Industrial Conference of Industrialists

শিল্প তাড়ুয়ার শিল্প সম্মেলন

সম্পাদকীয় বিভাগ

চোখ ধাঁধানো, পিলে চমকানো, মহা সমারোহে শুরু হয়েছে মমতা ব্যানার্জির শখের বিশ্ব বাংলা শিল্প সম্মেলন। কেতাবি নাম ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’। প্রতি বছর শীতের শেষে বসন্তের আমেজে সরকারি তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আয়োজন হয় এই বিলাসবহুল উৎসব। মধ্যমণি মুখ্যমন্ত্রী। অনেক চেষ্টা চরিত্র করে কিছু দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাষ্ট্রদূত হাজির করানো। আম্বানি-আদানিদের মতো কয়েকজন কর্পোরেট কর্তাকে এনে ভালো ভালো কথার মায়াজালে জড়িয়ে এক স্বপ্নময় জগতের ছবি আঁকা হয়। বিস্তর খানাপিনা, গল্প-গুজব, আলাপ-আলোচনা, ভাষণ-বক্তৃতা, আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি ইত্যাদির পর মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন সব মিলিয়ে কতগুলি বিনিয়োগ প্রস্তাব এল, কটা মৌ চুক্তি হলো এবং কত লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস মিলল। এমন কি কত শত সহস্র কর্মসংস্থান হতে চলেছে সেটাও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রথম শিল্প সম্মেলন থেকে প্রতি বছরই এমনটাই ঘটে চলেছে নিখুঁতভাবে। আয়োজনে আপ্যায়নে কোনও ঘাটতি থাকে না। প্রচার খাতে ব্যয়েও কোনও কার্পণ্য থাকে না। কত বেশি দেশে নাম যুক্ত করা যায় তার জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি থাকে না। কত বেশি সংখ্যক এবং কত বড় মাপের শিল্পপতিকে আনা যায় সে দিকেই নজর থাকে বেশি। তেমনি শিল্পপতি এবং বিদেশি প্রতিনিধিদের দিয়ে কত বেশি পরিমাণ বিনিয়োগের আশ্বাস দেওয়ানো যায় সেটাও থাকে নজরে। কিন্তু আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি-ঘোষণার পর প্রকৃত প্রস্তাবে বিনিয়োগ কতটা হলো সেটার খোঁজ আর কেউ রাখে না। মুখ্যমন্ত্রীকেও কোনোদিন সরকারি তথ্য পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে বলতে শোনা যায় না ওমুক বছরের এত কোটি বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে এত কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে এত কোটি বা লক্ষ বেকারের।
আসলে মমতা ব্যানার্জির শিল্প সম্মেলন তাঁরই অনুপ্রাণিত আর পাঁচটা সরকারি খেলা-মেলা-উৎসবের মতো একটা অতি বড় মাপের উৎসব ছাড়া কিছু নয়। কত বিনিয়োগ প্রস্তাব এল কত লক্ষ কোটি টাকার আশ্বাস এল সেটাই বড় কথা। সত্যি সত্যি কত বিনিয়োগ হলো সেটা অপ্রাসঙ্গিক।
সরকারি তথ্য বলছে বিগত সাতটি শিল্প সম্মেলন মিলিয়ে মোট বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ১৭.৬০ লক্ষ কোটি টাকার। এর যদি অর্ধেকও বিনিয়োগ হতো রাজ্যের চেহারা বদলে যেত। বাস্তবে  এগুলি কোনোটাই প্রকৃত প্রস্তাব ছিল না, ছিল মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করার নিছক ঘোষণামাত্র। প্রকৃত অর্থে প্রস্তাব এসেছে যৎসামান্য। মাত্র ৬৩ হাজার কোটি টাকার। শিল্পে বিনিয়োগ হলে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য বিষয়ে সরকারি ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বিদ্যুৎ মাশুল ছাড় নেবার লোক নেই। তেমনি ঘোষণা হয় জমি নিয়ে সরকার বসে আছে। চাইলে মিলবে জমি। মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয়পাত্র খোদ সৌরভ গাঙ্গুলিই ঘোষণার দেড় বছর কেটে গেলেও জমি পাননি। সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাড়িয়ে মমতা ব্যানার্জি ‘শিল্প তাড়ুয়ার’ যে আইকন অর্জন করেছেন এ জীবনে আর তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। শিল্পের সঙ্গে বৈরিতাই মমতা ব্যানার্জির আসল পরিচয়। তাই এই জমানায় বাংলা কোনোদিন শিল্পের মুখ দেখবে না। যেটুকু আছে সেটুকুও ধীরে ধীরে পাততাড়ি গোটাবে। বাংলার যুব সমাজের পরিযায়ী হওয়াই আপাতত ভবিতব্য।

Comments :0

Login to leave a comment