চিরন্তন পাড়ুই
রবিবার সন্ধ্যায় ঢল নামলো ধর্মতলায়। না, কোনো উৎসব দেখতে নয়। দ্রোহকালের উৎসবে শপথ নিতে। কেউ এসেছিলেন একরত্তিকে সঙ্গী করে। আবার কেউ এসেছিলেন মানবিকতার টানে। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হল ধর্মতলা। বিচার চাইতেই তিলোত্তমায় দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারিত হল, 'বাজলো উলু, বাজলো ঢাক- দুর্গারা বিচার পাক।' জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন আট দিন পেরিয়ে নবম দিনে। দশ দফা দাবিতে এই অনশন যে শুধু চিকিৎসকদের নয়, তা বারংবার অনশনকারী চিকিৎসকরা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন। অনশনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকরা বলেছেন, "স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের লড়াই। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে রোগিকে ভর্তি হতে, বেড পেতে কেন টাকা লাগবে! প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে বেড ভ্যাকান্সি মনিটর চালু করতে হবে। হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী পুরুষ ও মহিলা পুলিশ কর্মী নিয়োগ করতে হবে।" এদিন জুনিয়র চিকিৎসকদের আমরণ অনশনকে সংহতি জানিয়ে অনশন মঞ্চের পাশেই সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত নাগরিকরাও অনশন শুরু করেছেন। অনশনে অংশগ্রহণকারী নাগরিকরা জানান, "যে দশ দফা দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা অনশন চালাচ্ছেন তা শুধু তাদের দাবি নয়, জনজীবনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত। গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করে যে থ্রেট কালচারের আমদানি হয়েছে তার বিরুদ্ধেও লড়াই ওদের। প্রতিটি বাড়ির মেয়েদের সুরক্ষার দাবি নিয়ে মূল লড়াই। তাই আমরাও প্রতীকি অনশন শুরু করেছি।"
রবিবার দুপুরে ধর্মতলায় দেখা গেল জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন স্থলকে রাস্তায় বসে সংহতি জানিয়ে চারিধার দিয়ে ঘিরে বিচারের দাবিতে কণ্ঠ মেলান বিভিন্ন অংশের মানুষ। দুপুর থেকে বেলালেষে কিংবা বিকেলে আরও মানুষ সমবেত হয়েছেন দ্রোহের উৎসবে। দ্রোহকালের উৎসবে সামিল মানুষ বিচারের দাবিতে কখনও তোলেন স্লোগান, কখনওবা সমবেত কণ্ঠে গেয়েছেন গান। ট্রাম না থাকলেও ট্রাম লাইন রয়েছে। সেই ট্রাম লাইনের পথ ধরে এসে এক পলক অনশনকারী চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে দেখা গেছে শ্রমজীবীকে। আবার অচেনা ভিড় ঠেলে সন্তানকে কোলে করে দ্রোহ কালের উচ্চারণ শেখাতে হাজির হতে দেখা দেয় অনেক বাবা-মাকে।
রবিবার ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন মঞ্চে আসে আট বছরের রস্মিতা ভট্টাচার্য। হাতে ছিল ছোট্ট ভাঁড়। আর সেই সেই ভাঁড়ে রয়েছে গত এক বছর ধরে তার অল্প-অল্প করে জমানো টাকা। ভাঁড়টা অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের তুলে দেয় রস্মিতা। সেই সঙ্গে রস্মিতা ডাক্তার দাদা-দিদিদের সঙ্গে ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশন করছে।
নির্লিপ্ত সরকার বলেছে উৎসবে সামিল হতে। এদিকে বিচার পায়নি অভয়া। নরপশুদের শাস্তি চেয়ে পথে নেমেই প্রতিবাদে শামিল মানুষ। বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতেই প্রতিবাদী মানুষের ঢল অনশন মঞ্চের চারিপাশে। অনশন মঞ্চের এক পাশে টাঙানো ফেস্টুনে লেখা, 'আমার দুর্গার নেই বিসর্জন'। কথাটার তাৎপর্য বোঝা যায়, ঢাকের বাদ্যি বাজিয়ে একটি গাড়ি পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়। ঢাকের বাদ্যিও জনরবে ওঠা স্লোগানে থেমে যায়। জনরব বলেছে এদিন, 'তিলোত্তমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।' বলতে গেলে আট থেকে আশি সব বয়সের নাগরিকদের ঢল নামে ধর্মতলায়। দফায় দফায় স্লোগান ও বিচারের দাবি উঠেছে। দশ দফা দাবি তুলেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।
অনশনরত তিনজন চিকিৎসক হাসপাতালে। তবু সরকারের নজরে নেই। দশ দফা দাবি তুলেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার বার্তা দিতে জনস্রোত অনশন মঞ্চে। ন্যায়ের দাবিতে তীব্র লড়াইয়ে নেমেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ধর্মতলায় তাঁদের অনশন আট দিন পার করে পড়েছে নবম দিনে। এদিন সেখানে সামিল হন অসংখ্য মানুষ। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনরব বলেছে, ডাক্তারদের অনশন, পাশে আছে জনগণ।
Comments :0