Editorial

অজানা পথে সিরিয়া

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত ১৪ বছর ধরে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ক্ষতবিক্ষত সিরিয়ায় অবসান হলো বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের শাসন। বিদ্রোহী সশস্ত্র যোদ্ধা গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম এবং সহযোগী গোষ্ঠীর একরকম অপ্রতিরোধ্য অভিযানের মুখে ভেঙে পড়ে আসাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী। তাদের অনেকে যেমন আত্মসমর্পণ করে তেমনি অনেকে পালিয়ে যায়। এমনকি আসাদ প্রশাসনের শক্ত ঘাঁটি রাজধানী দামাস্কাসেও আসাদ বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। কার্যত বিনা যুদ্ধে বিনা রক্তপাতে বিদ্রোহীরা দামাস্কাসের দখল নেয়। আর রাষ্ট্রপতি আসাদ ক্ষমতা ছেড়ে সপরিবারে দেশ থেকে পালিয়ে যান। গত ২৪ বছরের শাসনকাল বিশেষ করে ২০১১ সালের আরব বসন্তের পর থেকে গৃহযুদ্ধ অব্যাহত থাকলেও এবং তা মাঝে মাঝে ভয়াবহ হয়ে উঠলেও আসাদ প্রশাসনকে এতটা দুর্বল দেখা যায়নি। কিন্তু এবার সরকারি বাহিনীকে যতটা দুর্বল দেখা গেছে ততটাই শক্তিশালী ও চাঙ্গা দেখা গেছে বিদ্রোহী‍‌দের।

সিরিয়ার বুকে আসাদ সাম্রাজ্যের এই পতন নিছক একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পতন বা সরকার বদলের সাধারণ ঘটনা নয়। এর সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য বদলের নানা দিক। বিগত কয়েক যুগ ধরেই সিরিয়া কোনও ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র হিসাবে শাসিত হচ্ছিল না। অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি মদতপুষ্ট একাধিক গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন অংশ দখল করে বিদ্রোহী কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। ২০১১ সালে তথাকথিত আরব বসন্তের সময় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী মদতে আরব দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে তথাকথিত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার বদলের যে হিড়িক উঠেছিল তখন সিরিয়ায়ও আসাদ সরকারের পতনের জন্য উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। মূলত রুশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা আসাদ সরকার সেই বিদ্রোহ কড়া হাতে দমন করে। আসাদ জমানাকে সমর্থন ও সাহায্য করে ইরানও। ফলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে অনেকটাই কোণঠাসা করে ফেলতে সক্ষম হয় আসাদ সরকার।

সাম্প্রতিককালে প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলের গণহত্যা ও ধ্বংস অভিযান এবং পরে লেবাননে ইজরায়েলী আগ্রাসানের জেরে পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ইজরায়েলী আগ্রাসন থেকে প্যালেস্তাইন, লেবাননকে রক্ষা করতে গিয়ে ইরান সিরিয়ার দিকে বি‍‌শেষ নজর দিতে পারেনি। তেমনি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে ব্যস্ত থাকায় রাশিয়ার পক্ষেও আসাদের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের মদত দিতে থাকে আমেরিকা। তেমনি অর্থনৈতিকভাবে কার্যত ভেঙে পড়া সিরিয়ায় ইরান ও রাশিয়ার সাহায্য ব্যতিরেকে আসাদ বাহিনীর রুখে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না। এই অবস্থায় ক্ষমতা ছেড়ে পলায়নই শ্রেয় মনে করেছেন। আবার এই সুযোগে ইজরায়েলও সিরিয়ার ভূখণ্ড দখলে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি অত্যন্ত বিশৃঙ্খল এবং অস্থিতিশীল। ইজরায়েল-মার্কিন অক্ষ নতুন করে পশ্চিম এশিয়ার দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে মার্কিন-ইজরায়েলের আধিপত্যের প্রধান প্রতিপক্ষ রাশিয়া ও ইরান একটু দুর্বল অবস্থায় থাকায় ইজরায়েল যেমন যা খুশি তাই করার সুযোগ পাচ্ছে তেমনি সিরিয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment