দ মান্না: দীঘা
অঘোষিত কার্ফু দীঘায়। হোটেলের বাইরে বেরোতে পারবেন না কেউ। খাওয়া যাবে না মাছ, মাংস, ডিম। স্থানীয় বিধায়ক, রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী, তৃণমূল নেতা অখিল গিরি এই ‘নিরামিষ খাওয়া’র নির্দেশিকার কথা স্বীকার করে মঙ্গলবার বলেছেন,‘‘দু’দিন গেলে আবার আমিষ খাওয়া যাবে।’’ 
তবে দীঘায় এই দু’দিন মদ বিক্রিতে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। 
মন্দির উদ্বোধনের এই ধরনের বন্দোবস্তে আরএসএস খুশি। অসুরের মুখ মহাত্মা গান্ধীর মুখের আদলে বানানো পূজার আয়োজক, হিন্দু মহাসভার রাজ্যের প্রধান চন্দ্রচূড় গোস্বামী জানিয়েছেন যে, তাঁকে দীঘায় মন্দির উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চন্দ্রচূড় গোস্বামী জানিয়েছেন, ‘‘আমি আজ যজ্ঞের সময় ছিলাম মূল মঞ্চে। আমাদের ৬জন ছিল।’’ 
মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন দীঘার জগন্নাথ মন্দির হবে সম্প্রীতির। কিন্তু বাস্তব হলো উলটো। অযোধ্যার রাম মন্দির উদ্বোধনের চিত্রই ধরা পড়ল এখানে। মন্দিরের ১০০ মিটারের মধ্যেই আরএসএস ও তৃণমূলের পতাকার সহাবস্থান করে রয়েছে। মন্দির উদ্বোধন নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেছিলেন,‘‘কোনও বিধর্মী মন্দিরে ঢুকলে তার ছবি দেখতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এই প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আরএসএস’র এক প্রচারকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও জানান,‘‘হিন্দু মন্দিরে হিন্দু ব্যতীত অন্য ধর্মের মানুষজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এমনকি মন্দির সংলগ্ন এলাকাতেও বিধর্মীদের থাকা যায় না। শুভেন্দু অধিকারী সঠিক কথাই বলেছেন।’’
এ’কথাই কার্যত প্রাধান্য পেয়েছে এদিনের সরকারি পদক্ষেপে। হোটেলের বাইরে, সমুদ্র তট পর্যটক শূন্য ছিল। এমনকি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও নির্দিষ্ট একটি সময়ের পরে বাড়ির বাইরে থাকা নিষেধ ছিল। প্রশ্ন একটাই হিন্দু এবং অ-হিন্দুদের মধ্যে এমন বিভাজনের ক্ষেত্র প্রকাশ্যে শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে বলিয়ে আদতে রাজ্য সরকারের সুবিধা করে দিয়েছে কি আরএসএস? ঘটনাক্রম তাই বলে। নির্দিষ্ট দর্শক ও আমন্ত্রিতদের নিয়ে মন্দির উদ্বোধনের আগের দিনের যজ্ঞর পর্ব সম্পন্ন করতে চেয়েছে সরকার। যেখানে সাংবাদিকদেরও গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত। মন্দিরের ভেতরের ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আইপ্যাকের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে। এই প্রসঙ্গেই কথা হচ্ছিল ম্যানেজমেন্টের একজনের সঙ্গে। রৌশন নামের ওই ব্যক্তির বাড়ি বিহারে। এক সপ্তাহ আগে থেকে দীঘায় পৌঁছেছেন তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা। অনুষ্ঠান পরিচালনা, প্রচার সবটাই তাঁদের দায়িত্বে। আলোচনা প্রসঙ্গে জানা গেল এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের সাতজন সদস্য অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে ছিলেন।
এদিনের দীঘায় দুটি ক্ষেত্র স্পষ্ট হয়েছে। এক, আরএসএস’র ভাবধারাতেই অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়েছে। দুই, মন্দির চত্বরে মুখ্যমন্ত্রীর থাকাকালীন কোনও স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটকদের ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। দীঘার কয়েকটি হোটেলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল মঙ্গল ও বুধবার হোটেলগুলিতে আমিষ রান্না বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূল পরিচালিত নবদ্বীপ পৌরসভার এমন ফতোয়া জারি করেছিল দোলের সময়। দীঘার ক্ষেত্রে কারা এমন নির্দেশ দিল? উত্তরে হোটেল কর্মীরা জানান রবিবার কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের সরকারি লোক পরিচয় দিয়ে জানিয়ে গেছে মন্দির উদ্বোধন আছে তাই মাছ, মাংস, ডিম সহ আমিষ রান্না করা যাবে না। মুসলিম পর্যটকরা যদি হোটেলে থাকেন তাদের সকাল দশটার পর হোটেল থেকে বেরোনো যাবে না।  যদিও এমন কোনও লিখিত নির্দেশ দীঘা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। তাহলে এমন নির্দেশ দিল কারা? অন্যদিকে মন্দির তৈরির জন্য উচ্ছেদ হওয়া মানুষজন, দোকানদাররা যাতে কোনোভাবেই বিক্ষোভ দেখাতে না পারে সেই আশঙ্কাতেই স্থানীয়দের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মন্দির চত্বরে যেতে দেওয়া হয়নি। এমন আবহে আতঙ্কিত হয়ে বহু পর্যটক হোটেল ছেড়েছেন আগেই। এদিনের দীঘা ছিল পর্যটক শূন্য। তবে তৃণমূল কর্মীদের দলীয় পতাকা বেঁধে দীঘায় ঘুরে বেড়ানো নজরে পড়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment