MODI MAMATA

আসল কথা এড়ালেন মোদী-মমতা দু’জনই

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

ছবি সংগ্রহ থেকে।

জয়ন্ত সাহা
একই দিনে সভা মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর। কোচবিহার রাসমেলার মাঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সভা করেছেন। মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে মাথাভাঙার গুমানিরহাটে সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সভা করেছেন। কিন্তু জনমনে থাকা একের পর এক প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন দু’জনেই। 
তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির অভিযোগ নতুন নয়। বলেছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা, বিএসএফ বা সিআইএসএফ বিজেপি’র হয়ে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে মাথা নোয়াবে না তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনকে দেখতে হবে যাতে সব দল সমান সুযোগ পায়। শীতলকুচিতে ২০২১’র ভোটে ভোটদানের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিচালনা মনে করিয়েছেন তিনি। আর বলেছেন, সিএএ’র জন্য আবেদন করলে বিদেশি বলে চিহ্নিত করে দেবে বিজেপি। 
বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যেও এদিন চেনা কথাই ছিল। বলেছেন, তিনি দুর্নীতিকে খতম করতে চাইছেন আর বিরোধীরা দুর্নীতিগ্রস্তদের বাঁচাতে চাইছে। বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল দিল্লিতে বোঝাপড়া করে বিজেপি’র বিরুদ্ধে। দশ বছরে উন্নয়নের ট্রেলার দেখেছেন। আরও অনেক কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে। সিএএ নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে বিরোধীরা। নাগরিকত্ব মোদীর গ্যারান্টি।
১৯ এপ্রিল রাজ্যে প্রথম দফায় নির্বাচন কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে। জমে রয়েছে উত্তাপ। সেই উত্তাপের মধ্যেই ভবনীগঞ্জ বাজারের গেটের মুখে দাঁড়িয়ে কলেজ পড়ুয়া দিবাকর দাস স্পট সওয়াল করলেন, "মুখ্যমন্ত্রী তো জেলায় এলেই হেরিটেজ শহর ঘোষণার কথা বারবার শোনাচ্ছেন, শুনেছি কাড়ি কাড়ি টাকাও আসছে কিন্তু শহরের বুকের ঐতিহ্যবাহী এবিএন শীল কলেজের পুরোনো ভবন,ম্যাগাজিন হাউস কিংবা পাওয়ার হাউসের মত ভবনগুলি তো ধ্বংসের মুখে। সেগুলির সংস্কার কবে হবে? মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে পেলে জিজ্ঞেস করে ফেলতাম।’’
মন্টু দাশ পল্লীর সামনেই নাতিকে স্কুলগাড়িতে তুলে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন উমাশংকর বসু। ভোট প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘‘ওই মোদীই বলুন আর মমতাই বলুন ইয়ং জেনারেশনের কথা কেউ ভাবে না। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, একদা রাজার শহরের কুর্সি যাদের দখলে তারা শহরের নিকাশি ব্যবস্থার হাল কবে ফেরাবে? শুধু আমাদের এলাকা নয়,রাজবাড়ির সামনের কেশব রোড,রাজরাজেন্দ্র নারায়ণ রোড, কলাবাগান, নিউটাউন সহ বিভিন্ন এলাকা জলে ডুবে যায় এগুলো কে শুনবে!’’
আবার হরিশ পাল মোড়ের পান-সিগারেটের দোকানের মালিক সুনন্দ দাসের ক্ষোভ পানীয় জল নিয়ে। বললেন, ‘‘আরে মশাই কাকে ভরসা করবো বলুন তো তৃনমুলকে ছেড়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলাম। কী হলো? পৌর এলাকার পানীয়  জলের সমস্যা মিটলো কোথায়? এই যে গরম কাল এলো পাইপ লাইন দিয়ে সুতোর মত সরু হয়ে জল পড়বে। জল কিনে খাওয়া ছাড়া গতি নেই। কিছুদিন আগে কেন্দ্র-রাজ্যের কোটি কোটি টাকায় (৭০ কোটি) পানীয় জলের জন্য প্রকল্প চালু হল। কোথায় কী! কাটমানি খেয়ে নেতাদের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বাড়লো আর আমরা জল কিনে খাই। এদের ভোট দিয়ে কিস্যু হবে না।’’
বিজেপি-তে গেলেই দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা কেন ‘সাফ’ হয়ে যান, জবাব দেননি মোদী। ১০ বছরে বেকারির হার স্বাধীনতার পর কেন সবচেয়ে চড়া? এই দশ বছরেই ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির গড় হার সবচেয়ে কম কেন? রেগা বন্ধ করে তৃণমূলের দোষীদের ছাড় দিয়ে গরিব মানুষকে শাস্তি দেওয়া হলো কেন। দুর্নীতির কোনও তদন্তে তৃণমূলের মাথাদের বিচারই বা শুরু হলো না কেন, প্রধানমন্ত্রী এড়িয়েছেন জবাব।
আর মমতা জানাননি সিএএ’র ভোটাভুটিতে তাঁর দলের সাংসদরা অনুপস্থির ছিলেন কেন? কেন বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী হয়েও নাগরিকত্ব বিধি সংশোধনে বাধা দেননি? কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে গতি পেলেই তিনি একান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকই বা করেন কেন?
মেগা ইভেন্টের পরও কেবল কোচবিহার নয়, রাজ্যের মানুষের সামনেও ঝুলে রয়েছে একঝাঁক প্রশ্ন।

Comments :0

Login to leave a comment