ডা. উত্তম দেব
১৯১৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিক দন্ত-চিকিৎসা এবং শিক্ষাদান শুরু করেন সে মানুষটি, তাঁর নাম রফিউদ্দিন আহমেদ, যাকে সবাই ডাঃ আর আহমেদ নামে চেনে। তিনি বিদেশ থেকে দন্ত শিক্ষার ডিগ্রি অর্জন করেন কৃতিত্বের সাথে, যখন পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে দাঁতের চিকিৎসা ছিল প্রায় পুরোটাই ‘হাতুড়ে’দের নিয়ন্ত্রণে। চিকিৎসা বলতে ক্লোরোফর্ম অথবা নাইট্রাস অক্সাইড বা লাফিং গ্যাস ব্যবহার করে দাঁত তুলে ফেলা। আমেরিকা থেকে দন্ত-শিক্ষা এবং ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে ডাঃ আহমেদ মানুষের মুখমণ্ডল ও দাঁতের সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। বউবাজার অঞ্চলে তিনি নিজের Dental Clinic স্থাপন করে আধুনিক দন্ত-চিকিৎসার যাত্রা শুরু করেন এই কলকাতায়, যা সমস্ত ভারতবর্ষে ছিল প্রথম আধুনিক দন্ত চিকিৎসার কেন্দ্র। তার দক্ষতা, মিশুকে স্বভাব এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্য অচিরেই তিনি কলকাতার মেডিক্যাল সোসাইটিতে সমাদৃত হন। মেধাবী রফিউদ্দিন আহমেদ বুঝতে পারেন এই বিরাট দেশে দন্ত চিকিৎসার প্রসার জরুরি। একটি মাত্র চেম্বার থেকে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেই সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার একটি প্রতিষ্ঠান, যা থেকে তৈরি হবে নতুন নতুন দাঁতের ডাক্তার। তাই তিনি ১৯২০ সালে নিজের চেম্বারেই তৈরি করলেন ‘Calcutta Dental College’। যা সেই সময়ে জাপানের টোকিও শহর ছাড়া সমগ্র এশিয়ায় আধুনিক ভাবনায় সম্পৃক্ত দন্ত চিকিৎসকার প্রথম চারা গাছ। এই কারণেই তিনি ভারতে দাঁতের চিকিৎসা-শিক্ষার জনক।
১৯৮০ সালে ভারতবর্ষে সরকারি ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ছিল ২২টি। আর প্রাইভেট কলেজ ছিল মাত্র ৬টি! ২০০০ সালে সরকারি কলেজ ৪০ আর বেসরকারি ১২০। আর ২০২০ সালে সরকারি কলেজ ৪০টি এবং বেসরকারি কলেজের সংখ্যা ৩৫০টি। রফিউদ্দিনের নিজস্ব তাগিদ থেকে যে ডেন্টাল কলেজের যাত্রা শুরু হলো, তাই ছিল ভারতবর্ষের প্রথম প্রাইভেট ডেন্টাল কলেজ। যেমন ডাঃ রাধাগোবিন্দ কর যে মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা করেন (১৯০৮) জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে, তাই ছিল ভারতবর্ষের প্রথম বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ। ১৯৩৬ সালে তৎকালীন মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি ডাঃ আহমেদ প্রতিষ্ঠিত কলেজের পরিকাঠামো থেকে স্বীকৃতি দেন এবং ১৯৪৯ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার দুই বছর পরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই কলেজের পঠন-পাঠনের কর্মসূচি এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। দূরদর্শী রফিউদ্দিন তাঁর স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠানকে সেই সময়ে সরকারের হাতে তুলে দেন এবং ভারতবর্ষের প্রথম প্রাইভেট কলেজটি প্রথম সরকারি কলেজের স্বীকৃতি লাভ করে। এর পরে পরেই বোম্বে (মুম্বাই), মাদ্রাজ (চেন্নাই), ত্রিবান্দ্রম, অমৃতসর, লক্ষ্ণৌ এবং আমেদাবাদ শহরে কলেজ স্থাপিত হতে থাকে সরকারি উদ্যোগে। ডাঃ আহমেদ প্রায় প্রত্যেক বছর বিদেশ ভ্রমণ করে নিজের ঔৎকর্ষ বৃদ্ধি করতেন নতুন নতুন ট্রেনিং নিয়ে এসে, সাথে আনতেন সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও শিক্ষা সামগ্রী। তাই, সেই ‘Calcutta Dental College’ থেকে পাস করে যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফিরে যেতেন সঙ্গে নিয়ে যেতেন সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা ও দক্ষতা। সেইজন্য পরবর্তীকালে যে সমস্ত ডেন্টাল কলেজ ভারতবর্ষ, পাকিস্তানে তৈরি হয়েছিল তাদের মান ছিল প্রথম শ্রেণির। কারণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং শিক্ষাদানের মান ছিল উন্নত। কারণ শিক্ষকদের বেশিরভাগ ছিলেন ‘Calcutta Dental College’ এর পাশ করা ডাক্তার। উল্লেখ্য, ১৯২৫-২৬ সালের ব্যাচের প্রথম স্থানাধিকারী ফতিমা জিন্না ছিলেন মহম্মদ আলি জিন্নার কনিষ্ঠ ভগিনী। ওডিশা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়কের দাদা এই কলেজের ছাত্র ছিলেন সেই সময়ে।
পরিব্রাজক রফিউদ্দিন
বিগত দিনের পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা জেলার বর্ধন পাড়া গ্রামে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে ২৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং শৈশবে ঢাকা মাদ্রাসা, বর্তমানের ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশুনা শুরু করে ১৬ বছর বয়সে ১৯০৬ সালে কৃতিত্বের সাথে এন্ট্রান্স পাশ করেন রফিউদ্দিন আহমেদ। ভ্রমণ পিয়াসী রফিউদ্দিন পরীক্ষা দিয়েই দুনিয়া দেখার উদগ্র বাসনা সাথে করে হঙকঙ পাড়ি দিতে ঢাকা থেকে কলকাতায় আসেন। নিঃখরচায় হঙকঙ যাওয়ার জন্য কলকাতা বন্দরে যাতায়াত শুরু করেন, নানান কসরতের পর একজন সহযোগী নাবিক হিসাবে তিনি ‘S.S.Dilwara’ জাহাজে যুক্ত হন এবং রেঙ্গুন, পেনাঙ হয়ে হঙকঙে পৌঁছান। হঙকঙ থেকে ফিরে পিতার নির্দেশে তিনি আলিগড় মুসলিম কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৯ সালে পিতার মৃত্যুর পর, আলিগড় থেকে ফিরে আসেন স্নাতক পরীক্ষা শেষ না করেই।
YMCA কলকাতা ছিল সেই সময়ে সাহেবদের নামকরা মিলনমেলা, রফিউদ্দিন সেখানে যাতায়াত শুরু করেন। কিভাবে বিদেশে পড়াশুনা করার সুযোগ পাওয়া যায়? কমখরচে থাকা যায় এই রকম খবর সংগ্রহের তাগিদে। রফিউদ্দিনের সাথে কথা বলে আকৃষ্ট হন সেই সময়ের আমেরিকার কনসাল জেনারেল এবং খুশি হয়ে তাকে একটি প্রশংসাপত্র তথা পরিচিতি পত্র দেন। যা তরুণ রফিউদ্দিনের বিদেশ ভ্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
মাত্র ষাট টাকা সম্বল করে চোখে স্বপ্ন নিয়ে বোম্বে বন্দর থেকে জাহাজে করে আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। নানান অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে ইতালির জেনোয়া শহর, লন্ডন হয়ে অবশেষে সুদীর্ঘ সমুদ্রপথ অতিক্রম করে নিউইয়র্ক শহরে আসেন। নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরিতে নানান বই, পত্র-পত্রিকা ঘেঁটে তিনি বুঝতে পারেন, আইওয়া(IOWA) জায়গাটিতে তিনি সবথেকে কমখরচে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন পড়াশুনার সাথে সাথে। নিউইয়র্ক থেকে ট্রেনে করে তিনি ঐ শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে জনৈক শ্রীযুক্ত ঘোষ নামে এক বাঙালি ভদ্রলোক তাঁর সাথে পরিচিত হন এবং নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। সম্পূর্ণ অপরিচিত স্থানে এই রকম আশ্রয় এবং অভিভাবক পেয়ে যাওয়ায় অনেক নিশ্চিন্ত মনে তিনি পড়াশুরু করেন এবং আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৫ সালে (Doctor of Dental Surgery) ডিগ্রি প্রাপ্ত হ’ন। এই সময়েই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে!
