Adeno virus

দ্রুত ছড়াচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাস

রাজ্য

অ্যাডিনো ভাইরাস বিপদ বাড়াচ্ছে ভয়ঙ্করভাবে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আরও ৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে গত ৩ দিনে ১০ শিশু মৃত্যুর খবর মিলেছে শুধু কলকাতায়। গত ২ মাসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০-র আশেপাশে। জ্বর সর্দি কাশি, শ্বাসকষ্টে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি থেকে প্রতিদিনই শিশু মৃত্যুর খবর আসছে। ওদিকে মিলছে না ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড। অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস সংক্রমণ, আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস। কাশি, শ্বাসকষ্ট পর্যবসিত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। শিশুদের ক্ষেত্রে আটকে যাচ্ছে শ্বাস। বড়দের ক্ষেত্রে প্রবল জ্বরের সঙ্গে দ্রুত ছড়াচ্ছে কাশি, অনেকদিন ধরে শরীরে স্থায়ীভাবে বাসা বাধছে সেই কাশি। সর্বত্র জারি হয়েছে সতর্কতা।
অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহলও। শিশুদের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে বেডের হাহাকার শুরু হয়েছে গত কয়েক দিন ধরেই। তা এখনো সামাল দিতে পারেনি সরকার। পূর্ণ বয়স্ক অসংখ্য মানুষ জ্বর, কাশিতে আক্রান্ত। শুধু এলাকায় পাড়ায় পাড়ায় চিকিৎসকদের চেম্বারে অস্বাভাবিক ভিড়। মঙ্গলবার আবারও এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে নবান্ন থেকে জারি হয়েছে একটি নির্দেশিকা। অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য, উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকাঠামো তৈরি না করে শুধু নির্দেশিকা জারি করে রোগের প্রকোপ ঠেকানো যায় না। এ রাজ্যে তাই হয়ে চলেছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আরও ৫টি শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে কলকাতার দুই হাসপাতালে। এরমধ্যে ২ জন মারা গিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া বিসি রায় শিশু হাসপাতালে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। 
মধ্যমগ্রাম থেকে জ্বর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত ৬ মাস বয়সের শিশুকে তার বাবা মা প্রথমে নিয়ে গিয়েছিলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি শিশুটিকে। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে। তার হার্টে জন্ম থেকে ফুটো ছিল বলে উল্লেখ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে ভাইরাস সংক্রমণে তার ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে শিশুটির নমুনা পরীক্ষায় অ্যাডিনো ভাইরাস পাওয়া গেছে। 
এছাড়া হাওড়া উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা এক পরিবার তাদের ১৮ মাসের শিশুকে স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রথমে নিয়ে যান। জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ছাড়াও তার সারা গায়ে চাকা চাকা দাগ বেরোতে দেখা যায়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উদয়নারায়ণপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুটির। অন্যদিকে কল্যাণী হরিণঘাটার এক ২ মাসের শিশুকে জ্বর সর্দি কাশির উপসর্গে ভর্তি করা হয় কলকাতার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। ভাইরাসঘটিত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে শিশুটি। তাকেও শেষপর্যন্ত আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে দেগঙ্গা বেড়াচাঁপা এলাকার এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই মুহূর্তে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক বিভাগে অতিরিক্ত ভিড় রয়েছে। শিশুদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে বেডের হাহাকার চলছে। বেশিরভাগ সময়েই একই বেডে দুয়ের বেশি শিশুকে রাখতে হচ্ছে, চিকিৎসকদের মতে যা অনভিপ্রেত। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার অত্যন্ত আশঙ্কা রয়েছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, সব সংক্রমিতদের রিপোর্ট না এসে পৌঁছায় জানা সম্ভব হবে না কারা অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত। কিন্তু ভাইরাসের কারণেই ফুসফুস ও শ্বাসনালী সংক্রমিত হয়ে শ্বাসকষ্ট থেকে নিউমোনিয়ায় ভুগছে বহু শিশু। তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই চিকিৎসা জরুরি। সেক্ষেত্রে বেড না থাকলে চিকিৎসা বিঘ্নিত হবে। 
এদিন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘যেভাবে অ্যাডিনো ভাইরাস ছড়াচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিশু হাসপাতাল সহ বেশ কিছু হাসপাতাল থেকে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর খবর মিলেছে। একইসঙ্গে বেড না পাওয়ার অভিযোগও সামনে আসছে। আইসিসিইউ’তে প্রয়োজন মতো জায়গা মিলছে না বলে অভিযোগ। চিকিৎসা পরিকাঠামোও দুর্বল হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের কোনও হেলদোল নেই।’’ তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু এই বিষয়ে নজর না দিয়ে তিনি মেঘালয়ে বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতে ব্যস্ত। এরাজ্যের শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর কোনও আগ্রহ আছে বলে মনে হচ্ছে না।’’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের বৈঠক হয়েছে। এরপর জারি হয়েছে একটি নির্দেশিকা। বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকতে হবে প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে রেফার কেস। ভেন্টিলেশন সহ আইসিইউ, সিসিইউ তৈরি রাখতে হবে।  অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা অভিযান চলবে। এদিন একটি হেল্প লাইন (১৮০০-৩১৩৪৪- ২২২) নম্বরও চালু করেছে নবান্ন।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ-এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মানস গুমটা এই প্রসঙ্গে বলেন, এতগুলি শিশু মৃত্যু ঘটে চলেছে যা সত্যিই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই একইভাবে আগুন লাগার পর জলের বালতি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে চলেছে। এসব নির্দেশিকাই সার, এতে বাস্তবে কোনও লাভ নেই। বোঝাই যাচ্ছে করোনার অভিজ্ঞতা থেকে কোনও শিক্ষাই রাজ্য সরকার নেয়নি। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দায়িত্বে থাকলে এমনটা ঘটে না। এই ভাইরাসটি পুরানো, নতুন কিছু নয়। এর মিউটেশন হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে। সুতরাং সমস্ত পরিকাঠামো আগেই প্রস্তুত রাখা সরকারের কর্তব্য ছিল। হঠাৎ করে কিছু যন্ত্রপাতি কিনে আইসিইউ তৈরি করলেই কাজ মিটে গেল? কোথায় প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী? স্বাস্থ্য দপ্তর তো প্রতিহিংসা মেটাতে ব্যস্ত, তারা ব্যস্ত স্বজনপোষণ নিয়ে। এইসব চূড়ান্ত অব্যবস্থার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ গরিব মানুষকে।        
 

Comments :0

Login to leave a comment