Corruption

নলহাটির তৃণমূল নেতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই চলেছে দুর্নীতির কারবার

রাজ্য

কলকাতা ও বোলপুর, ১৫ অক্টোবর— নিয়োগ কাণ্ডের তদন্তে অবশেষে সামনে আসল সেই ডিএলএড, বিএড কলেজকে ঘিরে চলা দুর্নীতির ছবিই। টাকার বিনিময়ে চাকরির দুর্নীতির সমান্তরাল ভাবেই জেলায় জেলায় শাসক তৃণমূলের নেতা, বিধায়করা ব্যাঙের ছাতার মতো খুলে বসেছে ডিএলএড, বিএড কলেজ। মানিক ভট্টাচার্যকে জেরায় ইডি জানতে পেরেছে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা খেটেছে সেখানেও, টাকার বিনিময়ে ডিগ্রিও দেওয়া হয়েছে। সেই চক্রের হদিশ পেতেই সল্টলেক থেকে বারাসত, দিনভর চলল ইডি’র তল্লাশি অভিযান।
তদন্তের গতিতেই সামনে এসেছে বীরভূমের তৃণমূল নেতা, বিজেপি ঘনিষ্ঠ বিভাস অধিকারীর নাম। দু’দিন আগেই গণশক্তিতে সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তদন্তুকারী সংস্থার নজরে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকজন তৃণমূলী নেতা, শিক্ষা ব্যবসায়ী। একেবারে সরাসরি নগদ টাকা এদের নির্দেশে এজেন্টদের মাধ্যমে পৌঁছে যেত পার্থ-মানিকের কাছে। জানা গিয়েছে, সেই এজেন্ট চক্রের অন্যতম মাথা নলহাটির তৃণমূল নেতা বিভাস অধিকারী। একাধিক বিএড-ডিএলএড কলেজের মালিক। শুধু বীরভূম জেলায় এরকম প্রায় ৫-৬টির ডিএলএড, বিএড কলেজের মালিক। গোটা পশ্চিমবঙ্গে যতগুলি বিএড, ডিএলএড কলেজ আছে তাঁদের মালিকপক্ষের একটা সংগঠন আছে। অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশন। তার সভাপতি ছিলেন এই ব্যক্তি। মানিক ভট্টাচার্যের প্রায় ডান হাত হয়ে উঠেছিলেন। মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বীরভূম থেকে প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য তালিকা পাঠানো থেকে শুরু করে টাকা তোলা, তা পৌঁছে দেওয়া সব কর্মকাণ্ডেই পার্থ চ্যাটার্জিরও বিশ্বস্ত বৃত্তে ঢুকে পড়েছিলেন। 
মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেপ্তারির পরেই তৃণমূলের ব্লক সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন এই ব্যক্তি, এখন বিজেপি’র ঘনিষ্ঠ। এদিন ইডি’র তদন্তকারী আধিকারিকদের দল উত্তর কলকাতায় ১৮, ডাক্তার কার্তিক বোস লেনে এই বিভাস অধিকারীর ফ্ল্যাটে হানা দেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে এই ফ্ল্যাটে একাধিকজনের আনাগোনা ছিল। বিভাস অধিকারীও আসতেন, তবে মূলত রাতে। ফ্ল্যাটটির বাইরে একটি বোর্ড লাগানো আছে, ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’। তদন্তকারী সংস্থার দাবি এই সংস্থাও চালাতেন বিভাস অধিকারী। এখানে বিপুল টাকার বিনিময়ে ডিগ্রি দেওয়া হতো এমনকি চাকরিও মিলত টাকা দিয়ে। প্রাথমিকে নিয়োগ কেলেঙ্কারি একাধিক সমঝোতা এখানেও হয়েছিল। 
তার আগে ইডি’র আধিকারিকরা হানা দেয় আরেক কীর্তিমানের ডেরায়। সল্টলেকের মহিষবাথানে। তাপস মণ্ডল। আগে বিভাস অধিকারী যে ‘অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি ছিল বর্তমানে সেই সংগঠনের সভাপতি এই ব্যক্তি। গত দু’বছরে মানিক ভট্টাচার্যের অন্যতম সহযোগী এই তাপসকুমার মণ্ডল। প্রাথমিকে নিয়োগের মেধাতালিকা, টাকা দেওয়া প্রার্থীদের নামের তালিকা শেষদিকে এই ব্যক্তি সরাসরি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পাঠাতেন বলে ইডি’র দাবি। সেই সূত্রে নিয়োগকাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। মুর্শিদাবাদেও তাঁর কলেজ, স্কুল আছে। গোটা রাজ্যে তাঁর বিএড, ডিএলএড সহ প্রায় কুড়িটি কলেজ, স্কুল রয়েছে। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতার একাধিক তথ্য প্রমাণ মিলেছে। মিলেছে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও। ডোমকলের তৃণমূলী বিধায়কের সঙ্গেও মানিক ভট্টাচার্যের যোগসাজশের তথ্য প্রমাণ এসেছে তদন্তকারী সংস্থার কাছে মানিক ভট্টাচার্যের অন্যতম শাগরেদ এই তাপস মণ্ডল মহিষবাথানে ‘মিনার্ভা এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি সংস্থা চালায়। এদিন সকালে সেখানে গিয়ে ইডি’র আধিকারিকরা দেখতে পান ওই অফিস তালাবন্ধ, শাটার নামানো। শাটার ভেঙেই ভিতরে ঢোকেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এখানে চাকরি পরীক্ষার বিভিন্ন কোর্স করানো হতো বলে প্রচার। তবে এই অফিস থেকেই একাধিক অযোগ্য প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগের নিশ্চয়তা দেওয়া হতো। ইডি আধিকারিকরা এরপর বারাসতে তাপস মণ্ডলের বাড়িতেও হানা দেয়। বারাসতের আর এক বাসিন্দা চন্দন মাইতির বাড়িতেও হানা দেয় ইডি। 
বীরভূমের নলহাটি-২ নং ব্লকের নবহিমায়তপুরে বিশাল আশ্রম রয়েছে এই নেতার। এদিন তাঁর কলকাতার ফ্ল্যাট সিল করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিভাস অধিকারী বলেন, ‘‘ওটা আমাদের আশ্রমের ফ্ল্যাট। বিভিন্ন মানুষ কাজে বা চিকিৎসা করাতে কলকাতা গেলে ওখানে থাকেন। বড় বড় ট্যাঙ্কে ট্যাঙ্কে টাকা যেত সেটা সিপিএম’র লোক বা অন্যান্য লোকরা  বলতে পারে’। তবে আশ্রমেরই যদি ফ্ল্যাট হয় তাহলে তার বাইরে ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশনে’র বোর্ড কেন ? 
বিভাস অধিকারী ঘনিষ্টর এক শিক্ষা ব্যবসায়ী বলছেন, ‘চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চক্রে বিভাসদাই তো ছিল অন্যতম মাথা। শিক্ষামন্ত্রী থেকে পর্ষদ সভাপতির ঘনিষ্ট যারা যারা এই কারবার নিয়ন্ত্রণ করেছে তাদের মধ্যে একজন বিভাস অধিকারী।’
 

Comments :0

Login to leave a comment