আইওয়া শহরে থাকাকালীন নিজের পড়াশুনার খরচ এবং গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য নানা কাজে নিযুক্ত হন রফিউদ্দিন। বেকারির কাজ, ওয়েটার, সোডা ফাউন্টেন তৈরির কারখানায়, রেস্তরাঁর বিল তৈরির মতো নানানভাবে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করেছেন। জমানো টাকা দিয়ে তিনি সার্জারির জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনে রাখতেন কলকাতায় ফিরে আধুনিক ডেন্টাল ক্লিনিক স্থাপন করার বাসনায়। ১৯১৬ সালে আমেরিকা থেকে ফেরবার পথে জাপানে প্রায় দীর্ঘ দুইমাস আটক ছিলেন যুদ্ধকালীন নানান নিয়মের বেড়াজালের পাল্লায় পড়ে। অবশেষে ওক্লাহামা শহর থেকে জাহাজে চেপে কলকাতায় আউট্রাম ঘাটে পৌঁছান, দীর্ঘ দশ বছর বিদেশে ঘুরে নানান অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে এবং ভারতবর্ষের প্রথম পাশ করা ডেন্টাল সার্জন হয়ে।
সংগঠক রফিউদ্দিন
দেশের ডেন্টাল সার্জনরা যাতে নিজেদের মধ্যে পেশাগত কারণ ছাড়াও সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠেন তার জন্য ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘Bengal Dental Association’ যা পরবর্তী কালে ‘Indian Dental Association (IDA) নামে সমস্ত ভারতবর্ষে সব ডেন্টাল সার্জনদের সাধারণ মঞ্চ এবং বর্তমানে সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে সভ্যসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন, বর্তমানে যার সভাপতি একজন বঙ্গসন্তান।
১৯২৫ সালে রফিউদ্দিনের ‘Hand Book of operative Dentists’ প্রকাশিত হয়। দাঁতকে সুস্থ রাখার জন্য এবং দন্তক্ষয় রোগে আক্রান্ত দাঁতকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যাবে। দাঁত না তুলে, অর্থাৎ দন্তক্ষয় রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে ভারতে প্রকাশিত প্রথম বই। সাথে সাথেই দন্ত-চিকিৎসা পেশাকে বিকশিত ও উন্নত করার লক্ষ্যে তিনি বেঙ্গল ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র প্রকাশ করতে থাকেন এবং ১৯২৪-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত সেই জার্নালের সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন।
ডেন্টাল সার্জনদের মধ্যে অনুশাসন, নিয়মশৃঙ্খলার রীতি-নীতি তৈরির লক্ষ্যে উন্নত দেশের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট হয়ে ‘Bengal Dentist Act’(১৯৩৯)-এর খসড়া তৈরিতে মনযোগী হন। সেখান থেকে ‘Indian Dentist Act 1948‘ তৈরি হয় এবং ভারত সরকারের স্বীকৃতি পায়। ভারতবর্ষের সমস্ত ডেন্টাল কলেজের অনুমোদন, পঠন-পাঠনের কোর্স-কারিকুলাম, ট্রেনিং, উচ্চশিক্ষার মাপকাঠি, ছাত্র ভর্তির পদ্ধতি এবং শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের রক্ষক ও অভিভাবক।
সমস্ত নতুন এবং পুরাতন কলেজে নিয়মিত পরিদর্শন করে, দেশে দন্ত-শিক্ষার মান এবং রোগী পরিষেবার সুযোগ, মানের সামঞ্জস্য রক্ষা করা DCI-এর কাজ। স্বীকৃত কলেজের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে বেশ কিছু অনুপযুক্ত কলেজ থেকে পাস করা ছাত্র-ছাত্রীদের কারণে সমাজে এর বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে।
১৯২০-তে তৈরি হওয়া প্রথম ডেন্টাল কলেজ কলকাতায়। এখন আমাদের রাজ্যে ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ৬টি। ৩টি সরকারি, ৩টি প্রাইভেট। ১৯৫৪ সালে তৈরি হওয়া প্রথম কলেজ মাদ্রাজ ডেন্টাল কলেজ, আজ সেই রাজ্যে মোট ৩৫টির বেশি কলেজ, যার মধ্যে ৩টি সরকারি কলেজ। সমস্ত দেশে মোট প্রায় ৪০০টি কলেজে ৩০,০০০ এর কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হচ্ছেন প্রতি বছর। অর্থাৎ ১০ বছরে প্রায় ৩০০,০০০ ছাত্র-ছাত্রী দন্ত-চিকিৎসক হয়ে সমাজে যুক্ত হচ্ছেন। প্রতি ৭৫০০জন মানুষ পিছু একজন দাঁতের ডাক্তার যথেষ্ট। আমাদের দেশে, বর্তমানে প্রতি ১০,৫০০জন পিছু একজন দাঁতের ডাক্তার আছে। গ্রামাঞ্চলে সেই অনুপাত ১: ১৫,০,০০০। এই বাস্তব চিত্র দেখিয়ে দেয় দেশে বিষম সামাজিক বিকাশ, যা সমাজের সর্বক্ষেত্রেই বিরাজমান। গরিব মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালই ভরসা। যেখানে ‘দাঁত-তোলো’ আর ‘রেফার’ করা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই হয় না। বোঝা যায় কেবল সংখ্যাবৃদ্ধিই উন্নয়নের মাপকাঠি নয়।
