Power Charge

পুজো কমিটিদের ছাড়, বিপুল বিল কৃষকদের!

রাজ্য

Power Charge

 

চারদিনের দুর্গাপুজোয় বিদ্যুৎ বিলে বিপুল ছাড়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। অথচ বিদ্যুৎ খরচ না করেও কৃষকদের কাছ থেকে বিলে বিপুল টাকা আয়ের ব্যবস্থা করেছে ‘কৃষকদরদি’ মমতা ব্যানার্জির সরকার!
২০২৩-২৪ সালের বিদ্যুৎ মাশুল কার্যকর করতে গিয়ে ঘুরপথে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রাহকদের ‘ফিক্সড চার্জ’ ও ‘মিনিমাম চার্জ’। ফি মাসে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে বিপুল বাড়তি বোঝা বহন করতে হচ্ছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির গ্রাহকদের। একইসঙ্গে বাড়তি বোঝা চেপেছে কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক গ্রাহকদের। মিনিমাম চার্জ’র মধ্য দিয়ে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে মাশুল। কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প ক্ষেত্রে এতদিন গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়াই হতো না মিনিমাম চার্জ। এবার সেটাও যুক্ত করা হয়েছে।
পুজোর সময় কলকাতায় ৫ হাজারের ওপর পুজোয় বিদ্যুতে ছাড় দিতে চলেছে সিইএসসি। প্রায় ৪৪ হাজার পুজোর বিদ্যুৎ বিলে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি ছাড়ের তালিকায় আছে। সেই রাজ্যেই কৃষিক্ষেত্র থেকে সাধারণ গ্রাহকদের ওপর বিপুল বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। 
কৃষি ক্ষেত্রে প্রতি মাসে কেভিএ পিছু ৭৫ টাকা আদায় শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ বিলে। এমনিতেই ফি দিন কৃষি উপকরণের দাম যেভাবে বাড়ছে সেই তুলনায় কৃষক ফসলের দাম পান না। ফলে উৎপাদন করে অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। কৃষিক্ষেত্রে ন্যূনতম চার্জ ৭৫ টাকা বৃদ্ধি এখন যোগ হবে বিদ্যুৎ বিল। সাধারণভাবে সাবমার্সিবল পাম্প ব্যবহার করে বছরে চার থেকে পাঁচ মাস কৃষকরা চাষ করে থাকেন। বোরো চাষের সময়ই জলের প্রয়োজন হয়। গত বছর বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ও এলপিএসসি(লেট পেমেন্ট সারচার্জ)-র চাপে রাজ্যের বহু এলাকায় বোরো চাষে নামতে পারেননি কৃষকরা। ক্ষুদ্র শিল্পে বিদ্যুৎ বিলের ভয়াবহ আর্থিক বোঝায় লাইন কাটার আবেদন করে বসে আছেন ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোগীরা। কিন্তু সরকারের নয়া সিদ্ধান্তে বিদ্যুৎ খরচ না করেও ফি মাসে যে বিল আসবে তাতে বহন করতে হবে মিনিমাম চার্জের বোঝা। শিল্প ক্ষেত্রেও এতদিন কোনও মিনিমাম চার্জ ছিল না। এখন প্রতি মাসে কেভিএ পিছু মিনিমাম চার্জ গুনতে হচ্ছে ২০০ টাকা। সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্র শিল্পেও অশনি সঙ্কেত দেখছেন ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীরাও।
সাধারণ গ্রাহকদের (ডোমেস্টিক) বিদ্যুৎ বিলে প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি হয়েছে ন্যূনতম চার্জ। আগে সাধারণ গ্রাহকদের প্রতি মাসে কেভিএ পিছু বিদ্যুৎ বিলে মিনিমাম চার্জ নেওয়া হতো ২৮ টাকা। এখন সেই মাশুল বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ন্যূনতম চার্জ ছিল ৪০ টাকা। এখন তা বেড়ে কেভিএ পিছু নেওয়া হচ্ছে ১০৫ টাকা। 
২০২৩-২৪ সালের বিদ্যুৎ মাশুল ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যে কার্যকর করা শুরু করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি। এবারের মাশুলে ইউনিট পিছু বিদ্যুতের দাম বাড়েনি। কিন্তু ঘুরপথে ফিক্সড চার্জ ও মিনিমাম চার্জ তিন গুণ থেকে চার গুণ বাড়িয়ে এরাজ্যের সরকারি বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাশুল বাড়ানো ইতিমধ্যেই কার্যকর করা শুরু হয়েছে। 
আগে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিলে প্রতি মাসে কেভিএ পিছু ফিক্সড চার্জ নেওয়া হতো ১৫টাকা। তারমধ্যে ৫টাকা রাজ্য সরকার ভরতুকি হিসাবে দিত। এবার সেই ফিক্সড চার্জ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০টাকা। কমার্শিয়াল গ্রাহকদের জন্য ফিক্সড চার্জ ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০টাকা করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিটারের ফিক্সড চার্জ ৭৫ টাকা টাকা বাড়িয়ে ফি মাসে প্রতি কেভিএ’তে করা হয়েছে ৭৫টাকা। দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফিক্সড চার্জ। 
এমনিতেই এরাজ্যে ইউনিট পিছু বিদ্যুতের মাশুল ৭ টাকা ১২ পয়সা। এবার সেই মাশুলে হাত দেওয়া হয়নি। কিন্তু অন্যায়ভাবে অন্য পথ দিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের খরচ। আগে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের লাইন কাটা ও নতুন করে জোড়ার জন্য এককালীন ১০০ টাকা করে নেওয়া হতো। তারমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার জন্য ৪০টাকা আর সেই সংযোগকে নতুন করে জোড়ার জন্য ৬০ টাকা আদায় করতো বণ্টন কোম্পানি। এবার সেই খাতে খরচ বাড়িয়ে ৫০০টাকা করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০টাকা। কেটে দেওয়া বিদ্যুতের লাইনকে নতুন করে জোড়ার জন্য ৬০ টাকার পরিবর্তে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৩০০ টাকায়। বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা ও জোড়ার জন্য বিপুল টাকা আদায় নিয়ে রাজ্যজুড়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ টের পায় সরকার। পঞ্চায়েত নির্বাচনের বাড়তি টাকা নেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল। গত ১১ জুলাই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই ১৫ জুলাই থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া কার্যকরী করার নির্দেশিকা ফের জারি হয়ে যায়। যদিও এখনও বাড়তি টাকা নেওয়া না হলেও নির্দেশিকা প্রত্যাহার হয়নি। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বিপুল চার্জ বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে অল বেঙ্গল ইলেক্ট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন’এর সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাস জানান,‘‘ মিনিমাম চার্জ কৃষিক্ষেত্রে ছিলই না। এবার নতুন করে চাপানো হলো। সরকারের এই সিদ্ধান্তে কৃষিক্ষেত্রে ও ক্ষুদ্র শিল্পে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। সাধারণ গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও ইউনিট পিছু মাশুল না বাড়লেও ফিক্সড চার্জ ও মিনিমাম চার্জের বাড়তি বোঝা বহন করতে হচ্ছে। রাজ্য সরকার ও বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি আসলে ক্ষুদ্র কৃষক ও ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের ধ্বংস করতে চাইছে।’’
রাজ্যজুড়ে ইতিমধ্যেই স্মার্ট মিটারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারমধ্যেই ঘুরপথে মাশুল বাড়িয়ে সেই রাস্তা খোলার পথ তৈরি করছে রাজ্য সরকার।

 

Comments :0

Login to leave a comment