Even God Not Spared

রেহাই নেই ‘ভগবানের’-ও

জাতীয়

Even God Not Spared

তুষারশুভ্র হিমালয়ে রোদ পড়ে সোনালি রঙ ধরেছে। তার কোলে কেদারনাথ মন্দির চত্বরে বাহারি পোশাক, দামি রোদচশমা পরে নানা ‘পোজ’-এ প্রধানমন্ত্রীর ছবি প্রতি বছর পাওনা হয়ে গেছে দেশবাসীর। সেখানে এক গুহাও আবিষ্কার করে ফেলেছেন, সেই গুহায় ধ্যানরত প্রধানমন্ত্রীর ছবিও ছড়িয়েছে বিদ্যুৎ গতিতে। শঙ্করাচার্যের পরে তিনিই যে ধ্যানে বসলেন কেদারে। এখন ভাড়া দিয়ে সেই গুহায় যাচ্ছেন অনেকেই। 
এ হেন কেদারনাথের গর্ভগৃহ সোনায় মুড়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল গত বছর। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন বিখ্যাত হিন্দু ধর্মস্থানগুলি ‘উদ্ধার’এর কাজ চলছে। বদ্রীনাথ-কেদারনাথ মন্দির কমিটি (বিকেটিসি) গর্ভগৃহ সোনার পাতে মুড়ে দেওয়ার কাজ শুরু করে প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করেই। মন্দিরের পুরোহিতদের এক বড় অংশের বক্তব্য ছিল, কেদারনাথ ‘মোক্ষধাম’। মোক্ষধামে সোনা লাগায় না। শুধু তাই নয়, সোনার পাত লাগানোর জন্য ড্রিল মেশিন ব্যবহার করায় প্রাচীন মন্দিরের দেওয়ালের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। জনপ্রিয় হিন্দু ধর্মস্থান কেদারের গর্ভগৃহ মোদীর সময়ে সোনার হয়ে গেছে— এ কি কম বড় সাফল্যের কথা! 


গত বছর অক্টোবর মাসে মন্দির বন্ধ হওয়ার আগেই সোনার পাত লাগানোর কাজ শেষ হয়েছিল। ৫৫০টি সোনার পাত লাগানো হয়, যার ওজন প্রায় ২৪ কিলো। ছয় মাস পরে মন্দির খোলার পরে তীর্থ পুরোহিত আচার্য সন্তোষ ত্রিবেদী অভিযোগ করেন, ১২৫ কোটি টাকার প্রায় ২৪ কিলো সোনা চুরি হয়ে গেছে মন্দির থেকে। মন্দির বন্ধ হয়ে গেলে রাতের অন্ধকারে পিতলের পাতের উপরে সোনার জল পালিশ করা হচ্ছে, সোনার মতো দেখানোর জন্য! প্রথমে অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হলেও, এরপরে চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার। 
******
গত বছর অক্টোবর মাসে কপাল ভর্তি চন্দন লেপে ভক্তিতে গদগদ প্রধানমন্ত্রীর ছবি, ভিডিও ছড়ানো হয়েছিল উজ্জয়নের মহাকাল মন্দির থেকে। কেদারের মতোই আরেক ‘জ্যোতির্লিঙ্গ’ মহাকাল মন্দিরের ‘জীর্ণোদ্ধার’ করতে গিয়েছিলেন সেদিন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ‘মহাকাল লোক করিডোর’ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করেছিলেন মোদী। এই বছর শেষে ভোট মধ্য প্রদেশে। তার এক বছর আগে ‘মহাকাল লোক করিডোর’ প্রকল্পের প্রথম পর্যায় উদ্বোধন করে ভোট প্রচারের সুর বাঁধার সেই কাজ শুরু হয়েছিল। সম্ভবত এবার ভোটের আগে সম্পূর্ণ প্রকল্পটি উদ্বোধন করতে আরেকবার উজ্জয়ন যাবেন মোদী।
কিন্তু তার আগেই ঝোড়ো হাওয়ায় লুটের চেহারা বেআব্রু করে দিয়েছে। গত মাসের শুরুতে ঝড় বৃষ্টিতে মোদীর উদ্বোধন করা মহাকাল লোক করিডোরের উপর বসানো সপ্তর্ষির সাতটার মধ্যে ছ’টা মূর্তিই উপড়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে। এই কাজে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ১০ থেকে ২৫ ফুটের মূর্তি তৈরি এবং অন্যান্য কাজে ব্যাপক লুট হয়ে বলে অভিযোগ। ৮৫০ কোটি টাকার বেশি এই প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ করে বিজেপি’র কেষ্ট-বিষ্টুরা যথেচ্ছ লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে মধ্য প্রদেশের রাজনীতি। বিজেপি প্রাথমিকভাবে নির্মীয়মাণ সংস্থার ঘাড়ে দায় ঝেড়ে পার পেতে চাইছিল। ওই সংস্থাও নতুন বানিয়ে দেবে বলে পার পাওয়ার চেষ্টায় ছিল। কিন্তু ভোটমুখী রাজ্যে এই ঘটনা হইচই ফেলে দিয়েছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী মহাকাল লোক করিডোর প্রকল্প উদ্বোধন করার পরের দিনই উজ্জয়নের কংগ্রেস বিধায়ক মহেশ পারমার মধ্য প্রদেশ লোকায়ুক্তের কাছে এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন। সেই সময়ে ১৫ জন আধিকারিককে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তারপর আর কিছু হয়নি। সাতটির মধ্যে ছটি মূর্তি উপড়ে পড়ার পরে সেই অভিযোগই দৃঢ় হয়েছে। এখানেও যথারীতি তদন্তের কথা বলে আপাতত চাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি সরকার।

