বন্দুক দেখিয়ে, সন্ত্রাস চালিয়েও লাল ঝান্ডাকে শেষ করা যায়নি, বিজেপি এবং তৃণমূলের লুটের বিরুদ্ধে লাল ঝান্ডাই প্রতিবাদ গড়ে তুলছে। রবিবার বালি অ্যাথলেটিক ক্লাব মাঠে সিআইটিইউ হাওড়া জেলা পঞ্চদশ সম্মেলনের প্রকাশ্য সম্মেলনে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, লাল হটাও বলে ওরা কেন্দ্র এবং এরাজ্যের সরকারে বসে লুটের রাজত্ব চালাচ্ছে। জাতি ভাষা ধর্মের নামে মানুষকে বিভাজন করে লুট চালিয়ে যাবে ভেবেছে। কিন্তু লালকে শেষ করা যায়নি, লাল ঝান্ডাই সব শ্রমজীবী গরিব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে ওদের লুটের ষড়যন্ত্র রুখবে।
সিআইটিইউ হাওড়া জেলা পঞ্চদশ সম্মেলনের শেষে এদিন বালি অ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠে সমাবেশে ভিড় উপচে জিটি রোডেও দাঁড়িয়ে ছিলেন মানুষ, লাল ঝান্ডা নিয়ে আবারও মানুষের জনস্রোত দেখা গেছে বালিতে। সমাবেশে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও সিআইটিইউ’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি, সিআইটিইউ নেতা দীপক দাশগুপ্ত, সংগঠনের নবনির্বাচিত হাওড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমীর সাহা, সভাপতি সামসুল মিদ্দে ভাষণ দেন। সভাপতিত্ব করেন সামসুল মিদ্দে। মহম্মদ সেলিম বলেন, দেশ ও রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষের ওপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে তৃণমূল সরকার ও বিজেপি সরকার। করোনার সময় যখন কোনও সরকারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি তখন অক্সিজেন নিয়ে, রক্ত দিয়ে রেড ভলান্টিয়াররাই মানুষের পাশে ছিলেন। করোনার সময় গঙ্গায় অনেক লাশ ভেসেছে। মোদী আয়ুষ্মান ভারত-এর কথা বলেছেন। আর মমতা ব্যানার্জি স্বাস্থ্যসাথীর কথা বলছেন। দুজনেই মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন। মোদী বলেছিলেন, ৪০ টাকায় ডিজেল দেবেন। এখন কি অবস্থা! জিনিসের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। সবেতে জিএসটি চাপিয়ে সমান ভাগ নিচ্ছে মোদী সরকার ও মমতা সরকার। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই শুনতাম, এখন দেখছি ট্যাক্সতুতো ভাই।
সেলিম বলেন, চাকরি নিলাম করে, মানুষকে লুট করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে ধর্মকে ঢাল করছে তৃণমূল কংগ্রেস।
দিল্লিতে চলছে মোদীর লুট, আর এ বাংলায় চলছে দিদির লুট। আর ধর্মকে ঢাল করে ধর্মগুরুকে দিয়ে সাফাই গাওয়াচ্ছে! আনিশ খান খুন হলো! চাকরি প্রার্থীরা আন্দোলন করছে আর মুখ্যমন্ত্রী তা আড়াল করে কার্নিভাল করলেন। কোথায় গেলেন সেই ধর্মগুরুরা! কোথায় গেলেন একসময়ের পরিবর্তন চাওয়া বুদ্ধিজীবীরা!
বামপন্থীদের লড়াইয়ের ফসল উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, ইউপিএ সরকারের আমলে বামপন্থীদের দাবি মেনে সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচির অংশ হিসাবে ১০০ দিনের কাজ থেকে বিভিন্ন নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল গরিব মানুষের স্বার্থে। মোদী সরকারের আমলে কোনও নতুন প্রকল্প এরাজ্যের মানুষ দেখেনি। বরং কর্মহীন হয়েছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ হয়েছে। ব্রিজ অ্যান্ড রুফের মতো লাভজনক কারখানাকে বেচে দিতে চাইছে মোদী সরকার। ওরা স্টেশন বেচছে। মমতা ব্যানার্জি ট্রাম ডিপো বেচছে। বাংলার বুকে কৃষক ফসলের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। দুই ফুল মিলেই বাংলার মানুষকে এপ্রিল ফুল বানিয়েছে।
জনসভায় সুভাষ মুখার্জি বলেন, স্থায়ী শ্রমিক কমছে, চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক বাড়ছে। তৃণমূল সরকারের শাসনকাল মানেই দুঃশাসন। আমরা সব অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে মানুষের স্বার্থে লড়াই করতে চাই। দীপক দাশগুপ্ত বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে কেবল কর্পোরেটদের। এই জেলায় হাওড়া জুটমিল ও ডেল্টা জুট মিল বন্ধ রয়েছে। অথচ মমতা ব্যানার্জির সরকার তা নিয়ে কিছু ভাবছেই না।
সিআইটিইউ হাওড়া জেলা সম্মেলন উপলক্ষে বালি বেলুড় এলাকার নামকরণ করা হয়েছিল কমরেড দেবী পাঠক নগর। সম্মেলন মঞ্চ কমরেড নিমাই সামন্ত মঞ্চ হিসাবে নামাঙ্কিত হয়েছিল। দুদিন ধরে চলা প্রতিনিধি সম্মেলন রবিবার শেষ হয়। সম্মেলনে ১৭ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের ওপর। সম্মেলনে ১৫টি প্রস্তাব ও ১৭টি কর্মসূচি গৃহীত হয়। কারখানায় কারখানায় শ্রমিকদের সংগঠিত করা, অসংগঠিত শ্রমিকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করা, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে লড়াই আন্দোলনকে সংহত করা সহ গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচাও— এই আহ্বানে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে সম্মেলনে। জবাবি ভাষণ দেন বিদায়ী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমীর সাহা।
সম্মেলন থেকে ১৫০ জনের জেলা কাউন্সিল গঠিত হয়। জেলা কাউন্সিল সদস্যরা ৩১ জনের ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি করেন। ১৯ জনের সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে। নবনির্বাচিত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে সমীর সাহা ও সভাপতি পদে সামসুল মিদ্দে, কোষাধ্যক্ষ পদে কল্যাণ দাস নির্বাচিত হন। এছাড়াও চারজন সহসভাপতি ও ১১ জন সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনকে সফল করে তুলতে বালি বেলুড় এলাকার শ্রমজীবী পরিবার ব্যাপক সাহায্য করেছেন। সমীর সাহা জানিয়েছেন, হাওড়া জেলার শ্রমজীবী মানুষের জীবন যন্ত্রণা সমস্যা ও দাবি নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। প্রাচ্যের শেফিল্ডের ছোট বড় শিল্প ধুঁকছে। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানা, গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়ার সাঁতরাগাছি প্রেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কারখানাকে বিক্রি করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এসবের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষকে একজোট করে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Comments :0