স্বীকৃতি:
১৯৫৪ সালে ডাঃ আহমেদকে ডিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট মনোনীত করা হয়। ১৯৫৪-১৯৫৮ পর্যন্ত তাঁর সময়ে ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি রাজ্যই তাদের নিজস্ব প্রথম সরকারি ডেন্টাল কলেজ শুরু করে। আর আজ প্রায় ৪০০ ডেন্টাল কলেজের মধ্যে ৩৫০টি প্রাইভেট কলেজ।
তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশ-বিদেশে তাকে সংবর্ধিত এবং পুরষ্কৃত করা হয়েছে বারে বারে। ১৯৪৭ সালে ‘International college of Dentists’ Royal college of Surgeons, London থেকে এবং ১৯৪৯ সালে পিয়ারী ফচার্ড একাডেমি তাকে সম্মানিত করে। ১৯৬৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ উপাধি প্রদান করে। ১৯৩২-১৯৪৪ পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর-অল্ডারম্যান এবং ১৯৫০ তিনি পশ্চিমবঙ্গে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের মন্ত্রিসভায় কৃষি, কর্পোরেশন, ত্রাণ এবং পুনর্বাসন দপ্তরের মন্ত্রী হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬২ সাল পর্যন্ত।
১৯৬৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর তৈরি ‘Calcutta Dental College’- এর নাম পরিবর্তন করে ‘Dr. R. Ahmed Dental College and Hospital’ করেন তাঁর নাম চিরস্থায়ী করতে। এই কলেজটি ১১৪, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, কলকাতা ৭০০০১৪ ঠিকানায় অবস্থিত এবং এর একটি নতুন ভবনের উদ্বোধন হয় ২০০৯ সালে। বর্তমান ঠিকানার ঠিক উল্টোদিকে এর অবস্থান, হাসপাতালের পাশে।
দাঁতের চিকিৎসা, শিক্ষা এবং ব্যাপক কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে ভারতবর্ষে দন্ত-চিকিৎসার জনক বলা হয়। ভারত সরকার ২০১৬ সালে তাঁর জন্মদিন ২৪ ডিসেম্বর তারিখটিকে ভারতবর্ষের ‘Oral Health Care Day’ রূপে প্রত্যেক বছর পালন করে তাঁকে মরণোত্তর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ১৯৮৫ সালে তাঁর ছাত্রজীবন কেটেছিল যে আইওয়া ডেন্টাল কলেজে, সেই আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ছাত্র সম্মানে মরনোত্তর স্বীকৃতি জানায়।
তিরিশ বছর বয়সে যে তরুণ, ডেন্টিস্ট্রির বীজ বপন করেছিলেন কয়েকজন সমমনোভাবাপন্ন শিক্ষক-চিকিৎসক এবং বিজ্ঞান শিক্ষকদের সহযোগিতায়, আজ প্রায় চারশো ডেন্টাল কলেজ থেকে তিরিশ হাজার ছাত্র-ছাত্রী প্রতিবছর উত্তীর্ণ হয়ে একশো চল্লিশ কোটি দেশবাসীর দাঁত ও মুখগহ্বরের রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে সচেষ্ট।
মুখ গহ্বরিস্থিত দাঁত ও মাড়ি মানুষের সৌন্দর্য বিকশিত করে ও খাদ্য বিপাকীয় প্রক্রিয়া শুরু করে। শৈশব থেকেই দাঁত ও মাড়ির পরিচর্যা মুখমণ্ডলের স্বাস্থ্য অটুট রাখে এবং নানান রোগের জটিলতা থেকে রেহাই দিতে সক্ষম। জনস্বাস্থ্যে সরকারি দন্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রসার এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নানান জনহিতকর প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কারণ, শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে মুক্তি। যা অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং কুসংস্কারের কারাগার থেকেও মানুষকে মুক্ত করে। আগামী মঙ্গলবার, এবারের ২৪ ডিসেম্বর ডাঃ আর আহমেদের জন্মদিবসে, ‘জাতীয় দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস’ উপলক্ষে সেই পথে অগ্রসর হওয়ার বার্তা দিয়ে আমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
Comments :0