পীযুষ ব্যানার্জি: পানাগড়
'লড়াই কী হবে'? 'লড়াই হবে কী'?
সমাবেশের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সিপিআই(এম)র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
পানাগড় বাজারের সিধু-কানহু ডহরের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে চার মাথার জিটি রোডের ওপর আছড়ে পড়া ভিড়ে শোনা গেছে লড়াইয়ের আরজির অনুরণন।
গতরখাটা মানুষের বিশাল সমাবেশে মহম্মদ সেলিম তাই বলেছেন, ‘‘আমাদের গ্রাম প্রান্তরে ছড়িয়ে যেতে হবে। সব মানুষের কাছে যেতে হবে। যারা বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী, তাদের দুহাতে আগলে আমাদের পাশে পেতে হবে। আমাদের যাঁরা সমর্থক, দরদী, আগে ছিলেন, এখন একটু ভয়ে হোক, ভ্রান্তিতে হোক, আমাদের অহমিকায় হোক, আহাম্মকিপনায় হোক, যাঁরা একটু দূরে সরে গিয়েছেন, নড়ে গিয়েছেন তাঁদেরকেও আমাদের ডাক পাড়তে হবে। সবাইকে নিয়ে আমাদের বলতে হবে, হেই সামালো ধান হে/ কাস্তেতে দাও শান হে।’’
পানাগড় শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া পুরানো জিটি রোডকে পাশে রেখে আর এক বড় রাস্তা সিধু কানহু ডহরজুড়ে তৈরি হয়েছিল খেতমজুর সম্মেলনের সমাবেশস্থল। গোটা রাস্তা উপচে ভিড় ছড়িয়ে যায় জিটি রোডে। ভিড়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে পারেনি একাংশ।
গরিবের গতর লুটের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন খেতমজুর ঘরণী একইসঙ্গে সংগঠনের নেত্রী বন্যা টুডু। ‘‘চার বছর ধরে আমাদের কাজ কেড়ে নিয়েছে। আগস্ট মাসে কেস করেছি। জয়ীও হয়েছি। ‘৪ক‘ ফরম ফিলাপ করে পঞ্চায়েতে, পঞ্চায়েতে জমা দিয়েছি। এখন বলছে ‘জি রাম জি’! সম্পত্তি ভাগ নিয়ে যে রামকে সংসার ছেড়ে বনবাসে যেতে হয়, তার নাম দিয়ে আমাদের কাজটাই কেড়ে নিল।’’
কাজের আকালে পড়া মানুষ এদিন দলবেঁধে এসেছিলেন সারা ভারত খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবী ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তৃতীয় রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে।
সমাবেশে সেলিম বলেছেন,‘‘ লুট হলে শুধু ভোট লুট হয় না। ভোটাধিকার লুট হয় না। বেঁচে থাকার অধিকার, কাজের অধিকার, কথা বলার অধিকার, নিজের পদ্ধতিতে উপাসনা করার অধিকার সবই লুট হয়ে যায়। লুটের বিরুদ্ধে তাই লড়তে হবে। সবাইকে এক হতে হবে।’’
কাঁকসা গার্লস হাইস্কুলে এদিন থেকেই শুরু হয়েছে খেতমজুর সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন। আর এই কাঁকসাতই ২০০৪ সাল থেকে বামফ্রন্ট সরকারের বিদায়ের আগে পর্যন্ত ৫০টির ওপর কারখানা গড়ে উঠেছিল। আজ সেই কারখানার ২৫টি বন্ধ।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ। সারা ভারত খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বি বেঙ্কট প্রতিনিধি অধিবেশনে উদ্বোধনী ভাষণ দিয়ে বলেন, ‘‘১২ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপি হরতাল ডাকা হয়েছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি গোটা দেশে প্রতিবাদ হবে।’’
সর্বভারতীয় নেতা বিক্রম সিং ও অমিয় পাত্র বক্তব্য রাখেন। রাজ্য সম্পাদক নিরাপদ সরদার সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন।
Comments :0