“২০২৫ সালের মহাকুম্ভ ইতিহাসের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে, যেখানে ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ৪৫ কোটিরও বেশি পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। রাজ্য সরকার আশা করেছিল ৪৫ দিনে ভক্তের সংখ্যা ৪৫ কোটিতে পৌঁছাবে। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই এই সংখ্যাটি পেরিয়ে গেছে, মহাকুম্ভ শেষ হতে এখনও ১৫ দিন বাকি।” ভারত সরকার এক প্রেস বিবৃতিতে ১১ ফেব্রুয়ারি এই কথা জানায়। অর্থাৎ গড়ে দিনে ৪০ লক্ষাধিক মানুষ যাবেন সেখানে, এটা সরকারের জানাই ছিল। মেলার জন্য প্রায় ৩৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অস্থায়ী তাঁবু ফেলে মেলার যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। ভারতীয় রেল অতীতের তুলনায় ৫ গুণ, মোট ৯৯২টি অতিরিক্ত ট্রেন চালাবার কথা ঘোষণা করেছিল। ভারতের প্রতিটি বৃহৎ সংবাদপত্রে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের পাতাজোড়া ছবি সহ সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের মানুষকে এই মেলায় আসার জন্য আবেদন জানাতে থাকে সরকার, বহু আগে থেকেই। এসবের জন্য উত্তর প্রদেশ সরকার ৭০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। বিজেপি পোষিত ও অনুগত টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্রগুলোও ব্যাপক প্রচার চালায়। এছাড়া আরএসএস সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি অন্ধ কুসংস্কারমুলক প্রচার চালিয়ে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করেছে বিগত কয়েকমাস জুড়ে। কোটি কোটি মানুষকে প্ররোচিত করে, আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের সুরক্ষার কি বন্দোবস্ত করেছে বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিনের সরকার? ধর্মকে কেন্দ্র করে উন্মাদনা তৈরি করতে পারে, কিন্তু মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে না বিজেপি সরকার, সেটা মেলার শুরু থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
২৯ জানুয়ারি বিশেষ দিনে প্রচুর পুণ্যার্থীদের সমাগম হবে এটা প্রশাসন জানা সত্ত্বেও কি ব্যবস্থা নিয়েছিল? বিশাল ভিড়ে ৩০ জন তীর্থযাত্রীর পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এবং ৬০ জনেরও বেশি তীর্থযাত্রী আহত হন। এ তো সরকারি হিসাব, বেসরকারি মতে সংখ্যা এর চাইতে অনেক বেশি। ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশি ব্যর্থতা, যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা এবং নদীর সঙ্গমস্থলে তৈরি করা অবৈজ্ঞানিক ব্যারিকেডের কারণে এই ভয়াবহ পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে, বিজেপি নেতা মন্ত্রী সহ বিভিন্ন ভিআইপি-দের রাস্তা পরিষ্কার রাখতেই সাধারণ মেলাযাত্রীদের সঙ্গমস্থলে যাওয়ার রাস্তাটিকে সঙ্কীর্ণ করাতেই হুড়োহুড়ি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। শুধু ভিআইপি-দের নিরাপত্তা আর নির্বিঘ্নে স্নানের ব্যবস্থাতেই তৎপর যোগী সরকারের কোনও দায়িত্ব নেই সাধারণ মানুষের প্রতি? এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি কুম্ভমেলার ১৯ নম্বর সেক্টরে সিলিন্ডার ফেটে আগুন ধরেছিল। তাতে এক ডজনেরও বেশি তাঁবু পুড়ে যায়। এর পরে গত ২৫ জানুয়ারি ফের আগুন লাগে কুম্ভের ২ নম্বর সেক্টরে দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি গাড়িতে। মাঝে ২১ জানুয়ারি ১৮ নম্বর সেক্টরে ইসকনের তাঁবুতে আগুন লাগে। আশপাশের বেশ কিছু তাঁবুতে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ২০টি তাঁবু পুড়ে যায়। ২৪ জানুয়ারি বেলুনে গ্যাস ভরবার সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঝলসে যান ছয় জন পুণ্যার্থী। পর পর এই ঘটনাগুলির জেরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে উত্তর প্রদেশ সরকারেরর ব্যবস্থাপনা নিয়ে। কুম্ভমেলার আয়োজনের জন্য অনেকদিন ধরেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে উত্তর প্রদেশ সরকার। তার পরেও একের পর এক ঘটনা কীভাবে ঘটছে, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে সরকার।
পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর আদিত্যনাথের প্রশাসনের দেখা না মিললেও, স্থানীয় শিখ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা মেলাযাত্রীদের জন্য পানীয় জল, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে মানব ধর্মের মূর্ত প্রতীক এই ঘটনা, আরএসএস সহ উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর দিল্লি স্টেশনে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৮ জনের পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু বেআব্রু করে দিয়েছে রেল তথা কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত অব্যবস্থাকে। কিন্তু ডবল ইঞ্জিনের কোনও সরকারেরই হেলদোল নেই পুণ্যার্থীদের এই মৃত্যু মিছিলে।
Kumbh Mela
মেলার নিরাপত্তা কোথায়?

×
Comments :0