 
*****
বিজেপি’র পাখির চোখ এখন অযোধ্যার রামমন্দির। সামনে বছর লোকসভার ভোটের আগে মন্দির উদ্বোধনের জন্য অযোধ্যায় চলছে বিদ্যুৎ গতিতে কাজ। এই গতিতে যদি দেশের হাসপাতাল, স্কুল, পানীয় জল, আবাসের কাজ হতো! খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই প্রকল্পের তদারকি করছেন। প্রতিদিন রাতে নাকি মোদীকে রিপোর্ট করা হয় কাজের গতিপ্রকৃতি নিয়ে, এমন খবর সংবাদপত্রের পাতায় ফলাও করে ছাপানো হয়। ধর্মনিরেপক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী সব রীতিনীতি ধ্বংস করে নিজেই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। আগামী লোকসভা ভোটের নিরিখে সেই অযোধ্যা বিজেপি’র সবথেকে অগ্রাধিকারের জায়গা। সেখানে বিজেপি’র লোকেদের বেপরোয়া জমি লুটের খবর একাধিকবার সামনে এসেছে। 
যে প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী কমিটি বানিয়ে দিয়েছেন, যে প্রকল্প খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজে নজর রাখছেন প্রতিদিন। সেই প্রকল্পের নামে বিজেপি’র মেয়র, বিধায়ক, নেতারা দেদার জমি লুট করছেন। এমনকি ট্রাস্টের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। নির্মীয়মাণ মন্দিরের ৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে দেদার জমি কিনে নিচ্ছেন বিজেপি’র মেয়র, বিধায়ক, আমলা-অফিসারদের আত্মীয়রা। সেই জমি কয়েক মিনিটের মধ্যেই মন্দির নির্মাণের ট্রাস্টকে বিক্রি করা হয়েছে বহু গুণ বেশি দামে। দলিতদের জমিও বেআইনিভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু বিরোধীদের অভিযোগ নয়, নির্বাণী আখাড়ার মহন্ত ধরমদাস ট্রাস্টের সদস্যরা ছাড়াও গোসাইগঞ্জের তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক ইন্দ্রপ্রতাপ তিওয়ারি, অযোধ্যার তৎকালীন মেয়র বিজেপি’র ঋষিকেশ উপাধ্যায়ের নামে জমি লুটের অভিযোগ দায়ের করেছেন। অযোধ্যার বিজেপি বিধায়ক বেদপ্রকাশ গুপ্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে মিলেই চলছে এই দুর্নীতি। বিপুল এই দুর্নীতি নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি মোদী বা যোগী। একটি লোককেও তাদের পদ থেকে সরানো হয়নি।
ধর্মের ছদ্মবেশে হিন্দুত্ববাদীদের লুট থেকে ছাড় পাচ্ছে না ‘ভগবান’ও।


 

Comments :0

Login to leave a comment