দক্ষিণ আফ্রিকা সকালে হেরে যাওয়ায় নিজেদের ম্যাচের আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ভারতের। এটাই চাপ কাটিয়ে দিয়েছিল ভারতের। রোহিত শর্মার দলের সামনে সুযোগ ছিল, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে ওঠার। সুবর্ণ সুযোগটি দারুণভাবেই কাজে লাগিয়েছে ভারত। জিম্বাবোয়েকে বিরাট ব্যবধানে হারিয়ে। ৭১ রানে জিতল মেন ইন ব্লু। পাঁচ ম্যাচে চারটি জিতে আট পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শীর্ষ শেষ করার সুবাদে আগামী বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেডে শেষ চারে ভারতের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
এগারো বছর আগে ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় বোর্ডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে বর্তমান ভারত অধিনায়ক একটি ট্যুইট করেছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেটে আগামী দিনে বহু প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটার আসতে চলেছে। মুম্বাইয়ের সূর্যকুমার যাদব অন্যতম। যার দিকে নজর থাকবে। আসন্ন বিশ্বকাপে সূর্যকুমার বুঝিয়ে দিচ্ছেন রোহিতের দূরদর্শিতা কতটা সঠিক ছিল! সূর্য তাঁর কিরণে আলোকিত করছেন ভারতীয় ক্রিকেটকে। আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে দুর্ধর্ষ সব ইনিংস খেলে চলেছেন তিনি।
রবিবাসরীয় দুপুরেও খেলেছেন। মাত্র ২৫ বলে ৬১ রানের ইনিংস। স্লগ ওভারেই সাদা বলটিকে ছাতু করে একাই নিলেন ৫৬ রান। এমন সব শট খেললেন যা ক্রিকেটের ব্যাকরণের বাইরে। জিম্বাবোয়ের বোলার থেকে অধিনায়ক দিশাহারা। কোথায় বল করবেন তাঁকে? ভেবেই তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ওয়াইড লাইনের একটা বলকে যেভাবে উইকেটকিপারের মাথার উপর দিয়ে চামচ শটে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিলেন ভাবাই যায় না! যেভাবে তিনি শটগুলি খেলে চলেছেন, টিভি পর্দায় দেখে মনে হচ্ছে কত সহজ! এগুলি আসলে পরিশ্রমের ফসল। বিশ্ব ক্রিকেটে এ ধরনের শট খেলতে দেখা যেত শুধুমাত্র একজনকে। তিনি ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে পরিচিত নাম। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটার এবি ডিভিলিয়ার্স। ম্যাচ শেষে তাঁকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষে এবি হওয়া সম্ভব নয়। আমি স্রেফ তাঁকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি।’ ম্যাচে অনেক কিছুই ঘটেছে। রাহুল ভালো ব্যাটিং করেছেন। বিরাট রান পাননি। বহুদিন পর টি-২০ আন্তর্জাতিকে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের তিন উইকেট। আজ সবই যেন সূর্যের ব্যাটিংয়ের সামনে ফিকে! ভারতীয় দলে ‘ধ্রুবতারা’ হয়ে জ্বলছেন তিনি। বিশ্বকাপ জিততে বাকি আরও দু’টি ম্যাচ। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। কঠোর চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হবে তাঁকে। ওই দু’টি ম্যাচেই বোঝা যাবে তাঁর আসল ক্রিকেটীয় দক্ষতা।
