গ্রেস নম্বর বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নিলেই সমস্য মিটবে না। দুর্নীতিচক্র কাজ করছে ডাক্তারির প্রবেশিকার মতো পরীক্ষায়। যার সঙ্গে জড়িত খোদ এনটিএ। দেশজুড়ে ‘নিট’ বিক্ষোভে জোরালো হচ্ছে এই অভিযোগই।
বৃহস্পতিবার ফের ‘নিট’ বেনিয়মে সিবিআই তদন্ত অথবা সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তের দাবি তুলেছে কংগ্রেস। দলের নেতা এবং সাংসদ গৌরব গগৈ বলেছেন, ‘‘ভোটের আগে তো প্রধানমন্ত্রী ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ চালাচ্ছিলেন। আজ দেশজুড়ে বিক্ষোভে তাঁর মুখে কথা নেই কেন? একগুচ্ছ প্রশ্নে নীরব থেকে তিনি বিদেশে যেতে এত তৎপর কেন?’’
এদিন সুপ্রিম কোর্টে এনটিএ স্বীকার করেছে যে গ্রেস নম্বর দেওয়া ভুল হয়েছে। সমস্যা নিরসনে গ্রেস পাওয়া ১৫৬৩ পরীক্ষার্থীর নম্বর বাতিল করা হবে। ২৩ জুন ফের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে তাদের। যে ফের পরীক্ষা দেবে না তার গ্রেস মার্কস বাদ দিয়ে বাকি নম্বরের ভিত্তিতে স্থান ঠিক হবে। ৬ জুলাই থেকে কাউন্সেলিং হবে।
কিন্তু দেশজুড়ে তোপের মুখে রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর মেয়াদে তৈরি পরীক্ষা গ্রহণ সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ। এসএফআই, টিএসইউ, ডিওয়াইএফআই, টিওয়াইএফ আগরতলায় প্রতিবাদ মিছিল করেছে।
সর্বভারতীয় স্তরে কেবল ডাক্তারির প্রবেশিকা ‘নিট’ নয়, সব পরীক্ষা নেওয়া এবং ফল ঘোষণার দায়িত্ব এই সংস্থার। কিন্তু নানা বেনিয়মের অভিযোগ উঠছে এই সংস্থারই বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান যদিও দাবি করেছেন এবছরের ‘নিট’ ঘিরে কোনও দুর্নীতি হয়নি। ভুল প্রশ্ন পত্র দেড় হাজারের বেশি ছাত্রীর কাছে গেল কেন আর কিভাবেই বা তাদের গ্রেস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তা নিয়ে তদন্ত হবে।
দিল্লির যন্তর-মন্তরে ছাত্র বিক্ষোভে এদিনই মন্ত্রীর যুক্তি খারিজ হয়ে গিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ১৬টি রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা হরিয়ানার একটিই কেন্দ্রকে বেছে নিল, গত দু’বার যেখানে প্রথম স্থানে ছিল চার এবং দু’জন এবার ৬৭ জনকে প্রথম স্থানাধিকারী ঘোষণা করা হলো। কোনও বেনিয়ম ছাড়া এসব চলতে পারে না। বেনিয়মে যুক্ত এনটিএ’র আধিকারিকরাই। এই সংস্থা নিরপেক্ষ তদন্ত চালাতে পারে না।
‘নিট’ ঘিরে সোশাল মিডিয়ায় একের পর এক অভিযোগ। যেমন, ৩০-৬৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ফাঁস হচ্ছে প্রশ্নপত্র চাওয়া হচ্ছে। ৭২০ নম্বরের পরীক্ষায় নম্বর দেওয়ার নিয়মে কেউ ৭১৯ বা ৭১৮ পেতেই পারে না। অথচ কারো কারও এমন নম্বর রয়েছে ফলাফলে।
কোচিং সেন্টার এবং এক্সাম সেন্টারের নেক্সাস, নিম্নবিত্ত মানুষকে নাকাল করে দিচ্ছে। ১০ লক্ষ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এনটিএ কী তদন্ত করতে পারবে? এনটিএ’র আধিকারিকরা শামিল না থাকলে এই দুর্নীতি হতে পারত? সেই এনটিএ-কে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে কী হবে? প্রধানমন্ত্রী ফের নিশ্চুপ কেন? ভোটের আগে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’-র নামে আলোচনার আসর বসিয়েছিলেন। আজ কোনও চর্চায় তিনি নেই কেন? বিদেশ যেতে এত আগ্রহী কেন?
পশ্চিমবঙ্গে চাকরির পরীক্ষা ঘিরে ফাঁকা ওএমআর শিট জমা করিয়ে কারচুপি ধরা পড়েছে আদালতে। এই পরীক্ষায় ফাঁকা ওএমআর শিট জমা করিয়ে পরে অন্য ওএমআর সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর নামে জমা পড়ছে, এমন অভিযোগ এবার ‘নিট’ ঘিরেও উঠেছে।
গগৈ বলেছেন, ‘‘আদালত কেবল গ্রেস নম্বরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কেলেঙ্কারি হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে। সরকারের থেকে কোনও কাজের কাজ করা হচ্ছে না। নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে সিবিআই-কে দিয়ে। নয়তো সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে চালাতে হবে তদন্ত।’’
NTA at the center of NEET Scam
'নিট’ দুর্নীতিতে জড়িত এনটিএ, সরব সারা দেশ
×
Comments :0