বিশ্বের এক নম্বর টি-২০ ব্যাটার থেকে চলতি বছরে হাজার টি-২০ আন্তর্জাতিক রান এবং বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বাধিক স্ট্রাইক রেট (১৯৩.৯৬) সবই তাঁর নামেই। নজিরের ছড়াছড়ি। সেইসঙ্গে লেগ সাইডে ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছেন। ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে অবধি তাঁর ব্যাটিংয়ে মোহিত। নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সোস্যাল মিডিয়ায় লেখেন ‘জ ড্রপিং’! ১৯৩০’এ ইংল্যান্ড অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিন ক্রিকেটে ‘লেগ স্ট্যাম্প থিওরি’র আবিষ্কার করেছিলেন। ইংল্যান্ড গতিময় পেসাররা লেগ সাইডে ফিল্ডার রেখে ব্যাটারদের শরীর লক্ষ্য করে বোলিং করতেন। ব্যাটাররা সেই ফাঁদে পড়ে আউট হতেন। অস্ট্রেলিয়ায় আয়োজিত টি-২০ বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে সূর্যের ‘লেগ সাইড হিটিং’। তাঁর জন্য ফাইন লেগ ও স্কোয়ার লেগে ফিল্ডার রেখে লাভ হচ্ছে না। অবলীলায় ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মেরে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন।
টসে জিতে ভারত প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। দলে একটাই পরিবর্তন, দীনেশ কার্তিকের জায়গায় ঋষভ পন্থ। সেমিফাইনালের আগে ঋষভকে খেলিয়ে দেখে নেওয়া ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টে ভালো সিদ্ধান্ত বলা যায়। তবে ঋষভ ব্যাট হাতে দলকে ভরসা দিতে পারলেন না। মাত্র তিন রানে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন। বাম হাতি স্পিনার শন উইলিয়ামসের বলে। এদিনও ভারতের ওপেনাররা বড় রানের জুটি গড়তে ব্যর্থ। শুরুতে ধৈর্য দেখিয়েছেন রোহিত। মুজারাবানি শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ধরা পড়েন রোহিত (১৫)। নিজের ছন্দ বজায় রেখে অর্ধশতরান করেই ফেরেন রাহুল (৫১)। সেমিফাইনালের আগে রাহুলের স্বমহিমায় ফেরাটা দরকারি ছিল। তবে বড় রান পাননি বিরাট (২৫)। ভুল শট নির্বাচন করে আউট হন তিনি। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে খুব ছন্দেও লাগেনি তাঁকে। ৮৭/১ থেকে ভারত মুহূর্তে ১০১/৪।
পরপর তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। ভরসা দিয়েছেন চার নম্বরে নামা সূর্য ও অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ডিয়া। কয়েকবছর ধরেই ভারত নির্ভরযোগ্য একজন চার নম্বর ব্যাটার খুঁজছিল। নিজের স্কিল দিয়ে জায়গা পাকা করেছেন সূর্য। তাঁর ব্যাটিংয়ের জন্য শেষ ৩৯ বলে উঠল ৮৫ রান। অল্পস্বল্প অবদান হার্দিকেরও(১৮) ছিল। শেষ ওভারে হার্দিক আউট হয়ে গেলেও ১৮৬ অবধি টেনে নিয়ে যান সূর্য। অন্তিম চার বলে করেছেন ১৮ রান।
১৮৭ রান তাড়া নেমে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে জিম্বাবোয়ে ২৮/৩। ওখানেই ভারতের জয় কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায়। মিডল অর্ডারে কিছুটা লড়েছিলেন সিকান্দার রাজা (৩৪)ও রায়ান বার্ল (৩৫)। দু’জনেই ভালো স্ট্রাইক রেটে রান করেন। ষষ্ঠ উইকেটের জুটিতে ৬০ রান তোলেন। জুটি ভাঙেন অশ্বিন। বার্লের রক্ষণ ভাঙেন তিনি। বার্ল আউট হওয়ার পরই ১৯ রানে শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবোয়ে। ছয় ভারতীয় বোলার বোলিং করেছে। সবার ঝুলিতেই উইকেট। সেমির আগে যা ইতিবাচক দিক। সর্বাধিক উইকেট পেয়েছেন অশ্বিন। সামি ও হার্দিকের দখলে দু’টি। প্রথম বলেই ওয়েসলি মেধেভেরেকে ফেরান ভুবনেশ্বর। অর্শদীপও নিজের প্রথম ওভারে উইকেট পান। তাঁর শিকার রেগিস চাকাবভা। জিম্বাবোয়ের ইনিংস থামে ১১৫ রানে।
Comments :0